1014_144077_152955

দৈনিকবার্তা-চট্টগ্রাম, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫: চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের বিষয়ে এখনই কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না বলে আবারও জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। আগে চট্টগ্রামে যে সার্কিট বেঞ্চটি ছিল সেটি তৎকালীন সরকার হুজুগে স্থাপন করেছিল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।শুক্রবার ‘হাইকোর্টে সার্কিট বেঞ্চ বাস্তবায়ন পরিষদ’র সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, চট্টগ্রামে সার্কিট বেঞ্চের বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয় নয়।এখানে মর্যাদার বিষয় আছে, সংবিধান, মামলার সংখ্যা সবকিছু বিবেচনায় নিতে হবে। সব বিষয় বিবেচনা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। তখন সরকার হুজুগে সার্কিট বেঞ্চ বানিয়েছিল। পরে দেখা গেছে সেটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে গেছে। সেগুলো জুয়া খেলার মত হয়ে গিয়েছিল। বলেন সিনহা।

তিনি বলেন, বিচারকদের তখন মেসে থাকতে হত। তাদের আবাসনের ব্যবস্থা নেই।আইনজীবীদের বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে আয়োজিত এ সভায় পরিষদের সভাপতি ও জেলা পিপি অ্যাডভোকেট আবুল হাশেমও বক্তব্য রাখেন। এর আগে বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা বার মিলনায়তনে আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের বিষয়টি এখনও চিন্তাভাবনার পর্যায়ে আছে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তবে এ বিষয়ে এখনই কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রধান বিচারপতি বলেন, চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের যে দাবি উঠেছে তার সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল। এটা সময়ের দাবি। একসময় চট্টগ্রামে সার্কিট বেঞ্চ ছিল। কিন্তু সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখন শুধু চট্টগ্রাম নয় সিলেট, রাজশাহী, বরিশালসহ বিভিন্ন বিভাগে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের দাবি উঠেছে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আমাকে বলা হয়েছে। সরকার প্রধান খুব সিরিয়াসলি বলেছেন, এটা একটু চিন্তা করেন। তবে আমি এখন হ্যাঁ বা না কিছুই বলতে পারবনা। বলেন প্রধান বিচারপতি।

সিনহা বলেন, প্রধান বিচারপতি হিসেবে আমি অযথা কোন কথা বলব না। হাততালি পাওয়ার জন্যও কোন ঘোষণা দিতে চাই না। আমি সিরিয়াসলি চিন্তাভাবনা করছি। তবে সিদ্ধান্ত এখনই জানাতে পারছিনা।প্রধান বিচারপতি হিসেবে কোন সিদ্ধান্ত আমি একতরফা নিইনা। সিনিয়র বিচারপতিদের পরামর্শ নিই। আইনজীবীদের যে অনুভূতি, সরকার প্রধান কিংবা বিরোধী দলের যে অনুভূতি এবং সিনিয়র আইনজীবীদের ইচ্ছা যৌথভাবে বিবেচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নেব। কিছু সময় হয়ত লাগতে পারে। তবে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নেব। বলেন সিনহা। প্রধান বিচারপতি জানালেন, সারা দেশের বিচার বিভাগকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সিলেটে আদালতের ডিজিটালাইজেশন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এরপর চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ডিজিটালাইজেশন করা হবে। ডিসপ্লেতে সাক্ষ্য, যুক্তিতর্ক সবকিছু দেখা যাবে। কোথাও ভুল হলে আইনজীবীরা সেটা সংশোধন করে নিতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগকে আমূল পরিবর্তনে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২০১৪ সালের থেকে ৫০ ভাগ মামলা বেশি নিষ্পত্তি হবে। ’

দেশে ৩১ লক্ষ মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, কিছু মহল থেকে বলা হচ্ছে বিচার বিভাগ ৩১ লক্ষ মামলার ভার নিতে পারছেনা। আমি বলি, ৩১ লক্ষ মামলা খুব বেশি নয়। ভারতে এর চেয়েও বেশি মামলা আছে। কিন্তু ভারতে যে পরিমাণ বিচারক আছে বাংলাদেশে তার অর্ধেক। পৃথিবীতে সবচেয়ে কম বিচারক আছে বাংলাদেশে। আমাদের আরও বড় সমস্যা হচ্ছে আদালত নেই। বিচারকদের বসার জায়গা দিতে পারছিনা। যদি পর্যাপ্ত আদালত থাকত তাহলে বর্তমান বিচারক দিয়েই ৩১ লক্ষ মামলা দুই-তিন বছরে নিষ্পত্তি করতে পারতাম। বলেন প্রধান বিচারপতি।