দৈনিকবার্তা-যশোর , ২ সেপ্টেম্বর: যশোরে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে ছাত্রলীগ৷ চাঁদাবাজি, ডাকাতি, নারী লাঞ্ছিতসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে সংগঠনের নেতাকর্মীরা৷ সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে তৃর্ণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে৷ যে কারণে সংগঠনের সুনাম দিনকে দিন ক্ষুন্ন হচ্ছে৷ আর এতে করে বির্বত হচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারা৷
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদত্ বার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রলীগের নেতারা নিজেদের পদ পদবী ব্যবহার করে কার্ড (দাওয়াতপত্র) ছাপান৷ এসব কার্ড বিভিন্ন সরকারি অফিসের কর্মকর্তা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ ব্যবসায়ী হাতে পৌছে দিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন৷ টাকা না দিলে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেয়া হয়৷ চাকরি কিম্বা ব্যবসা করার জন্য অনেকে টাকা দিতে বাধ্য হন৷ কেউই ছাত্রলীগ নেতাদের বিরম্নদ্ধে কথা বলতে সাহস পাননি৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদত্ বার্ষিকী উপলৰে চাঁদাবাজির বিরম্নদ্ধে যশোর বিএডিসির একজন ইঞ্জিনিয়র জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ সরদারের বিরুদ্ধে সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের কাছে অভিযোগ করেন৷ ওই ইঞ্জিনিয়র অভিযোগ করেন জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ সরদার তার কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদত্ বার্ষিকী উপলক্ষে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছেন৷ অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুল ইসলাম রিয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল দলীয় প্যাডে স্বাক্ষতির প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বহিস্কার করেন৷ কিন্তু সাঈদ সরদারের বহিস্কারের পর তিনি নিজে এক বিবৃতিতে তার প্রতিবাদ জানান৷ বিবৃতিতে তিনি জানান, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক তার বহিস্কার করতে পারেন না৷ কিন্তু এর কোন প্রতিবাদ জানাননি জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা৷ শুধু সাঈদ সরদার নয়, সদর উপজেলা নরেন্দ্রপুর ইউনিয়র ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিনের বিরম্নদ্ধে রয়েছে এনত্মার অভিযোগ৷ মঙ্গলবার রাতে শাহিন আলম সদরের চাউলিয়া গ্রামে গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়৷ এ ঘটনায় যশোর কোতয়ালি থানায় একটি মামলা করেছেন ওই গৃহবধূ৷ মামলায় ৩ নং আসামি করা হয়েছে শাহিন আলমকে৷
মামলায় ওই গৃহবধু বলেছেন, প্রতিদিন ওই বধু তার মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করেন৷ তার যাওয়া-আসার পথে এনামুল প্রায়ই তাকে উত্যাক্ত করতো এবং কুপ্রসত্মাব দিতো৷ কুপ্রসত্মাবে রাজি না হওয়ায় তাকে ৰতি করার চেষ্টা করতে থাকে৷ মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে তার স্বামী বাড়ি না থাকায় পূর্বপরিকল্পিত তার বাড়িতে প্রবেশ করে তাকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়৷ এসময় তিনি চিত্কার দিলে প্রতিবেশিরা এগিয়ে আসলে পালিয়ে যায়৷ এ ঘটনায় যশোর কোতয়ালি থানায় একটি মামলা হয়েছে৷ এছাড়া শাহিনের বিরম্নদ্ধে রয়েছে, মাদক ব্যবসার অভিযোগ৷ রামনগর, নরেন্দ্রপুর, রাজারহাট, রূপদিয়া এলাকায় শাহিনের নেতৃত্বে চলে মাদকের ব্যবসা৷ এছাড়া এলাকায় বিচার শালিসের নামে শাহিনের চলে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য৷ যে টাকা দিবে শাহিন তার পক্ষ নিয়ে বিচারের নামে প্রহসন চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে৷ শাহিনের নিজের গ্রামে (চাউলিয়া) স্বামী পরিত্যক্ত কোহিনুর ওরফে কহি নামে এক মহিলার বিচারের নামে প্রহসন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে৷ প্রতারণার মাধ্যমে কহির সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে সেলিম নামে এক ব্যক্তি৷ পরে কহি বিচার দাবি করলে তাকে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দেয় শাহিন৷ জীবনের ভয়ে সেলিমের সাথে আপস-মিমাংসা করতে বাধ্য হয় কহি৷
গত ১ আগস্ট চাউলিয়া গ্রামে বাপের বাড়ি বেড়াতে যায় যশোর শহরের বেজাপাড়ার বাসিন্দা ইমনের স্ত্রী পলি বেগম৷ সন্ধ্যায় পলি বেগমের বাপের (আব্দুস সবুর) বাড়িতে শাহিনের নেতৃত্বে ডাকাতি করে একদল দুর্বৃত্ত৷ এ ঘটনায় পলি বেগমের স্বামী ইমন বাদী হয়ে শাহিনসহ তার ডাকাত বাহিনীর বিরম্নদ্ধে মামলা দায়ের করে৷ মামলা হলেও শাহিনকে আজ পর্যনত্ম আটক করেনি পুলিশ৷গত ৪ জুন চাউলিয়া গ্রামের সুনীল মহুরীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে৷ শাহিনের ক্যাডার বাহিনী সুনীল মহুরর কাছ থেকে চেক বইতে সই করে নেয়৷ ওই বাড়ির মহিলাদের বিবস্ত্রও করে শাহিনের ক্যাডাররা৷ আর এসব অপকর্ম করার জন্য শাহিন গড়ে তুলেছে নিজস্ব বাহিনী৷ তার বাহিনীতে রয়েছে ওই এলাকার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মশিয়ার, ভুট্টো, সবুজ, এনামুল, পারভেজ, তোতা, রিপন ওরফে ভুমিদসু্য রিপন, সাহাবুদ্দিন, লিটনসহ আরও অনেকে৷
ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার কারণে শাহিন এভাবে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে৷ তার ভয়ে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না৷ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতার নামও ব্যবহার করে শাহিন৷ ওই নেতার ছবির সাথে নিজের ছবি দিয়ে প্যানা করে ওই এলাকায় বিভিন্ন স্থানে ঝুলিয়ে রেখেছে শাহিন৷ এ প্রসঙ্গে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুল ইসলাম রিয়াদের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি৷
ছাত্রলীগ নেতাদের এসব অপকর্মের ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল জানান, সাঈদ সরদার কোন বিবৃতি দিতে পারে না৷ বিবৃতি দেওয়ার তার কোন ক্ষমতা নেই৷ শাহিন প্রসঙ্গে বলেন, শাহিন ভালো ছেলে৷ ওই এলাকায় শাহিনের মত ছেলে নেই৷ মশিয়ার আগে খারাপ কাজ করলেও এখন কিছু করে না৷ রিপন খারাপ লোক৷ শাহিন ওই এলাকায় মাদক ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে৷ যারা মাদক ব্যবসা করতে পারেনা তারাই এসব অভিযোগ করছে৷