দৈনিকবার্তা-খুলনা,৬ সেপ্টেম্বর,২০১৫ : খুলনা শীপইয়ার্ডে আজ ২টি ‘লার্জ প্যাট্রোল ক্রাফ্ট’ (এলপিসি) নির্মাণ কাজ শুরুর মাধ্যমে দেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হলো। এটি হচ্ছে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলপিসি ২টির কেল স্থাপন করে তাঁর দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, খুলনা শীপইয়ার্ড আগামী দিনে উন্নত ও আধুনিক যুদ্ধ জাহাজ রফতানিতে সক্ষম হবে। খুলনা শীপইয়ার্ড বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য বর্তমানে বড় ও ছোট যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ ও সংস্কারের পাশাপাশি সমুদ্রগামী বড় ও মাঝারি জাহাজ তৈরি করছে। তিনি বলেন,আমি বিশ্বাস করি আগামীতে উন্নত ও আধুনিক যুদ্ধজাহাজ রফতানির সক্ষমতা অর্জনে সক্ষম হবে ইনশায়াল্লাহ। শেখ হাসিনা আজ বিকেলে খুলনা শীপইয়ার্ডে কবুতর ও বেলুন উড়িয়ে এলপিসি ২টির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। একই অনুষ্ঠানে তিনি নৌবাহিনীর জন্য কন্টেইনার ভেসেল উন্মুক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধান ও খুলনা শীপইয়ার্ডের পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান ভাইস এডমিরাল ফরিদ হাবিব এবং শীপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর এম খুরশিদ মালিক বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রী খুলনা শীপইয়ার্ডে পৌঁছলে বিমান বাহিনী প্রধান ও খুলনা শীপইয়াডের্র ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাঁকে স্বাগত জানান। বিএনএস তিতুমীর নৌ-ঘাঁটি থেকে খুলনা শীপইয়ার্ডে যাওয়ার পথে হাজার হাজার মানুষ রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। শেখ হাসিনা বলেন,বাংলাদেশ বিশ্ব বাজারে জাহাজের চাহিদা বৃদ্ধির সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাতে শুরু করেছে। এখন অনেক দেশ খুলনা শীপইয়ার্ডের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে তাদের সাথে যোগাযোগ করছে। মংলায় জয়মনি গোলে স্থায়ী সম্পদের ব্যবহার দেশে জাহাজ তৈরি শিল্পকে আরো সম্প্রসারিত করবে। তিনি বলেন, যে কোনো ধরণের জরূরী পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভেসেল নির্মাণ, প্রয়োজনীয় ডেজিং ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণে সক্ষমতা ও বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলা অপরিহার্য।
এ প্রেক্ষাপটে খুলনা শীপইয়ার্ড হচ্ছে বাংলাদেশের কৌশলগত সম্পদ। এর আরো উন্নয়ন ও গতিশীলতায় তাঁর সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। এছাড়া তিনি বলেন, খুলনা শীপইয়ার্ড শিল্প হিসেবে ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক কল্যাণেও অবদান রাখছে। সরকারের ১৯৯৯ সালে নৌবাহিনীকে খুলনা শীপইয়ার্ড হস্তান্তরের উদ্দেশ্য আজ সফল হয়েছে। ৫টি যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণের পর, এখন লার্জ প্যাট্রোল ক্রাফ্ট নির্মাণ কাজের মাধ্যমে এই সংস্থা দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়ালো। প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে নৌবাহিনীর নৌ-কল্যাণ ফাউন্ডেশনের জন্য খুলনা শীপইয়ার্ড লিমিটেডের নবনির্মিত আধুনিক কন্টেইনার ভেসেল এই ইয়ার্ডের বিকাশমান কারিগরি ও প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞতা আরো সমৃদ্ধ করবে এবং যা জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখবে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ নৌরুটে কন্টেইনার জাহাজে বিশেষ করে চট্টগ্রাম, পানগাঁও ও মংলা বন্দর থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে সহজেই পণ্য পরিবহন করা যায়। প্রধানমন্ত্রী এই প্রচেষ্টায় পাশে রয়েছে এমন বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সঙ্গে এ ধরনের যৌথ উদ্যোগ আমাদের দীর্ঘদিনের বিদ্যমান সম্পর্ক আরো সংহত করবে এবং একই সাথে এ ধরনের উদ্যোগের ফলে কার্যকর প্রযুক্তি হস্তান্তর সম্ভব হবে।’ শ্রমিকদের সুখ, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে তাঁর সরকার সর্বদা সক্রিয় রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সংশোধনীর মাধ্যমে শ্রম আইন-২০০৬ সময়োপযোগী করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে এই শিপইয়ার্ড আপনার, তাই এই শিপইয়ার্ড কার্যকর ও অব্যাহত শান্তিপূর্ণ রাখা আপনার পবিত্র দায়িত্ব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুলনা শিপইয়ার্ড দেশের জন্য যুদ্ধজাহাজ নির্মাণে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করছে পাশাপাশি বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত করার প্রক্রিয়া হিসেবে বিদেশ থেকেও যুদ্ধজাহাজ আমদানি করা হচ্ছে। প্রত্যাশার অধিক অর্জনের কৃতিত্বের জন্য শিপইয়ার্ড সংশ্লিষ্ট সকলকে সাধুবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৫ বছরের কঠোর পরিশ্রম, আন্তকি প্রচেষ্টা ও দক্ষ কর্মতৎপরতার ফলে এ ধরনের সাফল্য এসেছে। তিনি বলেন,আপনারা পুনরায় প্রমাণ করেছেন যে, সঠিক নির্দেশন ও ব্যবস্থাপনায় আপনারা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন। এর জন্য গোটা জাতি গর্বিত এবং আপনাদের আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোনো রুগ্ন শিল্প বেসরকারিকরণ না করার জন্য তাঁর সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বরং এই শিল্পের জমি উন্নয়ন করা হবে এবং কল-কারখানা স্থাপনের জন্য বেসরকারি খাতকে আহ্বান জানানো হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, খুলনা শিপইয়ার্ডের অবস্থান কেবল বাংলাদেশেই নয়Ñ আন্তর্জাতিক পরিসরেও স্থান করে নেবে। তিনি দেশে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই শিপইয়ার্ডে ড্রেজার ও ফেরি তৈরির জন্য পরামর্শ দেন।