দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩১ আগস্ট: বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী খাতুনের পরিবারকে পাঁচ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দিতে ভারত সরকারকে সুপারিশ করেছে দেশটির মানবাধিকার কমিশন।এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হল- ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তা ছয় সপ্তাহের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে কমিশনের এক চিঠিতে। ওই চিঠিতে বলা হয়, আমরা জানি, সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে খুবই স্পর্শকাতর একটি দায়িত্ব পালন করতে হয়। কিন্তু দায়িত্ব পালনের সময় তাদের অবশ্যই শৃঙ্খলা ও নীতি অনুসরণ করতে হবে।বিএসএফের আদালতে ে লোনীর পরিবারকে আইনি সহায়তা দেওয়া কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এস এম আব্রাহাম লিংকন বলেন, এর মধ্য দিয়ে একটি সত্য প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হল যে, ফেলানী হত্যার শিকার হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই আর্থিক ক্ষতিপূরণের নির্দেশ তারা দিয়েছে। সেইসঙ্গে এর ভিতর দিয়ে আসামির উপর ফৌজদারী দায় যে যুক্তিগ্রাহ্য, তাও নতুন করে প্রমাণিত হল।২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্ত হয়ে বাবার সঙ্গে বাংলাদেশে ঢোকার সময় বিএসএফ সদস্যদের গুলিতে প্রাণ হারায় কিশোরী ফেলানী।
কাঁটাতারের বেড়ায় ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পরে বাংলাদেশ সরকার ও মানবিকার সংস্থাগুলোর কড়া প্রতিবাদে বিচারের ব্যবস্থা হলেও ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বিএসএফের আদালত আসামি বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয়। ফেলানীর পরিবারের আপত্তিতে বিএসএফ মহাপরিচালক রায় পুনর্বিবেচনার আদেশ দিলে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর নতুন করে শুনানি শুরু হয়। কিন্তু পুনর্বিচারে একই আদালত তাদের পুরনো রায় বহাল রাখে।এরপর ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) সহযোগিতায় গত ১৪ অগাস্ট ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট আবেদন করেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম।
আগামী ৬ অক্টোবর এ বিষয়ে শুনানি শুরু হওয়ার কথা রয়েছেভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানীর পরিবারকে পাঁচ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে দেশটির জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের এই অর্থ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কর্মকর্তা জাহিদ হোসেনের বরাত দিয়ে ফেলানী হত্যা মামলার আইনজীবী ও কুড়িগ্রামের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এস এম আব্রাহাম লিংকন বলেন, ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সর্বসম্মতভাবে ফেলানীর পরিবারকে পাঁচ লাখ রুপি বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে দিতে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে। ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, টাকা দিয়ে মেয়েকে ফিরে পাব না। কাজেই আগে মেয়ে হত্যার বিচার চাই। খুনি অমিয় ঘোষের মৃত্যুদণ্ড চাই। হত্যার বিচার টাকা দিয়ে হয় না। আমি ক্ষতিপূরণের দাবি করেছি, তবে আগে ফেলানী হত্যার বিচার হতে হবে। বাবা হিসেবে মেয়ে হত্যার বিচার দেখে যেতে চাই। এর চেয়ে বড় চাওয়া নেই।
ফেলানী হত্যাকাণ্ডের বিষয়য়ে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার হওয়ায় ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বপ্রণোদিত হয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে এ অর্থ পরিশোধ করার নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন আব্রাহাম লিংকন। তিনি বলেন, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশের মধ্যদিয়ে অপরাধীর দায় স্বীকার করা হলো। ফলে আসামি অমিয় ঘোষের নতুন করে বিচারের দ্বার উন্মোচিত হলো।গত ৮ জুলাই বাংলাদেশের আইন ও সালিস কেন্দ্রের মাধ্যমে ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের নির্বাহী পরিচালক কিরীটী রায়ের কাছে একটি আবেদন করেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম। তিনি ভারতের উচ্চ আদালতে ফেলানী হত্যায় ন্যায়বিচার চান। মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ৬ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।কিরীটী রায় বলেন, ভারতের মানবাধিকার কমিশন ক্ষতিপূরণ দেওয়ার যে নির্দেশ দিয়েছেন তা সন্তোষজনক। পাশাপাশি এটি দুঃখজনকও বটে। কেননা, এই নির্দেশে ফেলানী হত্যা নিয়ে কোনো কথা বলা হয়নি।
২০১১ সালে ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় কিশোরী ফেলানী। এ ঘটনার পর বিএসএফের বিশেষ আদালতে অমিয় ঘোষকে অভিযুক্ত করে একটি অভিযোগ গঠন করা হয়। ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করে রায় দেন ওই আদালত। সেই রায় যথার্থ মনে না করায় বিএসএফের মহাপরিচালক রায় পুনর্বিবেচনার আদেশ দেন। দ্বিতীয় দফায় চলতি বছরের ২ জুলাই রায় পুনর্বিবেচনায় অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়।