দৈনিকবার্তা-খুলনা, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। কারও সঙ্গে যুদ্ধ নয়, শান্তিই কাম্য। তবে আত্মরক্ষার ক্ষমতা থাকতে হবে। সমুদ্রসীমায় সম্পদের সুষ্ঠু নিরাপত্তায় সরকার নৌবাহিনীকে আরও আধুনিক করে গড়ে তুলতে কাজ করছে। রোববার দুপুরে খুলনা শিপইয়ার্ডে নৌবাহিনীর জন্য দুটি বড় যুদ্ধজাহাজ লার্জ পেট্রোল ক্রাফট (এলপিসি) নির্মাণ কাজের উদ্বোধনকালে (কিল লেয়িং) এসব কথা বলেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, খুলনা শিপইয়ার্ড মাঝারি ও বৃহৎ সমুদ্রগামী জাহাজসহ নৌবাহিনীর জন্য ছোট বড় নৌযান তৈরি ও মেরামত অব্যাহত রেখেছে। ভবিষ্যতে এ শিপইয়ার্ড থেকে জাহাজ তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করা হবে। নৌবাহিনীকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত করার অংশ হিসেবে বিদেশ থেকে আমদানির সঙ্গে সঙ্গে দেশেও তৈরি হচ্ছে যুদ্ধজাহাজ।এক সময়ের রূগ্ন শিপইয়ার্ড ঘুরে দাঁড়ানোয় তিনি এ প্রতিষ্ঠানটিকে গর্ব ও কর্মোদ্দীপনার প্রতীক বলে উল্লেখ করেন।
খুলনা শীপইয়ার্ডে আজ ২টি ‘লার্জ প্যাট্রোল ক্রাফ্ট’ (এলপিসি) নির্মাণ কাজ শুরুর মাধ্যমে দেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হলো। এটি হচ্ছে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ প্রকল্প।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলপিসি ২টির কেল স্থাপন করে তাঁর দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, খুলনা শীপইয়ার্ড আগামী দিনে উন্নত ও আধুনিক যুদ্ধ জাহাজ রফতানিতে সক্ষম হবে।খুলনা শীপইয়ার্ড বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য বর্তমানে বড় ও ছোট যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ ও সংস্কারের পাশাপাশি সমুদ্রগামী বড় ও মাঝারি জাহাজ তৈরি করছে। তিনি বলেন,আমি বিশ্বাস করি আগামীতে উন্নত ও আধুনিক যুদ্ধজাহাজ রফতানির সক্ষমতা অর্জনে সক্ষম হবে ইনশায়াল্লাহ। শেখ হাসিনা বিকেলে খুলনা শীপইয়ার্ডে কবুতর ও বেলুন উড়িয়ে এলপিসি ২টির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। একই অনুষ্ঠানে তিনি নৌবাহিনীর জন্য কন্টেইনার ভেসেল উন্মুক্ত করেন। অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধান ও খুলনা শীপইয়ার্ডের পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান ভাইস এডমিরাল ফরিদ হাবিব এবং শীপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর এম খুরশিদ মালিক বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী খুলনা শীপইয়ার্ডে পৌঁছলে বিমান বাহিনী প্রধান ও খুলনা শীপইয়াডের্র ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাঁকে স্বাগত জানান। বিএনএস তিতুমীর নৌ-ঘাঁটি থেকে খুলনা শীপইয়ার্ডে যাওয়ার পথে হাজার হাজার মানুষ রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান।শেখ হাসিনা বলেন,বাংলাদেশ বিশ্ব বাজারে জাহাজের চাহিদা বৃদ্ধির সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাতে শুরু করেছে। এখন অনেক দেশ খুলনা শীপইয়ার্ডের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে তাদের সাথে যোগাযোগ করছে। মংলায় জয়মনি গোলে স্থায়ী সম্পদের ব্যবহার দেশে জাহাজ তৈরি শিল্পকে আরো সম্প্রসারিত করবে।তিনি বলেন, যে কোনো ধরণের জরূরী পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভেসেল নির্মাণ, প্রয়োজনীয় ডেজিং ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণে সক্ষমতা ও বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলা অপরিহার্য।এ প্রেক্ষাপটে খুলনা শীপইয়ার্ড হচ্ছে বাংলাদেশের কৌশলগত সম্পদ। এর আরো উন্নয়ন ও গতিশীলতায় তাঁর সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। এছাড়া তিনি বলেন, খুলনা শীপইয়ার্ড শিল্প হিসেবে ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক কল্যাণেও অবদান রাখছে। সরকারের ১৯৯৯ সালে নৌবাহিনীকে খুলনা শীপইয়ার্ড হস্তান্তরের উদ্দেশ্য আজ সফল হয়েছে। ৫টি যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণের পর, এখন লার্জ প্যাট্রোল ক্রাফ্ট নির্মাণ কাজের মাধ্যমে এই সংস্থা দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়ালো।
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে নৌবাহিনীর নৌ-কল্যাণ ফাউন্ডেশনের জন্য খুলনা শীপইয়ার্ড লিমিটেডের নবনির্মিত আধুনিক কন্টেইনার ভেসেল এই ইয়ার্ডের বিকাশমান কারিগরি ও প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞতা আরো সমৃদ্ধ করবে এবং যা জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখবে। খুলনা শিপইয়ার্ড এক সময় দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিপইয়ার্ডে পরিণত হবে- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে বাংলাদেশে প্রথম বারের মত যুদ্ধজাহাজ লার্জ পেট্রোল ক্রাফট (এলপিসি) নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করায় আনন্দ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার সূচনালগ্নেই নদী ও সমুদ্রের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন। যে কারণে তিনি নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করার কাজে হাত দিয়েছিলেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আজ যেখানে সমবেত হয়েছি, তার অদূরেই রূপসা নদীতে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ১০ ডিসেম্বর শহীদ হয়েছিলেন বীর শ্রেষ্ঠ রূহুল আমিনসহ পদ্মা ও পলাশ জাহাজের আরও অনেক নৌ মুক্তিযোদ্ধা। তিনি মহান নৌ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। শেখ হাসিনা বলেন, খুলনা শিপইয়ার্ড রূগ্ন ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাওয়ায় আমি এটিকে নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করি।
আজ এ প্রতিষ্ঠানটি গর্ব ও কর্মোদ্দীপনার প্রতীক হিসেবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এজন্য তিনি শিপইয়ার্ডে কর্মরতদের ধন্যবাদ জানান।তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্ব বাজারে জাহাজ নির্মাণেনের ক্রমবর্ধমান চাহিদা কাজে লাগানোর সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে শুরু করেছি। বিভিন্ন দেশ থেকে খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে যোগাযোগ করছে। এর প্রেক্ষিতে খুলনা শিপইয়ার্ড তার উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মংলার জয়মনির গোলে শিপইয়ার্ডের স্থাবর সম্পত্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে আরও সম্প্রসারণ করা হবে। খুলনা শিপইয়ার্ড শ্রম বাজার বাঁচিয়ে রাখতে যে ভূমিকা রেখেছে, তা এ অঞ্চলের অন্যান্য রুগ্ন শিল্প কারখানাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি খুলনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, এক সময়ে অদূরদর্শীতা, অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের বহু শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে সেগুলো চালু করেছে। ভবিষ্যতে খুলনাকে আবারও একটি কর্ম চাঞ্চল ও শিল্প শহর হিসেবে দেখা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, ‘১৯৯৯ সালে যে উদ্দেশ্য নিয়ে খুলনা শিপইয়ার্ডকে নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেছিলাম, তা আজ চূড়ান্তভাবে সফল হয়েছে।
পাঁচটি যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের পর আজ অত্যাধুনিক লার্জ পেট্রোল ক্রাফট নির্মাণ কাজ শুরু করে এ প্রতিষ্ঠানকে আরও শক্তিশালী ভিতের ওপর দাঁড় করানো হলো। এছাড়া সিঙ্গাপুরের প্রযুক্তিগত সহায়তায় খুলনা শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ নৌবাহিনীর নৌ-কল্যাণ ফাউন্ডেশনের জন্য আধুনিক কন্টেইনার ভেসেল নির্মাণও এ ইয়ার্ডর ক্রমবর্ধমান জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। পর্যায়ক্রমে খুলনা শিপইয়ার্ড জাহাজ রপ্তানি করতে সক্ষম হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ায় পাঁচটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ। কিন্তু আমরা আর মধ্যম আয়ে থাকতে চাই না। শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মাসেতু এখন আর স্বপ্ন নয়। ইতিমধ্যেই সেতুর ২৩ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ সেতু নির্মাণ শেষ হলে এটি দক্ষিণাঞ্চলের উন্নতির প্রবেশদ্বার হবে। বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল আমদানি ও রপ্তানি করতে মংলা বন্দর ব্যবহার হবে।তিনি বলেন, আমাদের নদী বন্দর নিয়ে গবেষণা করতে হবে। এজন্য দেশে দু’টি নৌ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও এ বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে।অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, খুলনা সিটি মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি, এসএম মোস্তফা রশিদী সুজা এমপি, মিজানুর রহমান মিজান এমপি, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল এম ফরিদ হাবিব, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুপুর ২টা ২০ মিনিটে খুলনা শিপইয়ার্ডে প্রবেশ করেন। ২টা ৩৫ মিনিটে তিনি নৌবাহিনীর জন্য দুটি জাহাজ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন (কিল লেয়িং) করেন। পরে তিনি ২টা ৪৮ মিনিটে মঞ্চে ওঠে উদ্বোধনী ভাষণ দেন।
সকাল সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মংলার দ্বিগরাজে নির্মিত বানৌজা খানজাহান আলী, বানৌজা সন্দীপ ও বানৌজা হাতিয়া নামে তিনটি জাহাজের কমিশনিং এবং নবনির্মিত এলসিটি ১০৩ ও এলসিটি ১০৫ নৌবাহিনীতে সংযুক্ত করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি অত্যাধুনিক ও শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, ২০১৬ সালের মাঝামাঝি নৌবাহিনীতে ২টি সাবমেরিন যুক্ত হবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২টি সাবমেরিন যুক্ত করার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সাবমেরিন ২টি নৌবাহিনীতে সংযুক্ত হবে ইনশা’আল্লাহ। শেখ হাসিনা বলেন, সাবমেরিনের জন্য ঘাঁটি ও অন্যান্য অবমাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। একই সঙ্গে খুলনা নদী অঞ্চলে পূর্ণাঙ্গ নৌবহর কার্যক্রম চালুর ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মংলায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দীগরাজ নৌ-ঘাঁটিতে একটি ‘অয়েল ফ্লিট ট্যাঙ্কার’ কমিশনিং এবং ২টি ল্যান্ডিং ক্রাফ্ট ইউটিলিটি (এলসিইউ) ও ২টি ল্যান্ডিং ক্রাফ্ট ট্যাঙ্কার সংযুক্তকরণ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে ভাষণকালে এ কথা বলেন। এতে দেশে নির্মিত প্রথম অয়েল ফ্লিট ট্যাঙ্কার খানজাহান আলী এবং এলসিইউ জাহাজ সন্দ্বীপ ও হাতিয়া… এবং ২টি ল্যান্ডিং ক্রাফ্ট ট্যাঙ্কার- এলসিটি-১০৩ ও এলসিটি-১০৫ যথাক্রমে নৌবাহিনীতে কমিশনিং ও সংযুক্ত হয়।
প্রধানমন্ত্রী মংলা নৌ-ঘাঁটিতে পৌঁছলে বিমানবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল ফরিদ হাবিব এবং খুলনা নৌ-অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার তাঁকে স্বাগত জানান।নৌবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড-অব-অনার জানায়। তিনি গার্ড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। এ সময় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঐতিহ্য অনুসারে ’শীপ বেল’ বেজে উঠে এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়। শেখ হাসিনা চেইন অব কমান্ড ও পেশাগত দক্ষতা বজায় রাখার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কর্মকর্তা-নাবিকদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, কর্মকর্তা ও নাবিকগণ পেশাগত দক্ষতার মাধ্যমে উন্নততর কর্মদক্ষতা, শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ডের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মর্যাদা সব সময় সমুন্নত রাখবেন।
তিনি বলেন, এটা সবার প্রত্যাশা যে বাংলাদেশ নৌবাহিনী শান্তি প্রতিষ্ঠায় দেশের পাশাপাশি বিশ্বের যেকোন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে শেখ হাসিনা বলেন, এই মহান নেতা স্বাধীনতার পরপরই দেশের সমুদ্রসীমা রক্ষায় শক্তিশালী নৌবাহিনী গঠনে দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।তিনি বলেন, ভৌগোলিক ও কৌশলগত অবস্থানের কারণে দেশের সমুদ্রসীমা ও এর সম্পদ রক্ষায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার আগেই এই সত্য অনুধাবন করে তাঁর ঐতিহাসিক ৬-দফা আন্দোলনে পাকিস্তানের নৌবাহিনীর সদর দফতর পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠার দাবি করেছিলেন।প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ছোট্ট এই নৌবাহিনী বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী চিন্তা-ভাবনার বাস্তবায়নে মাত্র ২টি পেট্রোল ক্রাফ্ট নিয়ে যাত্রা শুরু করে আজ মর্যাদাপূর্ণ ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত হতে চলছে।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, জাতিসংঘ শাক্তিরক্ষা মিশনসহ আন্তর্জাতিক মহলে বিভিন্ন অবদানের জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনী সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে।শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অগ্রযাত্রা বেগবান হয়। তিনি বলেন, সে সময় অত্যাধুনিক মিসাইল ফ্রিগেট বানৌজা বঙ্গবন্ধু, লার্জ-পেট্রোল ক্রাফ্ট মধুমতি, পেট্রোল ক্রাফ্ট বরকত, তিতাস, কুশিয়ারা এবং ট্যাঙ্কার ইমাম গাজ্জালী নৌবাহিনীতে কমিশন করা হয়। এছাড়া রুগ্ন খুলনা শিপইয়ার্ডকে নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর ছিল আমাদের সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য বর্তমান মেয়াদে সরকারের উন্নয়ন পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার নৌবাহিনীকে একটি কার্যকর বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য স্বল্প এবং দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ‘যা ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, এই পরিকল্পনার আওতায় স্বল্প সময়ের মধ্যে সমুদ্রসীমা নির্ধারণে সহায়তার জন্য অত্যাধুনিক সার্ভে জাহাজ বানৌজা অনুসন্ধান নৌবহরে সংযোজন করা হয়। এরপর মেরিটাইম হেলিকপ্টার ও মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফ্ট সংযোজন নৌবাহিনীতে নতুন মাত্রা যোগ করে।এরপর একে একে নৌবাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে দু’টি মিসাইল ফ্রিগেট, একটি আমেরিকায় তৈরি ফ্রিগেট, দু’টি মিসাইল করভেট এবং খুলনা শিপইয়ার্ডে তৈরি পাঁচটি পেট্রোল ক্রাফ্ট। শেখ হাসিনা বলেন, আমেরিকায় তৈরি আরও একটি ফ্রিগেট বানৌজা সমুদ্র অভিযান ও এবং গণচীনে নির্মাণাধীন অত্যাধুনিক দু’টি করভেট বানৌজা প্রত্যয় এবং স্বাধীনতা এ বছরেই নৌবহরে সংযোজিত হবে।
তিনি বলেন, এ সরকারের আমলেই আনকনভেনশনাল ওয়ারফেয়ার’র জন্য নৌবাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে স্পেশাল ফোর্স সোয়াডস।তিনি বলেন, এছাড়াও বিশেষ বিবেচনায় উপকূলীয় অঞ্চল সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখতে নজরদারি স্টেশন এবং প্রাসঙ্গিক অবকাঠামো বাড়ানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অস্ত্র ও অন্যান্য পণ্য চোরাচালান রোধ এবং সমুদ্র পথ উন্মুক্ত রাখার মাধ্যমে সমুদ্র সম্পদ সুরক্ষায় আমাদের সরকার বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে সুসজ্জিতভাবে গড়ে তুলতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। প্রথমবারের মত দেশীয় ও বিদেশী প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের শিপইয়ার্ডে তৈরি নৌবাহিনীর দ্রুতগামী ট্যাঙ্কার চালুর প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এই অব্যাহত অগ্রগতি আজ এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।তিনি বলেন, দেশের শিপবিল্ডিং শিল্পের ইতিহাসে এটি একটি মাইলফলক।তিনি বলেন, দেশীয় শিপইয়ার্ডের অগ্রগতি ইতোমধ্যেই বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি শিপবিল্ডিং জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। অদূর ভবিষ্যতে আমরা এই দেশে আরো উন্নত যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ।