high-court-765x510

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩০ আগস্ট, ২০১৫: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের আলোচিত ৫৭ ও ৮৬ ধারা বাতিল চেয়ে এক আইনজীবীর করা রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট।বিচারপতি কাজী- রেজা উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেয়। এদিকে, ওই ধারা বিলুপ্ত করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানাতে গত ২৭ অগাস্ট সরকারের তিন সচিবকে উকিল নোটিস দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও লেখকসহ ১১ ব্যক্তি। তারাও রোববার হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেছেন।এছাড়া রোববার ৫৭ ধারার বৈধতা নিয়ে এক ব্যক্তির করা আরেকটি রিট আবেদনের ওপর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়েছে। সোমবার আবারও আদালত বিষয়টি শুনবে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ওই দুটি ধারা বাতিলে গত ২৬ অগাস্ট মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব ও তথ্য সচিবকে উকিল নোটিস পাঠান আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। তাতে সাড়া না পেয়ে পরদিন তিনি এই রিট আবেদন করেন। রোববার আদালতে ইউনুছ আলী আকন্দ নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।পরে তাপস কুমার বিশ্বাস বলেন, সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে। রিট আবেদনটি অপরিপক্ক বলে আদালত তা খারিজ করে দিয়েছে। অন্যদিকে ৫৭ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বুধবার অপর রিট আবেদনটি করেন রাজধানীর পল্লবীর এক ব্যক্তি। পরদিন আবেদনটি বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের বেঞ্চে নিয়ে যায় আবেদনকারীপক্ষ। এর ধারাবাহিকতায় রোববার বিষয়টি শুনানির জন্য আসে।আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিকী ও আইনজীবী শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল অমিত তালুকদার ও সহকারী অ্যার্টনি জেনারেল নূসরাত জাহান।

পরে অমিত তালুকদার বলেন, অ্যার্টনি জেনারেল রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করবেন বলে সময় চাওয়া হয়। আদালত সোমবার সোয়া ২টায় শুনানির সময় রেখেছেন।আইনজীবী শিশির মনির বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের আইনের ৫৭ ধারায় প্রশাসনকে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩২ এবং ৩৯ ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে শুনানিতে বলা হয়।পল্লবীর বাসিন্দা জাকির হোসেনের করা এই রিট আবেদনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাকে সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩২ এবং ৩৯ ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলা হয়েছে। ওই ধারা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে রুল চেয়েছেন তিনি।রিট আবেদনে আইন সচিব এবং যোগাযোগ ও প্রযুক্তি সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে। রিট আবেদনকারী জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় করা একটি মামলার কার্যকমও স্থগিতের আর্জি জানানো হয়েছে এতে।তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে চলতি বছরের ২৪ জুলাই জাকিরের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় এই অভিযোগ দায়ের করেন তার সাবেক স্ত্রী। ফেইসবুকে ছবি এবং বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে লেখালেখি করে হয়রানি ও হেয় করার অভিযোগ আনা হয়েছে ওই মামলায়।এ মামলায় গত ১০ অগাস্ট বিচারিক আদালত থেকে জামিন পান জাকির। এরপর ২৬ অগাস্ট রিট আবেদনটি নিয়ে হাই কোর্টে আসেন।

২০০৬ সালে পাস হওয়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৯ ও ২০১৩ সালে দুই দফা সংশোধন করা হয়। সর্বশেষ সংশোধনে সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর থেকে ১৪ বছর কারাদণ্ড করা হয়। আর ৫৭ ধারার অপরাধকে করা হয় অজামিনযাগ্য।৫৭ ধারায় বলা হয়েছে- ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কোনো ব্যক্তির তথ্য যদি নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ করে, এতে যদি কারও মানহানি ঘটে, রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়, তা হবে অপরাধ। এর শাস্তি অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক ১ কোটি টাকা জরিমানা।আর ৮৬ ধারায় বলা হয়েছে, এ আইনের অধীনে সরল বিশ্বাসে করা কোনো কাজের কারণে কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে সে জন্য সরকারি কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা বা কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।ওই আইন হওয়ার পর থেকেই বিষয়টিকে বাক স্বাধীনতা পরিপন্থি হিসেবে চিহ্নিত করে তা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা।

সম্প্রতি ফেইসবুকে একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীকে নিয়ে মন্তব্যের কারণে এক সাংবাদিককে এ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করার পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা গ্রেপ্তারের ওই ঘটনাকে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার অপব্যবহার হিসেবে চিহ্নিত করেন। সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকেও ৫৭ ধারা বাতিলের দাবি জানানো হয়।ওই ধারা বিলুপ্ত করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানাতে গত ২৭ অগাস্ট সরকারের তিন সচিবকে উকিল নোটিস দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও লেখকসহ ১১ ব্যক্তি। তারাও রোববার হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেছেন।

তাদের পক্ষে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদনটি জমা দেন।তিনি বলেন,রিট আবেদনে ৫৭ ধারা বিলুপ্তির জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ৫৭ ধারা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না- এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে।রিট আবেদনে আইন সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব এবং স্বরাষ্ট্র সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।৫৭ ধারায় কতগুলো মামলা ঢাকার তথ্য ও প্রযুক্তি ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন তার একটি তালিকাও আদালতে দাখিল করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে বলে জানান জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।তিনি বলেন, সোমবার এ আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।এই ১১ জন হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আহমেদ কামাল, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আকমল হোসেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক গীতি আরা নাসরিন ও ফাহমিদুল হক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান, সমাজবিজ্ঞানের সামিনা লুৎফা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনু মুহাম্মদ, ঢাকার বাসিন্দা আব্দুস সালাম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সাংস্কৃতিক কর্মী অরূপ রাহী ও লেখক রাখাল রাহা। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে ৫৭ধারার বৈধতা নিয়ে তিনটি রিট দায়ের হলো। এর মধ্যে একটি রিট অপরিপক্ক’ বলে খারিজ এবং একটি রিটের আংশিক শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া বলেন, বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো.আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রিটের শুনানি হতে পারে। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।এর আগে ২৭ আগস্ট সকালে ৫৭ ধারা বিলুপ্তিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন ১১জন শিক্ষক ও লেখক।