দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩১ আগস্ট, ২০১৫: গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক ও গণবিরোধী বলে আখ্যায়িত করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান ও সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার এমন অভিমত ব্যক্ত করে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান।বিবৃতিতে তারা বলেন, গত জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে ও ফেব্র“য়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বিইআরসি গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে দাম বাড়ানোর পক্ষে কোনো যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে (ব্যারেল প্রতি মাত্র ৪০ ডলার) জনগণ দেশেও যখন দাম কমার আশা করছিল, ঠিক তখনই তার বিপরীত সিদ্ধান্ত নিয়ে জনগণকে হতাশ করেছে সরকার। আমরা মনে করি, এ সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও গণবিরোধী।
বিবৃতিতে বলা হয়, গ্যাস ও বিদ্যুতের সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রার প্রায় সবকিছুই জড়িত। তাই এ দুয়ের দাম বাড়লে জনজীবনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তথা জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। গ্যাস খাতে সরকারকে কোনও ভর্তুকি দিতে হয় না, লোকসানও নেই। বরং গত পাঁচ বছরে পেট্রবাংলা যেখানে ২০ হাজার ৮০ কোটি টাকা আয় করেছে, সেখানে গৃহস্থালী কাজে এক বার্নার ও দুই বার্নার চুলায় এক লাফে দুশ’ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের প্রতি নিদারুণ অবিচার।এ সিদ্ধান্তের ফলে সিএনজির দাম বেড়ে যাওয়ার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সরাসরি গণপরিবহনের ওপর। এতে জনসাধারণের মাথাপিছু ভাড়া বেড়ে যাবে এবং পরিবহন খাতে নৈরাজ্য সৃষ্টির আশঙ্কাও রয়েছে।তারা বলেন, বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই । বিদ্যুৎ খাতে সিস্টেম লসের নামে যে চুরি ও দুর্নীতি আছে তা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। একই সঙ্গে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে জ্বালানি তেলের দামের সমন্বয় করলে মানুষের জীবনযাত্রার ওপর চাপ কিছু কমে আসত। কিন্তু তা না করে তথা জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র হিসেবে জনমুখী সিদ্ধান্ত না নিয়ে বিপরীত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।তারা সুজন-এর পক্ষ থেকে সরকারের নিকট অবলিম্বে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান।
প্রসঙ্গত,আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কমার পরও গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাস ও বিদ্যুতে দাম বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুতের দাম গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে ২ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং গ্যাসের দাম গড়ে ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সার ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়া সব ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বেড়েছে।বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কাওরান বাজারে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কার্যালয়ে এ ঘোষণা দেন কমিশনের চেয়ারম্যান এআর খান।এ মূল্যবৃদ্ধি আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে। বর্ধিত মূল্য অনুসারে দুই চুলার গ্যাসের মূল্য হবে ৬৫০ টাকা এবং এক চুলায় হবে ৬০০ টাকা। যা আগে ছিল যথাক্রমে ৪৫০ ও ৪০০ টাকা। গ্যাসের দাম গড়ে ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং বিদ্যুতের দাম ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেড়েছে।গ্যাসের মাসিক বিল ২০০ টাকা বাড়িয়ে এক চুলার জন্য এখন ৬০০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৬৫০ টাকা নির্ধারিত হয়েছে।গৃহস্থালিতে মিটারভিত্তিক গ্যাসের বিল প্রতি ঘনমিটার ৫ টাকা ১৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭ টাকা করা হয়েছে।এদিকে সঙ্কুচিত প্রাকৃতিক গ্যাসে (সিএনজি) প্রতি ইউনিটে (ঘনমিটার) দাম বেড়েছে ৫ টাকা। সে হিসাবে, প্রতি ইউনিট আগে ছিল ৩০ টাকা এখন হবে ৩৫ টাকা।
চা বাগানে গ্যাসের বিল ইউনিট প্রতি বেড়ে ৬ টাকা ৪৫ টাকা এবং শিল্পকারখানায় বেড়ে ৬টা ৭৪ পয়সা করা হয়েছে। তবে সার কারখানা ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম আগের মতোই আছে। যেখানে সার কারখানা ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে ছিল যথাক্রমে ২টাকা ৫৮ পয়সা ও ২টাকা ৮২ পয়সা।অবশ্য ক্যাপটিভ পাওয়ারপ্ল্যান্টে গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিট ৮ টাকা ৩৬ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। আগে ছিল ৪টাকা ১৮ পয়সা। আর বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ইউনিট প্রতি বাড়ানো হয়েছে ১১টাকা ৩৬ পয়সা।অপরদিকে বিদ্যুতের মূল্য লাইফ লাইন ক্রেডিটের (নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য) ক্ষেত্রে বাড়েনি (শহরে বিল ইউনিট প্রতি ৩ টাকা ৩৩ পয়সা এবং গ্রামে ৩ টাকা ৩৬ পয়সা)।গ্রাহক পর্যায়ে ১-৭৫ ইউনিটের জন্য নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ টাকা ৮০ পয়সা; ৭৩-২০০ ইউনিটে বেড়ে ৫ টাকা ১৪ পয়সা, আগে ছিল ৫ টাকা ১ পয়সা; ২০১-৩০০ ইউনিটে ৫ টাকা ৩৬ পয়সা, আগে ছিল ৫ টাকা ১৯ পয়সা; ৩০১-৪০০ ইউনিটের মূল্য আগে ছিল ৫ টাকা ৪২ পয়সা, এখন হবে ৫ টাকা ৬৩ পয়সা; ৪০১-৬০০ ইউনিটের জন্য ৮ টাকা ৫১ পয়সা থেকে বেড়ে ৮ টাকা ৭০ পয়সা; ৬০০ ইউনিটের উপরে ৯ টাকা ৯৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৯ টাকা ৯৮ পয়সা করা হয়েছে। সেচ পাম্পের জন্য শহরে দাম ছিল ইউনিট প্রতি ২ টাকা ৫১ পয়সা, তা বেড়ে হয়েছে ৩ টাকা ৮২ পয়সা।
আর পল্লীবিদ্যুতে বিরতণ কোম্পানি ভেদে ৩ টাকা ৩৯-৯৬ পয়সা থেকে বেড়ে ৩ টাকা ৮২ পয়সা করা হয়েছে।ক্ষুদ্র শিল্পে বিদ্যুতের দাম ৭ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বেড়ে ৭ টাকা ৬৬ পয়সা; অনাবাসিক বাতি ও বিদ্যুতে (দাতব্য, মসজিদ, মন্দির, ক্লাব ইত্যাদি) ৪ টাকা ৯৮ পয়সা বেড়ে ৫ টাকা ২২ পয়সা; রাস্তার বাতির জন্য ৬ টাকা ৯৩ পয়সা থেকে বেড়ে ৭ টাকা ১৭ পয়সা করা হয়েছে।বাণিজ্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিদ্যুতে দাম ইউনিট পুতি ৯ টাকা ৫৮ পয়সা থেকে বেড়ে ৯ টাকা ৮০ পয়সা। বৃহৎ শিল্প :১১ কিলোভোল্টের ৭ টাকা ৩২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭ টাকা ৫৭ পয়সা; ৩২ কিলোভোল্টের ৬ টাকা ৯৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭ টাকা ৩৫ পয়সা; ২৩০ কিলোভোল্টের ৭ টাকা ২৫ পয়সা; ৩৩ কিলোভোল্টের জন্য ৭ টাকা ২০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭ টাকা ৪৯ পয়সা করা হয়েছে।বর্তমানে গ্রাহক পর্যায়ে বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানির জন্য বিভিন্ন মূল্য হার ছিল। তবে এবার সবার জন্য একই হার নির্ধারণ করা হয়েছে।বিদ্যুতের পাইকারি মূল্যও বেড়েছে। সব বিতরণ কোম্পানির জন্য গড়ে বাড়ানো হয়েছে ২৩ পয়সা। একই সঙ্গে সঞ্চালন চার্জ বাড়ানো হয়েছে ৫ পয়সা ।