দৈনিকবার্তা-ঢাকা,১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫: মাত্র দেড় ঘন্টার বৃষ্টিতে আবারো জলাবদ্ধতায় স্থবির হয়ে পড়লো রাজধানী৷ মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে রাজধানীতে টানা প্রায় দেড় ঘন্টা মুষলধারে বৃষ্টিতে ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দেয়৷ ভয়াবহ যানজটে থমকে যায় নগরবাসীর জীবনযাত্রা৷ সারা দেশে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় আরও কয়েক দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ রাজধানীতেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে৷ আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে৷এ দিকে মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে রাজধানীতে টানা প্রায় দেড় ঘন্টা মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়েছে৷ বৃষ্টির বেগ কিছুটা কমলেও একটার সময়ও বৃষ্টি পড়ছিল৷ বৃষ্টির কারণে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, নিচু এলাকা পানিয়ে তলিয়ে যায়৷ ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ে রাজধানীবাসী৷ রাজধানীর সড়কগুলোতে দেখা দেয় তীব্র যানজট৷
আবহাওয়াবিদ রাশেদুজ্জামান বলেন, মঙ্গলবার সারা দিনই বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে৷ তবে বেলা তিনটার পর বৃষ্টির পরিমাণ কমার সম্ভাবনা আছে৷ মৌসুমি বায়ুর কারণে আরও কয়েকদিন বৃষ্টি হবে৷সকালে মুষলধারে বৃষ্টির কারণে মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার, রামপুরা, পুরান ঢাকার কিছু এলাকা ও এখানকার প্রধান প্রধান সড়কগুলো পানিতে ডুবে যায়৷ নগরের রূপসী বাংলা হোটেল ও প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের সামনের সড়কও পানিতে তলিয়ে যায়৷ঝুম বৃষ্টিতে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষকে সড়কের পাশে দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বিপণিবিতানে বৃষ্টি কমার অপেক্ষায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে৷ মহাখালীতে একটি প্রাইভেট কার ও মৌচাক মোড়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে৷ বেলা ১১টার দিকে রাজধানীতে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়৷ প্রায় দেড় ঘন্টা প্রবল বেগে চলে বৃষ্টিপাত৷ এরপর বৃষ্টির বেগ কিছুটা কমে আসে, তবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে৷ প্রবল বৃষ্টিতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, অলি-গলিতে পানি জমে যায়৷ বিভিন্ন সড়কে বিকল হয়ে পড়ে যানবাহন৷দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বৃষ্টির বেগ কমে গেলে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষের ভিড় বেড়ে যায় সড়কগুলোতে৷ প্রায় প্রতিটি সড়কে দেখা দেয় তীব্র যানজট৷ এ সময় যানবাহনে দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হয়েছে নগরবাসীকে৷শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বৃষ্টি কমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা পার্থ প্রতিম৷ বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বৃষ্টি কমার পর একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ওঠেন তিনি৷ পার্থ বলেন, শাহবাগ থেকে ফার্মগেট আসতে তাঁর সময় লেগেছে দেড় ঘন্টারও বেশি৷ একদিকে বৃষ্টি, আরেক দিকে সড়কে জলাবদ্ধতার কারণে অটোরিকশা থেকে নেমে হেঁটে যাওয়াও সম্ভব হচ্ছিল না তাঁর পক্ষে৷
প্রধান সড়কগুলোর মধ্যে বিমানবন্দর সড়কের বনানী অংশে যানজট ছিল বেশি৷ এই সড়কের বেশির ভাগ অংশই পানিতে তলিয়ে যায়৷ এ ছাড়া ফার্মগেট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়ক এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনের সড়কের বিভিন্ন অংশও পানিতে ডুবে যায়৷ ফলে যান চলাচলের গতি কমে যায়৷ বিজয় সরণি ও কারওয়ানবাজার সিগনালে গাড়ির চাপ ছিল বেশি৷ রূপসী বাংলা হোটেলের সামনে পানি জমে যাওয়ায় সেখানে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়৷ মিরপুর রোড, সাতরাস্তা সড়কেও দেখা দেয় তীব্র যানজটের৷ এ ছাড়া রামপুরা থেকে কাকরাইল মোড়, মৌচাক থেকে মগবাজার পর্যন্ত সড়কগুলোতে যানবাহন চলেছে অত্যন্ত ধীর গতিতে৷ এসব সড়কে ভ্যান, রিকশা গর্তে পড়ে দুর্ঘটনায় পড়তে দেখা গেছে৷
মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, ধানমন্ডি, পান্থপথ, গ্রীনরোডসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে যানবাহন থমকে ছিল৷ অ্যাম্বুলেন্সগুলোকেও ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে৷ যানজট মোকাবিলায় ট্রাফিক পুলিশ অনেক এলাকায় উল্টো পথে গাড়ি চলাচলের সুযোগ করে দিয়েছে৷
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেছেন, পানি দ্রুত সরিয়ে দিতে করপোরেশনের নিয়ন্ত্রিত ড্রেনের মুখগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে৷ ওই কর্মকর্তার দাবি, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের মূল ড্রেনগুলো ওয়াসার নিয়ন্ত্রণে৷বৃষ্টির কারণে মতিঝিল, মালিবাগ, মৌচাক, পুরানা পল্টন, নীলক্ষেত, ধানমন্ডি, মগবাজার, রামপুরা ও পুরান ঢাকার কিছু এলাকার প্রধান প্রধান সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যায়৷ জলাবতদ্ধকতার কারণে এসব রাস্তায় গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়৷নগরীর রূপসী বাংলা হোটেল ও প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের সামনের সড়কও পানিতে তলিয়ে গেছে৷ বৃষ্টির কারণে ছুটির পর বাসায় ফিরতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়৷ রিকশা না পেয়ে শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় ফিরেন৷
ভারী বর্ষণে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও নিচু এলাকা পানিয়ে তলিয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়ে রাজধানীবাসী৷ সাধারণ মানুষকে ঘন্টা পর ঘন্টা গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে৷ আবার যারা নির্ধারিত গন্তব্যে যাবার জন্য বাসে উঠেছিলেন, তাদেরকে যানজটের কবলে পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়৷
বিশেষ করে প্রেসক্লাব থেকে বাংলামটর, বনানী থেকে শাহবাগ, মগবাজার, মতিঝিল, রামপুরা ও মালিবাগ এলাকায় যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে৷ ফ্লাইওভারের কাজের জন্য জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হ্ওয়ায় কাকরাইল থেকে মালিবাগ হয়ে মৌচাক থেকে খিলগাঁও রেলগেট পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়৷এছাড়া খানাখন্দ থাকায় বিভিন্ন এলাকায় রিকশা বা বাসের মতো যানবাহন ঠিকমতো চলাচল করতে পারছে না৷ ফলে এসব সড়কের যানবাহন অন্য সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিযে যানজট প্রকট আকার ধারণ করে৷আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, মঙ্গলবার সারা দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে৷ তবে বেলা তিনটার পর বৃষ্টির পরিমাণ কমতে পারে৷ মৌসুমি বায়ুর কারণে আরও কয়েকদিন বৃষ্টি হবে৷ ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে রাজধানীর সোনারগাঁ হোটেল থেকে বিজিএমইএ ভবনের সামনের রাস্তটি৷ বন্ধ হয়ে গেছে যান চলাচল৷ মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে রাজধানীতে এক ঘন্টার বৃষ্টিতে রাস্তাটিতে হাঁটু সমান পানি জমে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়৷ সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিজিএমইএ ভবনের সামনের রেলগেট থেকে পেট্রোবাংলা হয়ে কারওয়ান বাজার মোড় পর্যন্ত হাঁটু সমান পানি জমে গেছে৷ রাস্তায় উইনার পরিবহনসহ কয়েকটি বাস বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়৷ এ রাস্তা বন্ধ থাকায় আশপাশের রাস্তাগুলোতেও ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে৷ এ ছাড়া ফার্মগেট, বিজয় স্মরণি, সংসদ ভবন রোড, আসাদগেটসহ অনেক এলাকাতেই রাস্তায় পানি জমে থাকতে দেখা গেছে৷ খবর মঙ্গলবার সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির পর বেলা সোয়া ১১টার দিকে শুরু হয় মুষলধারে বর্ষণ৷ এরপর প্রধান সড়ক থেকে অলিগলিতে যানজট ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় বলে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা জানান৷পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন সড়ক, কাকরাইল, মত্স্য ভবন মোড়, শান্তিনগর, মিন্টো রোড, মগবাজার, রামপুরা শাহবাগ চত্বর, সায়েন্সল্যাব, বাংলা মোটর, ফার্মগেইট, মহাখালী, মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা ও উত্তরার পথে যানবাহন প্রায় থমকে থাকতে দেখা যায়৷ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনের সড়ক, সংসদ ভবনের দক্ষিণের প্রবেশ মুখ, মানিক মিয়া এভিনিউসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কে পানি জমে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে৷ বেলা সাড়ে ৩টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও মহাখালী ফ্লাইওভারের ওপর যানবাহনের দীর্ঘ জট দেখা যায়৷ সড়কের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানির সঙ্গে নর্দমার কাদা একাকার হয়ে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছানোর পথও কঠিন করে তুলেছে৷
পুলিশের ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম থেকে দুপুরে জানান হয়, বৃষ্টির কারণে রাজধানী জুড়ে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে৷ বিশেষ করে মহাখালী, বিজয় সরণি, বাংলা মোটর, ফার্মগেইট, শাহবাগ, মগবাজার এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সমস্যা হচ্ছে৷রাস্তায় পানি জমে যাওয়ায় ভিআইপি সড়কগুলোতে সিএনজিচালিত বহু অটোরিকশার ইঞ্জিন বিকল হয়ে আটকে থাকতে দেখা গেছে৷ এসব বিকল বাহন যানজট আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা জানান৷ প্রেসক্লাব থেকে সিএনজি অটোরিকশায় করে মহাখালী আসার পথে হাই কোর্টের সামনে তিনি যানজটে পড়েন৷ পরে টিএসসি হয়ে এগোনোর চেষ্টা করলেও ফের আটকে যান৷নাজিম উদ্দিন রোডে বেশ কিছু অটো রিকশা ও প্রাইভেট কারকে বিকল হয়ে আটকে থাকতে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন ৷ মোহাম্মদুপুরের নুরজাহান রোড ও আশেপাশের প্রতিটি সড়কে যানজট দেখেছেন তিনি৷ অনেকে বিকল্প পথে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করায় গলিপথেও যানজটের সৃষ্টি হয়েছে৷তিনি বলেন, টানা বর্ষণ রাস্তায় আটকে পড়া মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে৷ স্কুল-কলেজ ছুটির পর শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন৷মিন্টো রোডে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে কয়েক ঘন্টা ধরে৷ অনেক উল্টোপথে যাওয়ার চেষ্টা করায় ঝামেলা আরও বেড়েছে৷বাংলা মোটরে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক বজলুর রহমান বলেন, বৃষ্টির কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ ফার্মগেইট বিজয় সরণি, সোনারগাঁ লিংক রোড, মানিক মিয়া এভিনিউর পশ্চিম পাশে পানি জমে রয়েছে৷ পানির কারণেই যানজট ছাড়ানো যাচ্ছে না৷রায়ের বাজার থেকে মহাখালী আসার পথে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কের মাঝামাঝি থেকে মিরপুর রোডের সংযোগস্থল পর্যন্ত রাস্তায় (রাপা প্লাজার সামনে) কোমর পানি দেখা যায়৷এছাড়া মানিক মিয়া এভিনিউয়ের মোড়ে চলাচল করতে হচ্ছে হাঁটু পানি ভেঙে৷প্রবল বৃষ্টির মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনের সড়কেও পানি জমে যায়৷ কিছুক্ষণ পর ওই সড়কের পানি নেমে গেলেও যানজট থেকে যায় ৷ফার্মগেইট থেকে সার্ক ফোয়ারা পর্যন্ত সড়কটির দুই পাশে হাঁটুপানি দেখা গেছে৷ উত্তরা থেকে মহাখালী আসার পথে কাকলিতে এক ঘন্টার বেশি সময় যানজটে আটকে থাকতে হয়েছে ৷আরাফাত নামের এক ব্যক্তি ক্যান্টনমেন্ট থেকে গুলিস্তান আসতে গিয়ে ফার্মগেইটে দীর্ঘ সময় ধরে আটকা থাকার কথা জানান৷