দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৯ আগস্ট: মক্কা শরীফের আদলে কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চান পরিবেশবাদীরা। আর তা হলেই নগরের প্রতিটি এলাকায় বর্জ্য ফেলার সময় ও স্থান নির্ধারণ করা থাকবে। নিয়ম না মানলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা থাকবে। শনিবার রাজধানীতে ধানমণ্ডি কলাবাগানের পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন তাঁরা। পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক আবদুস সোবহানের সভাপতিত্বে সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পবার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক লেলিন চৌধুরী।
এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আসলাম খান, সহ-সম্পাদক আবুল হাসনাত ও স্থপতি শাহীন আজিজ। পবা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় আলোচকেরা বলেন, ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে প্রতি বছরই ঢাকা মহানগরসহ দেশের সর্বত্র কোরবানি ও এর বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতার অভাবে মারাত্মক পরিবেশ দূষণের সৃষ্টি হয়। সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ অবস্থা থেকে নগর ও নগরবাসীকে রক্ষা করার পাশাপাশি কোরবানির বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করা সম্ভব।
আলোচকেরা আরও বলেন, পবিত্র মক্কাসহ বিভিন্ন স্থানে পশু জবাইয়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে রয়েছে। সেখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ জনশক্তির মাধ্যমে ধর্মীয় নির্দেশনা অনুযায়ী পশু কোরবানি করা হয়। এর ফলে দুর্গন্ধ ছড়ানো, রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটা, পশুর চামড়ার যথাযথ সংরক্ষণ, বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। বক্তারা বলেন, সরকার ঢাকা মহানগরীর ৩৯৩টি স্থানকে কোরবানির জন্য নির্ধারণ করেছে। এটি একটি অগ্রগতি। ঈদের আগেই নগরের কোথায় কোথায় বর্জ্য কখন ফেলা হবে সিটি করপোরেশনকে তা চিহ্নিত করে দিতে হবে।
এ বিষয়ে মসজিদের ইমাম ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে জনগণকে জানাতে হবে। নগরে অনেক নাগরিক আছেন যাঁরা অনেক টাকা খরচ করে কোরবানি দেন, কিন্তু বর্জ্য ফেলার জন্য ন্যূনতম দায়িত্ব নেন না বা অর্থ খরচ করতে চান না। এ জন্য সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নাগরিকদের মধ্যে দায়িত্বশীলতা গড়ে তুলতে হবে। প্রতিবছর ঢাকা শহরে প্রায় ৩০ লাখ গরু এবং তার সমসংখ্যক খাসি কোরবানি করা হয়। কোরবানির পর এসব পশুর বর্জ্যগুলোকে ঢাকা থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে গিয়ে সারে রূপান্তরিত করার ব্যবস্থা নিলে রোগ, দুর্গন্ধমুক্ত পরিবেশ তৈরিসহ নানা সমস্যার সমাধান হবে।আগামী ঈদ-উল আজহাকে সামনে রেখে বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) উদ্যোগে আয়োজিত ‘কোরবানি ব্যবস্থাপনা ও মক্কা মডেল’ বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব বিষয় উঠে এসেছে।
এতে পশু জবাইয়ের নির্দিষ্ট স্থান না থাকা, অদক্ষ লোক দিয়ে পশু জবাই, পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে অজ্ঞানতা, পশুর রক্ত, গোবর, হাড় ও অন্যান্য উচ্ছিষ্ট অংশ ড্রেনে ফেলাসহ কোরবানির আগেপরে সৃষ্ট নানা সমস্যা তুলে ধরেন বক্তারা।সমস্যা সমাধানে কিছু সুপারিশ তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবু নাসের বলেন, কোরবানির সময় সারাশহরে দুর্গন্ধ দূর করতে যে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা হয়, সেগুলো ঢাকার আশেপাশের নদী, জলাশয়গুলো ব্যাপকভাবে দূষিত হয়। সে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে সরকারকে।তিনি বলেন, রাজধানী শহরের বাসিন্দাদেও অনেকেই প্রতিযোগিতা করে একাধিক পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। এটা না করে প্রত্যেকের নিজ নিজ গ্রামে যদি একাধিক কোরবানি দেওয়া হয়, এতে গ্রামের মানুষদের আয় বৃদ্ধির উৎস তৈরি হতে পারে। কোরবানির বর্জ্যগুলোকে আলাদা করে ঢাকার অদূরে নিয়ে সারে রূপান্তরিত করার ব্যবস্থা নিলে বর্জ্যগুলো সম্পদে পরিণত হতে পারে, যা সরকারের আয়ের একটি বড়খাত হতে পারে।
চেয়ারম্যান আরো বলেন, মাংস সংগ্রহ বা মাংস বিতরণের সময় আমরা সাধারণত এবাড়ি ওবাড়ি দিয়ে থাকি। কিন্তু সরকার এবং সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় যদি সমাজের মুরুব্বি এবং প্রতিনিধিদের মধ্যে এই আইনটি চালু করা যায় যে, সব মানুষ সমভাবে মাংস পাওয়া বা বিশেষ করে গরিব মানুষজনকে মাংস বিতরণ করা, তাহলে সবার জন্য মাংস নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।এদিক থেকে সৌদির মক্কা শহরকে উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরে তিনি বলেন, কোরবানির নিয়মাবলীর জন্য আদর্শ হলো মক্কা শহর। সেখানে স্লোটার হাউস রয়েছে, যাতে কোরবানির পশুতে রোগজীবাণুমুক্ত রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করে বাজারে ছাড়া হয়।সরকারের উচিত বাংলাদেশেও এ ধরনের আইন চালু করা, যাতে রোগজীবাণুমুক্ত পশুর মাংস নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।আবু নাসের বলেন, নির্ধারিত পশু জবাইয়ের স্থানে সংগৃহীত বর্জ্য (রক্ত, গোবর, নাড়িভুড়ি, খুর, হাড়, লেজের চুল ইত্যাদি) কেন্দ্রীয়ভাবে সংগ্রহ করে শিল্প উৎপাদনে রূপান্তরের দায়িত্ব সরকারের গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
এছাড়াও ধর্মীয় নির্দেশনা যথাযথভাবে জানিয়ে জনসাধারণের সচেতনতা বাড়ানোর দায়িত্ব অবশ্যই ধর্ম মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। কোরবানির সময় পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের বড় ধরনের ভূমিকা আছে বলে উল্লেখ করেন পবা’র নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুস সোবহান।তিনি বলেন, বাজারে কোন ধরনের পশু বেচাকেনা হচ্ছে, সেগুলো রোগমুক্ত কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত করতে পশুডাক্তার নিয়োগ করা প্রয়োজন। এ দায়িত্ব পশুসম্পদ অধিদফতরের। কিন্তু বরাবরই এ অধিদফতর থেকে বিষয়গুলোর ওপর জোর দিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।এছাড়াও ইসলামী ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ঈদ-উল-আজহা অনুষ্ঠিত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে এলাকার মসজিদগুলোতে কোরবানির আগে-পরে বিভিন্ন নির্দেশাবলী ও সচেতনতামূলক তথ্য প্রচার করলেও বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।