দৈনিকবার্তা-মংলা, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫: মংলা-ঘাষিয়াখালী চ্যানেলের সাথে সংযুক্ত ৩২টি মূল খাল ও অর্ধ শতাধিক শাখা খালের বাঁধ অপসারণ কাজ বর্তমানে অর্থ বরাদ্দের অভাবে বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ ধরে মংলা-ঘাষিয়াখালী চ্যানেল সংযুক্ত এ খালে বাঁধ দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা চিংড়ি চাষ করে আসছে। স্থানীয়রা ও নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মংলা-ঘাষিয়াখালী চ্যানেল সংলগ্ন এ খালগুলোর সঠিকভাবে খনন না হলে চ্যানেলে পানির ¯্রােত আশানুরুপ হবে না। আর স্রোত আশানুরুপ না হলে এ চ্যানেলে খুব দ্রুত আবার পলি পড়ে নাব্যতা হারাবে। মংলা ও রামপাল উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর ডিসেম্বর মাসে মংলা-ঘাষিয়াখালী চ্যানেল সংলগ্ন ৩২টি মূল খাল ও আরো ৩০৩টি শাখা খাল চিহিৃত করে প্রশাসন। নাব্যতা সংকট ও খালগুলো দখল করে চিংড়ি চাষ করার কারণে এ খালগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। রামপাল উপজেলার ২৪৬টি খালের উপর এক হাজার একশ ১৮টি অবৈধ বাঁধের তালিকা করে প্রশাসন। আর মংলা উপজেলায় ৭২টি খালের উপর দুইশত ৫২টি অবৈধ বাঁধের তালিকাও করে প্রশাসন। ডিসেম্বর থেকে জুন মাস পর্যন্ত মংলা উপজেলার ১৮টি সংযোগ খালের আংশিক পলি অপসারণ ও ১৬৭টি অবৈধ বাঁধ এবং রামপাল উপজেলার ১৩টি খালের উপর ১৫৮টি অবৈধ বাঁধ অপসারণ করে উপজেলা প্রশাসন। আর এ ১৩টি খালেরই সীমিত আকারে পলি অপসারণ করা হয়। এরপর বরাদ্দের অভাবে খালের অবৈধ বাধ ও পলি অপসারণ বন্ধ হয়ে যায়। গত ৫ আগষ্ট প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর সর্বশেষ এ দু’উপজেলার খালের তালিকা সংশোধন করে জেলা প্রশাসন ৮২টি মূল খাল চিহিৃত করে আবার বাঁধ অপসারন শুরু করে। কিন্তÍ বরাদ্দের অভাবে এ খালগুলোর পলি অপসারণ ও খনন কাজ এখন বন্ধ রয়েছে।
মংলা-ঘাষিয়াখালী চ্যানেল রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন শেখ বলেন, ‘দীর্ঘ দুই যুগ ধরে মংলা-রামপালের তিন শতাধিক খাল প্রভাবশালীরা বাঁধ দিয়ে আটকে চিংড়ি চাষ করে আসছে। খননের অভাবে এ খালগুলোও মৃত প্রায়। আবার অনেক খালের উপর সরকারী-বেসরকারী স্থাপনা, ঘর-বাড়ী নির্মাণ করা হয়েছে। এ সকল স্থাপনা ও সকল সরকারী খালের উপর নির্মিত শতশত অবৈধ বাঁধ অপসারণ করতে হবে। তাহলে এ সকল খালের ¯্রােতধারা ঘাষিয়াখালি চ্যানেলের সাথে মিশে পানির প্রবাহ বহুগুন বৃদ্ধি পাবে। ফলে চ্যানেলটি আবার আগের মত সচল হবে’। মংলা-ঘাষিয়াখালী চ্যানেল খননের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিইজিআইএসের রিভার ডেল্টা এন্ড কোষ্টাল মরফোলজি ডিভিশনের বিশেষজ্ঞ এটিএম কামাল হোসেন বলেন, জোয়ার-ভাটা প্রবণ এ চ্যানেলে প্রতিদিন হাজার হাজার কিউবিক ঘনমিটার পলি এখনও আসছে। এটা যদি প্রাকৃতিকভাবে শাখা নদী ও শাখা খালে ছড়িয়ে দেওয়া না যায় তাহলে মূল চ্যানেলে আবারও পলি জমে ভরাট হয়ে যাবে। এ পর্যন্ত নদী ও খালগুলোর খনন সঠিক নকশায় হয়নি। মূল চ্যানেল অনেক গভীর করে খনন করা হয়েছে। কিন্তÍ খালগুলো সে তুলনায় অনেক কম গভীরতায় খনন করা হয়েছে। ফলে চ্যানেলের পানি খালে ঠিকমত পৌঁছাতে পারছে না। এ জন্যে খালগুলো খননের সময় এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখা উচিত।
বিআইডব্লিউটিএর সহকারী প্রকৌশলী (ড্রেজার বিভাগ) দিদার এ আলম বলেন, এই চ্যানেলের বগুড়ার খাল নামক স্থানে ড্রেজিং করার পরও প্রতিদিন প্রচুর পলি জমতো। কিন্তু বগুড়া খালের বাধ অপসারণ করায় পানির প্রবাহ ও ¯্রােত বৃদ্ধি পাওয়া এই পয়েন্টে এখন আগের চেয়ে অনেক কম পলি পড়ছে। তাই মুল চ্যানেলের সাথে যত খাল রয়েছে সেগুলোর বাধ অপসারণ ও খনন করা হলে এই চ্যানেলের নাব্যতা ধরে রাখা সম্ভব হবে। ইতিমধ্যে এই চ্যানেল থেকে প্রায় ৭৫ লাখ ঘন মিটার পলি অপসারণ করা হয়েছে।তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক বিআইডব্লিউটিএর খনন কাজে নিয়োজিত এক কর্মকর্তা বলেন, নদীর চর দখল করে এখনও স্থানীয়রা চিংড়ি ঘের করছে। এর ফলে নদীর চরে উত্তোলিত পলি ফেলতে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া নদীর চাড়াখালী ও সীতারঘাট এলাকার চরে যে অবৈধ চিংড়ি ঘের রয়েছে সেখানে পলি ফেলতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বাধা দিচ্ছে।
এতে খনন ও পলি অপসারণে প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি কাজে ধীর গতির সৃষ্টি হচ্ছে। এক্ষেত্রে তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহয়তা কামনা করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো: জাহাঙ্গীর আলম জানান, ‘খালের পলি অপসারণ ও বাঁধ অপসারণে যে বরাদ্দ প্রয়োজন তা আমরা পাইনি। সীমিত আকারে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত টি.আর এবং কর্মসূচীর কাজের প্রকল্প দিয়ে এতদিন আমরা কাজ চালিয়ে এসেছি। তাতে মংলা-ঘাষিয়াখালী চ্যানেলের সাথে সমাঞ্জস্য রেখে খাল খনন সম্ভব না’।খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুস সামাদ বলেন, আমরা এ চ্যানেল সংযুক্ত ৮২টি খালের খনন ও বাঁধ অপসারণের জন্যে সরকারের কাছে বরাদ্দের আবেদন আমরা করেছি। এবং আমরা আরো সুপারিশ করেছি খাল খননে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএকে দায়িত্ব দেয়ার জন্যে। তারা চ্যানেলের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সঠিক নকশায় কার্যকরীভাবে খাল খনন করতে পারবেন।