দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫: গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ এবং মধ্যাঞ্চলের মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলাসমূহের কতিপয় স্থানের বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে ৷গত তিন দিনের বৃষ্টিতে মেঘনায় শতাধিক দোকানপাট ও বসত বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে ৷ রাস্তা-ঘাট ও বিস্তর্ীণ ফসলের মাঠ বড় বড় ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে৷ আতষ্কে দিন কাটাচ্ছে নদী তীরবতর্ী মানুষ৷ কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে৷ উজান থেকে আসা পাহাড়ী ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতের কারণে নদ-নদীর পানি ক্রমেই বাড়ছে৷ শনিবার সকালে ধরলা নদীর পানি ফেরিঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল৷
এদিকে, আগামী ৪৮ ঘন্টায় দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ এবং মধ্যাঞ্চলের মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলাসমূহের কতিপয় স্থানের বন্যা পরিস্থিতির সামান্য অবনতি হতে পারে৷ অপরদিকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাসমূহের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে৷
ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ আগামী ৭২ ঘন্টা এ ধারা অব্যাহত থাকবে৷ গঙ্গা নদীর পানিও হ্রাস পাচ্ছে৷ আগামী ৯৬ ঘন্টা পর্যনত্ম এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে৷পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ যা আগামী ৪৮ ঘন্টা পর্যনত্ম অব্যাহত থাকতে পারে৷উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদীসমূহের পানি হ্রাস পাচ্ছে৷ যা আগামী ৪৮ ঘন্টা পর্যনত্ম অব্যাহত থাকতে পারে৷ঢাকা শহর সংলগ্ন নদ-নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ আগামী ৭২ ঘন্টা পর্যনত্ম এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে৷ তবে পানি বিপদসীমার নীচে থাকবে৷পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৮৫টি পানি মনিটরিং স্টেশনের মধ্যে ৩৭টি স্থানে পানি বৃদ্ধি ও ৪৩টি স্টেশনে পানি হ্রাস পেয়েছে৷ ৩টি স্থানে পানি অপরিবর্তিত রয়েছে এবং ২টি স্থানের তথ্য পাওয়া যায়নি৷ ২৩টি স্থানে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷
জামালপুর:জামালপুর জেলার বন্যার পরিস্থিতি চরম অবনতি ঘটেছে৷ জেলার যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও জিঞ্জিরাম নদীর পানি অব্যহত বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ ফলে সারা জেলায় প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে৷ আজ ৫ সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল পর্যনত্ম যমুনার বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে দুপুর ১২টায় ৬২.৫সেঃমিঃ বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে৷ ব্রহ্মপুত্র নদের পানি আজ দুপুরে বিপদ সীমার ৪৫সেন্টি মিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে৷ জেলার ৭টি উপজেলার প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পানি বন্দি হয়ে পড়েছে৷ এতে করে জেলার দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে৷ বিশেষ করে দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে৷ সবচেয়ে বেশী ৰতিগ্রস্থ উপজেলার মধ্যে ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ৷ ইসলামপুরের ইউএনও মাসূমুর রহমান জানান, বামনা, সিংভাঙ্গা, বলিয়াদহ, চিনাডুলী, কুলকান্দি, বেড়কুর্শা, চাকুরিয়া, হরিনধরা, জিগাতলা, বরুল, মনি্নয়া, প্রজাপতি, সিলদহ, সিন্দুরতলী, চরশিশুয়া, কাশাড়ীডোবা, চেঙ্গানিয়া, জোরডোবা, চরনন্দনেরপাড়া, হাড়গিলা, ভাঙ্গবাড়ী, কাজলা, কাঠমা, সিরাজনগর, মির্জাপুর, নব্বইচর, কয়লাকান্দি, কটাপুর এলাকা সম্পূর্ণ পানিতে নিমজ্জিত৷ এসব এলাকার লৰাধিক মানুষের মাঝে রান্নাকরা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট চলছে৷ এছাড়া ইসলামপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বন্যায় পস্নাবিত হয়েছে৷ বন্যার্তদের সাহায্যে ৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং শুকনো খাবার বিতরণে ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ জামালপুরের জেলা প্রশাসক সাহাবুদ্দিন খান জানান, জেলার ৭টি উপজেলার ২৫৪িট ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে ইতোমধ্যেই প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে৷ বন্যার্তদের সাহায্যে তৃতীয় দফায় সারা জেলায় ৭৭মেট্র্রিক টন চাল এবং ২লাখ টাকার শুকনো খাবার বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
কুড়িগ্রাম:কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে৷ উজান থেকে আসা পাহাড়ী ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতের কারণে নদ-নদীর পানি ক্রমেই বাড়ছে৷ শনিবার সকালে ধরলা নদীর পানি ফেরিঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল৷এদিকে, জেলার ৯টি উপজেলার ৬৬টি ইউনিয়নের ৬ শতাধিক গ্রামের ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে৷ প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে আরো নতুন নতুন এলাকা৷ জেলার দুই শতাধিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে৷জানা গেছে, যাত্রাপুর, পাঁচগাছি, বেরুবাড়ী, সাহেবের আলগা, নুনখাওয়া, রাজিবপুর, রৌমারী ও চিলমারীসহ কয়েকটি এলাকায় বেশ কিছু ঘরবাড়ি পানির তোড়ে ভেসে গেছে৷ গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ দুর্গত এলাকার বেশির ভাগ মানুষ উঁচু ভিটা, স্কুল, বাঁধে আশ্রয় নিলেও অনেকেই নিজের বাড়িতে মাচা করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করছেন৷ তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় এদের অনেককে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে৷ ত্রাণের অভাবে দুর্গত এলাকায় হাহাকার পড়ে গেছে৷ পর্যাপ্ত ত্রাণের অভাবে বন্যার্তদের অনেকের ভাগ্যে এখন পর্যন্ত সরকারের ত্রাণ পৌঁছেনি৷
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজার রহমান জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্রে ৮ সেন্টিমিটার, দুধকুমোরে ৪ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে৷ অবশ্য ধরলায় ৫ সেন্টিমিটার পানি কমেছে৷ তবে এখনও বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷ জেলার কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শওকত আলী সরকার জাগো নিউজকে জানান, উপজেলার প্রায় ৫৮ হাজার হেক্টর জমির আমন ক্ষেত গত ১৮দিন ধরে বন্যার পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে৷ ফলে এ সকল ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন জানান, কুড়িগ্রামের বড় বড় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে৷ বন্যা কবলিতদের জন্য ২শ ৫৯ মেট্রিক টন চাল ও ৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷ যা বিতরণের কাজ চলছে৷ নতুন করে ১০ লাখ টাকা ও ৫শ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ চেয়ে জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছে৷
বগুড়া: বগুড়ায় দ্বিতীয় দফায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে৷ জেলার ৫টি উপজেলায় নতুন নতুন এলাকা পস্নাবিত হচ্ছে৷ দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে৷ শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান স্থগিত করা হয়েছে৷ বগুড়ায় যমুনা ও বাঙ্গালী নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে৷ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, সকাল ৬টায় যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৭১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং বাঙ্গালী নদীর পানি বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল৷সারিয়াকান্দি উপজেলার পূর্বে যমুনা ও পশ্চিমে বাঙ্গালী নদীর পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পানিতে ডুবে গেছে৷ সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাকিল মাহমুদ জানান, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের ৭০টি গ্রামের ৯০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে৷ বন্যার্তরা চরম দুভোর্গের মুখে পড়েছে৷ গ্রামের অধিবাসীরা জলমগ্ন হওয়া বাড়িঘর থেকে গবাদিপশু নৌকায় করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে নিয়ে যাচ্ছে৷
সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে৷ ধুনট উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাফিজুর রহমান জানান, সেখানকার একটি ইউনিয়নের ১২টি গ্রামের ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে৷ জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলার আদমদীঘি ও শিবগঞ্জ উপজেলার ফসলী জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে৷ জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক চন্ডি দাস কুন্ডু জানান, ৫টি উপজেলার ১৪ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন, রোপা আউশ, আমন বীজতলা ও শাকসবজি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে৷ তিনি আরো জানান, বন্যার পানি যে ভাবে বাড়ছে তাতে আরো ফসলী জমি পস্নাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে৷ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসেন আলী জানান, ৫টি উপজেলায় ৯৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিতে ডুবে গেছে৷ ওই সব বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ করা হয়েছে৷ ২২ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য মসজিদ অথবা উঁচু স্থানে শিক্ষাথর্ীদের ক্লাস নেয়া হচ্ছে৷ বগুড়া জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন জানান, এ পর্যনত্ম ৭০ মেট্রিক টন চাল ও ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে৷ আজ শনিবারও বন্যা দুর্গতদের মাঝে চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে৷
গাইবান্ধা: গাইবান্ধার দফায় দফায় বৃষ্টি ও উজান থেকে মেনে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি ফের বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷শুক্রবারবিকেলে ব্রহ্মপুত্রের পানি ৩৬ সেন্টিমিটার, ঘাঘটের পানি বিপদসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং অন্যান্য নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই-ছুঁই করছে বলে জানিয়েছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড৷ এদিকে, প্রবল স্রোতের কারণে জেলার সাদুল্যাপুর উপজেলায় সাদুল্যাপুর-দামোদরপুর সড়কের জামুডাঙ্গার ঘাঘট নদীর উপর অবস্থিত ব্রিজটি হুমকির মুখে পড়েছে৷ ব্রিজের দক্ষিণ পাশের পিলারের গোড়া থেকে পাকা সড়কের ২০০ ফুট মাটি ঘাঘট নদীতে ধসে পড়েছে৷ ফলে, যানবাহন ও পথচারীদের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে৷
দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদ(ইউপি) চেয়ারম্যান মনোয়ারুল হাসান জীম মণ্ডল জানান, সড়কটি ভাঙন রোধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ব্রিজটিও ভেঙে পড়বে৷ পানির তোড়ে ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ ব্রিজ ভেঙে গেলে দামোদরপুর, কামারপাড়া, নলডাঙ্গা, কুপতলা, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের পথ বন্ধ হয়ে যাবে৷ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহসান হাবীব বলেন, সড়কটি ভাঙনের কথা শুনে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি৷ সড়ক মেরামতের জন্য এলজিআইডি নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবগত করা হয়েছে৷
ফেনী ফেনীতে সাম্প্রতিক টানা বর্ষন ও উজানের পানিতে সৃষ্ট বন্যায় অনত্মত ২৬ কোটি টাকার মত্স্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে৷ জেলা মত্স্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবারের বন্যায় মত্স্যজীবিরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ ইতিমধ্যে জেলার সব উপজেলায় মত্স্য চাষীদের ক্ষয়ক্ষতির একটি হিসাব করা হয়েছে৷ এতে দেখা যায় বন্যায় চার হাজার ৪২৫টি পুকুর, ঘোর ও খামারের মাছ ও মাছের পোনা ভেসে অনত্মত ২৬ কোটি ১০ লাখ ২১ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে৷ এরমধ্যে চার হাজার ৪২৭ টি পুকুরের ১৩ কোটি ২১ লাখ ২০ হাজার টাকার মাছ, এক কোটি ৮২ লাখ টাকার চিংড়ী, ৯ কোটি ২৪ লাখ টাকার মাছের পোনা এবং এক কোটি ৮৩ লাখ এক হাজার টাকার অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে৷
মত্স্য সম্পদের এসব ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে দাগনভূঞা উপজেলায় ৯৬৭টি খামার ও পুকুর থেকে ১৯ কোটি ৪৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকার মাছ ও মাছের পোনা ভেসে গেছে৷ ফেনী সদর উপজেলায় দেড় হাজার পুকুর ও খামার থেকে ৫ কোটি ২১ লাখ টাকার মাছ ও পোনা, ছাগলনাইয়া উপজেলায় ৪২০টি খামার থেকে ১৫ লাখ টাকার মাছ, দুই দফায় ফুলগাজীর ৪৫০টি পুকুর ও খামার থেকে ৪১ লাখ দুই হাজার টাকার মাছ, পরশুরাম উপজেলার দুই দফায় ৪১০টি পুকুর ও ঘের থেকে ৬৫ লাখ টাকার মাছ এবং সোনাগাজীর ৪০০টি পুকুর, খামার ও ঘের থেকে ২১ লাখ ২০ হাজার টাকার মাছ ও পোনা ভেসে গেছে৷
দাগনভূঞা উপজেলার খামারী সালেহা খাতুন জানান, বন্যার শুরুতে কোন রকমে জাল দিয়ে মাছগুলো আটকিয়ে রাখতে পারলেও টানা বর্ষনে সবগুলো মাছ ভেসে গেছে৷জেলা মত্সজীবি সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, মত্স্যজীবিদের অনেকেই সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋন নিয়ে মাছ চাষ করেছেন৷ বন্যায় মাছ ভেসে যাওয়ায় তারা হতাশ ও কি ভাবে ঋন পরিশোধ করবেন সে চিনত্মায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন৷ফেনী জেলা মত্স্য কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন জানান, এবারের বন্যায় জেলায় মত্স্যজীবিদের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয়েছে৷ তিনি জানান, বন্যায় জেলায় চার হাজার ৪২৫টি পুকুর, ঘোর ও খামারের মাছ ও মাছের পোনা ভেসে অনত্মত ২৬ কেটি ১০ লাখ ২১ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে৷ ক্ষতিগ্রস্থ মত্স্য চাষীদের তালিকা ও ক্ষতির পরিমান হিসাব করে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কতর্ৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে৷ সরকারী সহায়তা পেলে এসব ক্ষতিগ্রস্থ মত্স্য চাষী আবার ঘুরে দাঁড়ানের সুযোগ পাবেন বলে তিনি আশা করেন৷
রংপুর: চলতি বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টি ও বন্যায় প্রায় ৮৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে, এতে প্রায় ৮\’শ কোটি টাকার উর্ধে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন রংপুর অঞ্চলের কৃষকরা৷ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্যায় তলিয়ে যাওয়া ৮০ হাজার ৭৮৭ হেক্টর রোপা আমন ধানের জমি তলিয়ে গেছে৷ এই জমিতে প্রায় দুই লাখ ৬৯ হাজার ৫\’শ মেট্রিক টন ধান উত্পাদন হতো৷ যার বাজার মূল্য ছিল ৭৩৯ কোটি ৭৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকা৷ আর বন্যার পানিতে দুই হাজার ৩৯৮ হেক্টর সবজি ক্ষেত সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে৷ এখানে প্রায় ৫৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকার সবজি উত্পাদন হবে বলে আশাবাদীছিল কৃষকরা৷ এছাড়া কলায় এক কোটি ৪৫ লাখ এবং আদা চাষে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ এছাড়া বীজতলাসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতির পরিমানও কিন্তু ভাবিয়ে তোলার মতো৷ কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরের আঞ্চলিক কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ভোক্তভোগী কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এসব চিত্র পাওয়া গেছে৷
রংপুর কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি বছরের জুলাইয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় এতে বেশ বড় মাপের ক্ষতির সম্মুখীন হন কৃষকরা৷ এছাড়া আগস্ট মাসের বিভিন্ন সময়ের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে শুধু রংপুর অঞ্চলেই এক লাখ ৩১ হাজার ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে৷ প্লাবিত জমির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষি বিভাগ৷ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আউশ ও আমন ধান ছাড়াও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্য আমনের বীজতলা, বোনা আমন, বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি, মরিচ, পানের বরজ, কলা উল্লেখযোগ্য৷ গত তিনদিন ধরে রংপুরের পীরগাছা, কাউনিয়া, গংগাচড়া, মিঠাপুকুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, এসব এলাকার ফসলি জমিসহ ঘর- বাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে৷ রোপা আমন তলিয়ে যাওয়ায় বেশ ভাবনায় পড়েছেন চাষিরা৷ আকস্মিক এ প্রাকৃতিক দুযোর্গে একেবারেই ভেঙে পরেছেন এসব কৃষক৷ এই ধান থেকেই খোরাকের যোগান আসে এ অঞ্চলের বর্গা, প্রান্তিক ও ভূমিহীন চাষিদের৷ এরমধ্যে রয়েছে আবার ঋণের চিন্তাও৷ ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা জানান, ফসল বোনার সময় বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধার-দেনা ধান চাষ শুরু করেছিলেন তারা৷ কিন্তু হঠাত্ করে অসময়ের বন্যায় সব ভাসিয়ে নেওয়ায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে ক্ষতিগ্রস্ত এসব চাষিদের৷ এখনও পর্যন্ত সরকারি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা৷
কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতর রংপুর আঞ্চলিক কর্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মহসিন প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাদের কাজ হলো যথা সময়ে মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে তদন্ত সাপেক্ষ তথ্য নিশ্চিত করা, এরপর মন্ত্রণালয় থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে তা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে৷’ এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের অভিযোগ, বন্যা-জলাবদ্ধতার কারণে তলিয়ে যাওয়া ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে না৷ তাই অনতি বিলম্বে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তারা৷ কৃষকরা বলছেন, এই ক্ষতির ধকল কাটিয়ে উঠতে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন৷ অন্যথায়, সামনে আলু চাষে বিপদে পরতে পারে এসব কৃষক৷ আর সবচেয় বেশি বিপদগামী হবে এ অঞ্চলের যারা ভূমিহীন ও বর্গা চাষিরা৷ এদিকে চাষিদের সব অভিযোগ প্রত্যাখান করে কৃষি বিভাগের দাবি, কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সমস্যা চিহ্নিত করে কৃষি উপকরণ ব্যবহারের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে৷