দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৯ আগস্ট, ২০১৫: লিবীয় উপকূলের কাছে কয়েকশ অভিবাসন প্রত্যাশীকে নিয়ে দু’টি নৌকা ডুবির ঘটনায় জীবিত উদ্ধার হওয়া ৪৭ জন বাংলাদেশীকে দেশে ফেরত আনা হবে লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা একথা জানিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা জানান, নিহতদের মধ্যে শিশুসহ সাতজন বাংলাদেশী রয়েছেন।বিবিসি বাংলা জানায়, লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম বিষয়ক কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ডুবে যাওয়া নৌকা দু’টিতে বিভিন্ন দেশের কয়েকশো অভিবাসন প্রত্যাশীর সঙ্গে শিশু এবং মহিলাসহ ৫৪জন বাংলাদেশি ছিল। এর মধ্যে ৪৭জন বাংলাদেশিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি জানান, শিশুসহ নিহত সাতজন বাংলাদেশির মৃতদেহ দূতাবাস কর্মকর্তাদের দেখতে দেয়া হয়নি। কারণ মৃতদেহ দেখার জন্য এখনও কোন বিদেশি কূটনীতিককে সুযোগ দেয়া হচ্ছে না।আশরাফুল ইসলাম আরও জানিয়েছেন, জীবিত উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশীদের মধ্যে মহিলাদের বাংলাদেশ দূতাবাসের হেফাজতে নেয়া সম্ভব হয়েছে। বাকিরা ত্রিপোলি কর্তৃপক্ষের ডিটেনশন সেন্টারে রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার লিবিয়া উপকূলে শরণার্থী বোঝাই দুটি নৌকা ডুবে যায়। প্রথম যে নৌকাটি বৃহস্পতিবার সকালে সাহায্যের জন্য সংকেত দেয় তাতে প্রায় ৫০ জন শরণার্থী ছিল। দ্বিতীয় যে নৌকাটি পরে ডুবে যায় তাতে শরণার্থী ছিল সাড়ে চারশ’। তিউনিসিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশের লিবিয়া দূতাবাসের কর্মকর্তা চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, লাইফ জ্যাকেট পরে থাকায় বেশিরভাগ বাংলাদেশি অভিবাসন প্রত্যাশীকেই জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। জানা গেছে, নৌকার তলদেশে ফুটো থাকায় যাত্রার প্রায় এক ঘণ্টা পর ত্রিপোলির জুয়ারা বন্দরের কাছে নৌকা দুটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় ২০১ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। সমুদ্রপাড়ি দেবার জন্য অনুপোযোগী নৌকায় লিবিয়া থেকে ইতালিতে যেতে গিয়ে চলতি বছরের এ পর্যন্ত দুই হাজারের মতো অভিবাসন প্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে। লিবিয়া উপকূলের কাছে প্রায় ৫০০ অভিবাসন প্রত্যাশীকে নিয়ে ডুবে যাওয়া নৌযান দুটি থেকে জীবিত উদ্ধার হওয়া ৪৭ বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার সাহায্য নেয়া দূতাবাসের শ্রমবিষয়ক কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানিয়েছেন, নৌকা দুটিতে বিভিন্ন দেশের অভিবাসন প্রত্যাশীদের সঙ্গে ৫৪ জন বাংলাদেশি ছিলেন।উদ্ধার হওয়া মৃতদেহগুলোর মধ্যে ৭ বাংলাদেশি রয়েছেন বলে জানান তিনি।তিনি আরো বলেন, জীবিত উদ্ধার বাংলাদেশিদের মধ্যে নারীদেরকে দূতাবাসের হেফাজতে আর বাকিদেরকে ত্রিপোলির ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে।এদিকে, এ ঘটনাকে ভয়ঙ্কর ও হৃদয়বিদারক অ্যাখ্যা দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন।অভিবাসন প্রত্যাশিদের মৃত্যু ঠেকাতে ইউরোপের দেশগুলোকে সমন্বিতভাবে একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। সম্প্রতি ইউরোপ যাওয়ার পথে শত শত অভিবাসীর মৃত্যুর ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। গত বৃহস্পতিবার দেশান্তরী প্রায় ৫০০ মানুষকে নিয়ে ইটালি হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টায় লিবিয়ার জোওয়ারা শহরের কাছে ভূমধ্যসাগরে নৌকা দুটো ডুবে যায়।
এর মধ্যে প্রথম যে নৌকাটি থেকে সাহায্য চেয়ে সংকেত পাঠানো হয়, তাতে প্রায় একশ জন ছিলেন। আর ঘণ্টাখানেক পর ডুবে যাওয়া দ্বিতীয় নৌকায় চারশর বেশি আরোহী ছিলেন বলে বিবিসির খবর। রেড ক্রিসেন্ট কর্মকর্তা ইব্রাহিম আল আতৌশির বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, তারা এ পর্যন্ত ৮২ জনের মৃতদেহ পেয়েছেন। ১৯৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে জীবিত অবস্থায়। এখনও ২০০ জনের বেশি নিখোঁজ রয়েছেন। ডুবে যাওয়া নৌকা দুটির আরোহীদের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ, পাকিস্তান, সিরিয়া ও মরক্কোর নাগরিক ছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ার অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস কাজ করছে তিউনিসিয়া থেকে। আর যে উপকূলে নৌকা ডুবেছে, সেই জোওয়ারায় আছেন বাংলাদেশ দূতাবাসের লেবার কাউন্সেলর আশরাফুল ইসলাম। আশরাফুল ইসলাম বলেন, এক নৌকা থেকে উদ্ধার ৩১ বাংলাদেশিকে লিবিয়ার পুলিশ আটক করেছিল। তাদের মধ্যে দুটি পরিবারকে আমরা আইনি সহায়তা দিয়ে ছাড়িয়ে এনেছি। অন্য বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রেও সহায়তা দেয়া হবে।
বাংলাদেশের লিবিয়া দূতাবাসের শার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স মোজাম্মেল হক বলেন, যাদের উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে দুটি পরিবার সিরত থেকে ইটালি যাওয়ার চেষ্টা করছিল। দীর্ঘদিন ত্রিপলিতে থাকলেও যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে তারা সিরতে সরে যেতে বাধ্য হন এবং ঝুঁকির কথা জেনেও সাগর পথে ইউরোপে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপমুখী অভিবাসনের ভয়ঙ্কর চেষ্টায় হাজারো মানুষের মৃত্যুর খবর গত দুই বছরে বহুবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম আট মাসেই সাগরে ডুবে অন্তত ২ হাজার ৪০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জাতিসংঘের তথ্য।জাতিসংঘ বলছে, এই সময়ে অন্তত এক লাখ অবৈধ অভিবাসী ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইটালিতে পৌঁছাতে পেরেছেন। আরও এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ ইউরোপে ঢুকেছে গ্রিস হয়ে। গত বুধবার লিবিয়া উপকূলে দুর্ঘটনায় পড়া একটি জাহাজের খোলে ৫১ জনের লাশ পাওয়া যায়। ওই জাহাজ থেকে চারশর বেশি মানুষকে জীবিত উদ্ধার করে সুইডিশ কোস্ট গার্ড। ওইদিনই ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করা হয় অন্তত তিন হাজার মানুষকে।এর আগে গত শনিবার লিবিয়া উপকূল থেকে ৪ হাজার ৪০০ অবৈধ অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়।ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, লেবার কাউন্সেলর আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল উদ্ধার বাংলাদেশিদের চিকিৎসা ও মানবিক সহায়তার দিকটি দেখভাল করছেন। এছাড়া সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য দূতাবাস একটি সেল খুলেছে দূতাবাস।