দৈনিকবার্তা-ফেনী, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫: ফেনীতে ভোজ্য তৈল ও চাউলের আড়ৎদার ও পাইকারদের বিরুদ্ধে ওজনে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভোগ্য তৈলে ১৪ লিটারি প্রতি টিনে ৩০০ গ্রাম কম, ও চাউলে ৫০ কেজি প্যাকেটে ৫০০ গ্রাম থেকে ৩ কেজি কম দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বছরের পর বছর এ জালিয়াতি চলতে থাকলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন পক্ষ থেকে এ সব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়না। ফলে প্রতারিত হচ্ছে ভোক্তা সাধারণ। অপরদিকে রাতারাতি কোটিপতি বণে যাচ্ছে এসব তৈল ও চাউলের অসাধু আড়ৎদার ও পাইকাররা।
ভোক্তা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ফেনী শহর ব্যবসায়ী কমিটির একটি জরুরী সভা হয়। সভায় ভোজ্য তৈলে কম দেয়া হলে অভিযুক্ত ব্যবসয়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে চিঠি দেয়া হয়।সরেজমিন ঘুরে ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপে জানা গেছে, ফেনী জেলা শহরের ভোজ্য তৈল ব্যবসায়ীরা চট্রগ্রাম ও ঢাকা থেকে ফামওয়েল, সুপারওয়েল, ভেজিটেবলওয়েল ও সোয়াবিনওয়েল ক্রয় করে। ক্রয়কৃত তৈল ফেনী এনে ১৪ লিটার করে টিনের কোটায় ভর্ত্তি করে খুচরা ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে ১১৩০ টাকা হারে। অসাধু ব্যবসায়ীরা এক্ষেত্রে ওজনে ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রাম কম দিয়ে তৈল বর্ত্তি করে টিনের কোটাসহ ১৫ লিটার বলে চালিয়ে দিচ্ছে। সূত্রমতে, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বাজার দর থেকে ১৫ টাকা কমে বিক্রির মাধ্যমে প্রতারণা করছে।
অপরদিকে ফেনী জেলা শহরের সবচেয়ে বড় চাউলের কমিশন এজেন্ট ও আড়ৎদারদের শতাধিক চাউল দোকান রয়েছে ইসলামপুর রোড ও তাকিয়া রোডে। এসব দোকানে প্রতিদিন হাজারো বস্তা চাউল লোড-আনলোড হয়। এখান থেকে জেলার সবকটি উপজেলায় পাইকার, খুচরা ও সাধারণ ভোক্তারা চাউল ক্রয় করে থাকেন। এসব দোকানে প্রতিদিন লেনদেন হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।জেলার ভোক্তাদের চাহিদার সিংহভাগ অংশ মিনিকেট, লতা, পারি পাইজাম চাউল দেশের দিনাজপুর ও বগুড়া, চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে আমদানী করা হয়। অবশিষ্ট চাহিদা মিটাতে ভারত থেকে আমদানী করা হয়।চাউল পাইকার আমদানীকারক আবুল কালাম জানান, বড় বাজারে অবস্থিত দোকান গুলোতে গত ৩৫ বছর যাবৎ তিনি চাউল ব্যবসা করে যাচ্ছেন। পূর্বে ৮৫ থেকে ৯০ কেজি ওজনে পাটের সুতোয় তৈরী বস্তায় চাউল ক্রয়-বিক্রয় হতো। এরপর যানবাহনের সুবিধার জন্য ২০০০ সালের দিকে যোগ হয় ৫০ ও ২৫ কেজি ওজনের চাউলের প্যাকেট বা বস্তা। তিনি জানান, চাউল যানবাহনে উঠা নামানোর কারনে ওজনে চাঊল ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম কম হয়ে থাকে।
কিন্তু ফেনীতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে চাউলে বস্তা প্রতি ওজনে ৫০০ গ্রাম থেকে ৩ কেজি কম দিয়ে ব্যবসা করে ভোক্তাদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে। একসাথে এতো চাউল ওজন মাপের মেশিনের অভাবে মানুষ প্রতিবাদ করে না।খুচরা ক্রেতা পাঁচগাছিয়া গ্রামের মোঃ আলী জানান, ফেনীর তাকিয়া রোডের মেসার্স জিশান এন্টারপ্রাইজ থেকে তিনি গত ৩১ আগষ্ট ১৪৪০ টাকা দিয়ে ৫০ কেজি ওজনের নুর জাহান ব্যান্ডের সুপার ফাইন পারি চাউল ক্রয় করেন। সন্দেহ হলে তিনি চাউল ওজন মাপ দেয়ার অনুরোধ করেন । কিন্তু মালিক হাজী জাফর আহম্মদের ম্যানেজার দোকানে ওজন মাপার যন্ত্র নেই বলে জানান। তিনি ম্যানেজার স্বীকার করেন ওজনে ৩০০ গ্রাম কম হবার সম্ভাবনা আছে। কম ওজনে ভারত থেকে ১৫০ বস্তা চাউল তিনি ক্রয় করেছেন বলে দায়সারা বক্তব্য দেন। উক্ত ভোক্তা পরে বাড়ি যাওয়ার পথে একটি সিমেন্ট দোকানে চাউল মেপে দেখেন ওজনে ৮০০ গ্রাম কম। আনা নেয়া যাতায়াত খরচের কথা চিন্তা করে হয়রানীর ভয়ে পাল্টা প্রতিবাদ করেননি মোঃ আলী।
পাইকার চাউল দোকানে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেত্রকোনা জেলার এক শ্রমিক জানান, ফেনীর দোকানদার মিল মালিককে চাউল ক্রয়ের পূর্বে প্রতি বস্তা ৩০০ গ্রাম থেকে আড়াই কেজি পরিমাণে কম দিয়ে প্যাকেট সেলাই করা ফরমায়েশ/অর্ডার দেয়। পরে যে বস্তা গুলো অতিরিক্ত থাকে সেগুলো তিনি আলাদা বিক্রি করে দেন। শ্রমিক আরো জানায়, ওজনে কম ক্রয় করে প্রতিযোগিতা বাজারে বেশি বিক্রির জন্য বস্তা প্রতি ১০ টাকা কমে বিক্রয় করছেন ফেনীর অনেক অসাধু ব্যবসায়ী। এছাড়া অনেকে রাতে বস্তার সেলাই খুলে কিছু চাউল তুলে নিয়ে সেগুলো আলাদা বিক্রি করে থাকেন।চাউল ব্যবসায়ী ও ফেনী জেলা বিএনপি র সাধারন স¤পাদক জিয়া উদ্দিন মিস্টার জানান, ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ তিনি ইতিপূর্বে শুনেননি। অভিযোগ জানান পর তিনি বিষয়টি সুরাহার আশ্বাস দেন।ফেনী শহর ব্যবসায়ী সমিতি সভাপতি ফারুক হারুন জানান, ইতোমধ্যে ভোজ্য তৈলে ২৫০-৩০০ কম দেয়ার অভিযোগ পেয়ে প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে লিখিত ব্যবস্থা নেয়ার তাগাদা দিয়েছি। চাউলের ব্যাপারেও ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ পেয়েছি, আমরা ব্যবসায়ীরা জরুরী সভা ডাকবো এবং প্রয়োজনে প্রশাসনের সহযোগিতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে গ্রহণ করব।