দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২ সেপ্টেম্বর: প্রতিবন্ধীদের অবহেলা না করে তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দিতে বাবা-মা, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সমাজের সকল শ্রেণি- পেশার মানুষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবহেলা না করতে দেশের জনগণের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেছেন, তাঁর সরকার বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়তে তাদের জীবনমান উন্নয়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সর্বস্তরের মানুষকে অনুরোধ করছি যে, যদি কারো ছেলে বা মেয়ে প্রতিবন্ধী হয় তবে তাকে অবহেলা করবেন না।তিনি বুধবার সকালে শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য আইসিআরসি টুয়েন্টি২০ ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেডক্রসের (আইসিআরসি) হেড অব ডেলিগেশন বাংলাদেশের ক্রিস্টিন চিপোল্লা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।এতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী আরিফ খান জয় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণে তাঁর সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হলে তারাও তাদের মেধা ও নৈপুণ্য প্রদর্শনের মাধ্যমে দেশের সম্পদ হয়ে উঠতে পারে।তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি… প্রতিবন্ধীদের জন্য এই সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করছি। এটা সরকারের এক সিদ্ধান্ত যে, মেধাবীদের খুঁজে বের করা এবং সমাজে তাদের স্থান করে দেয়া।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারের বোঝা হিসেবে প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে আচরণ না করতে মানুষের মাঝে চেতনা ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছে।তিনি বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা, সুপ্ত প্রতিভা ও গুণাবলীর বিকাশ সাধন।বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের সমাজের মূল ধারায় আনতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হলে তাকে সমাজ ও পরিবারের বাইরে রাখা সঠিক নয়। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েরা প্রমাণ করেছে যে, তারা যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারে এবং দেশ ও জাতির জন্য সম্মান বয়ে আনতে পারে।এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ অলিম্পিকে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ২১টি স্বর্ণপদকসহ ৭০টি পদক লাভ এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের সাফল্যের কথা উল্লেখ করেন।
প্রতিবন্ধিতা কোনো ব্যাধি নয় বরং এটা এক ধরনের চ্যালেঞ্জÑ এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধীরা এই চ্যালেঞ্জ জয় করে নজির স্থাপন করেছে যে, স্বপ্ন পূরণের পথে প্রতিবন্ধিতা কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।তিনি বলেন, এমনকি প্রতিবন্ধীদের জন্যও ক্রীড়া ও খেলাধুলায় কোনো প্রতিবন্ধকতা নেইÑ সংকল্প ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই কৃতিত্ব অর্জিত হয়।শেখ হাসিনা বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধীরা প্রত্যেক ক্ষেত্রে অবদান রাখছে এবং এ ক্ষেত্রে ক্রিকেটও কোনো ব্যতিক্রম নয়।প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে, এই টুর্নামেন্ট মানসিক প্রশান্তি আনতে এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সক্ষমতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে দীর্ঘ প্রভাব বিস্তার করবে।
৯ দিনের এ টুর্নামেন্ট শারীরিক প্রতিবন্ধীদের প্রতি মানুষের সম্মিলিত দায়িত্ব সম্পর্কেও সচেতন হতে সহায়তা করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ প্রতিযোগিতা আয়োজনে আইসিআরসি’কে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আগামিতেও এ ধরনের অনুষ্ঠানে তাঁর সরকারের অব্যাহত সমর্থনের আশ্বাস দেন।আইসিআরসি এবং বাংলাদেশ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপি’র যৌথ আয়োজনে ৯ দিনের এ টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হচ্ছে।স¦াগতিক বাংলাদেশ ছাড়াও এতে ইংল্যান্ড, আফগানিস্তান, ভারত ও পাকিস্তান অংশ নিচ্ছে।শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে আজ বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড মুখোমুখি হবে।টুর্নামেন্টের অবশিষ্ট খেলা এবং ১০ সেপ্টেম্বরের সমাপনী বিকেএসপি’তে অনুষ্ঠিত হবে।