দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫: আদালত অবমাননার মামলায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে কঠোরভাবে সতর্ক করে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৩ সদস্যর বেঞ্চ এ রায় দেন।ট্রাইব্যুনালে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর পক্ষে আওয়ামীপন্থী আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ ও তাপস কান্তি বল।আবেদনের পক্ষে ছিলেন খান মো. শামীম আজিজ ও মোরশেদ আহমেদ খান।এর আগে ৯ আগস্ট বিচারকদের নিয়ে করা মন্তব্যের জন্য আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
বিচারকদের নিয়ে কটূ মন্তব্য করায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে রং হেডেড’ বলেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।এর আগেও অবমাননার অভিযোগে দুই দফায় আদালত আসা জাফরুল্লাহর মন্তব্যকে আদালত দেখছে একজন অবিবেচক ব্যক্তির বক্তব্য হিসেবে।তার নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদন মঞ্জুর করে রায়ে বিচারক বলেন, রং হেডেড ব্যক্তি ছাড়া এ ধরনের মন্তব্য কেউ করতে পারে না।ভবিষ্যতে মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে এ ধরনের আচরণ না করতে জাফরুল্লাহকে কড়াভাবে সতর্ক করে দিয়েছে আদালত।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জাফরুল্লাহ এ সময় আদালতে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে ছিলেন। আদালত থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সামনেও তিনি কোনো কথা বলেননি।এ মামলার শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিড বার্গম্যানের সাজায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ৫০ নাগরিকের এক ‘অবমাননাকর’ বিবৃতিকে ঘিরে।জাফরুল্লাহ ছাড়া বাকি বিবৃতিদাতারা ক্ষমা চেয়ে ওই মামলা থেকে রেহাই পান। আর অবমাননায় দোষী সাব্যস্ত করে গত ১০ জুন জাফরুল্লাহকে সাজা দেয় ট্রাইব্যুনাল।শাস্তি হিসাবে তাকে এক ঘণ্টা আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। সেই সঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে একমাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।তবে জাফরুল্লাহ নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তাকে সতর্ক করে দিয়ে ওই দণ্ড মওকুফ করে দেয়।ট্রাইব্যুনালের সেই রায়ের দিন আদালত সাজা ঘোষণার পর জাফরুল্লাহ চৌধুরী রায়ের অনুলিপি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কাঠগড়ায় যাবেন না বলে দীর্ঘসময় অনড় থাকেন। পরে রায়ের কপি হাতে দেওয়া হলে স্বেচ্ছায় কাঠগড়ায় গিয়ে সাজাভোগ করেন এবং পরে আদালতের বাইরে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
সে সময় তিনি বলেন, আজকের আদালত অবমাননার রায়টা তিনজন বিচারকের মানসিক অসুস্থতার প্রমাণ। তিনজন বিচারপতির মানসিক অসুস্থতার প্রমাণ। যেখানে বিচারপতিরা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না, সেখানে ন্যায়বিচার হয় না।যখন তারা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না, তখন যুক্তি থাকে না বলেই তারা আইনের আড়ালে আত্মগোপন করেন। এখানে এই মামলাটার বোঝার বিষয় আছে। আদালত অবমাননার মামলায় তিনটির একটি বিষয় প্রমাণ করতে হয়। স্ক্যান্ডালাইজিং দ্য কোর্ট, কোর্টের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা, অবস্ট্রাকশন অব দ্য অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব দ্য জাস্টিস, বিচারের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা, আদালতের ডিগনিটি ক্ষুন্ন করা।আদেশের সময় এজলাসকক্ষে অভিযুক্তদের দাঁড় করিয়ে রাখাটা অভদ্রতা মন্তব্য করে জাফরুল্লাহ বলেন, যখন রায় পড়েন তখন সকল অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দাঁড় করিয়ে রাখা অর্থহীন। এটা প্রাগৈতিহাসিক, মধ্যযুগীয় ঘটনা। কিন্তু তারা দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। তারপর বলেছেন বয়স, কিন্তু বয়সের সম্মান আমি তাদের কাছে কামনা করি না।
এরপর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল, মুক্তিযোদ্ধা আলী আজগর ও নজরুল ইসলাম এবং গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের সংগঠক কামাল পাশা চৌধুরী ও এফ এম শাহীন গত ৬ জুলাই আদালত অবমাননার এই অভিযোগ দায়ের করেন।অভিযোগের বিষয়ে গত ১২ জুলাই প্রাথমিক শুনানি করে ট্রাইব্যুনাল জাফরুল্লাহকে আদালতে হাজির হয়ে নিজের আচরণের ব্যাখ্যা দিতে বলে। এরপর গত ৯ আগস্ট আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান জাফরুল্লাহ চৌধুরী।এর আগে টকশো’তে মন্তব্যের কারণে আরও একবার অবমাননার অভিযোগে জাফরুল্লাহকে ট্রাইব্যুনালে জবাব দিতে হয়েছিল।