vvvv_158117

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৮ আগস্ট: সরকারি চাকুরিজীবীদের বেতন-ভাতা বাড়ার অজুহাত দিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোকে অযৌক্তিক এবং অন্যায় বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।তাদের দাবি, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম কমায় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচও কমে আসার কথা। সে অনুযায়ী কমার কথা বিদ্যুতের দামও।তাই উল্টো বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণ স্পষ্ট করতে সরকারের প্রতি দাবি ভোক্তাদের। পাশাপাশি, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ার যে প্রভাব দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় পড়বে তা নিয়ে এখনই বাড়তি চাপ অনুভব করছেন তারা।

গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ার ফলে সাধারণ মানুষের কপালে যেন বাড়তি চিন্তার রেখা। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আয় বাড়ার যে প্রক্রিয়া চলছে, তাতে মানুষের আয়ে কোন প্রভাব ফেলবে না। তবে এ অজুহাতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের যে দাম বাড়ানো হলো, তাতে বাড়তি ব্যয়ের বোঝা তাদের ওপর ঠিকই চাপবে।সরকারি কর্মজীবী ছাড়াও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যারা চাকুরি করেন, তাদেরও অভিযোগ অনেকটা একই রকম। তাদের প্রশ্ন মাত্র ১২-১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের আয়ের হিসেব করে, সবার ওপর বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বাড়তি দাম চাপিয়ে দেয়া অযৌক্তিক।এর আগে ২০১৪ সালে সরকার যখন বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছিল তখন কারণ হিসেবে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিকে সামনে আনা হয়েছিলো। সেই ১৩০ ডলারের জ্বালানি তেল এখন ৪০ ডলারেরও নিচে। সে অনুযায়ী, বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমার পাশাপাশি, দামও কমার কথা। কিন্তু উল্টো বাড়ানো হল।

এমনিতেই সাম্প্রতিক সময়ে শাক-সবজি, মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সব কিছুর দামই ঊর্ধ্বমুখী। সাধারণ মানুষের আশঙ্কা, গ্যাস বিদ্যুতের বাড়তি দাম, জিনিস পত্রের দামের উপর যে প্রভাব ফেলবে, সেই চাপ তারা কতটা বহণ করতে পারবে? দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহবান ভোক্তাদের। এদিকে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও দেশের বাজারে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো অযৌক্তিক বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়টিকে অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানান।

অন্যদিকে, সরকার গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করে ১ সেপ্টেম্বর থেকে তা কার্যকরের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা জনজীবনে সংকট সৃষ্টি করবে বলে মন্তব্য করেছেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুল্লাহ তারেক।শুক্রবার এক বিবৃতিতে তারা এ মন্তব্য করেন।ঐক্য ন্যাপের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, বর্তমানে বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য ক্রমগত হ্রাস পেলেও এবং দেশে গ্যাসের মজুদ যথেষ্ট থাকলেও হঠাৎ গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো অযৌক্তিক। এমনিতেই নিত্যপণ্যের দাম মানুষের নাগালের বাইরে, তার ওপর এই মূল্যবৃদ্ধি মরার ওপর প্রচণ্ড চাপ হয়ে উঠবে।তারা বলেন, এই মূল্য বৃদ্ধির ফলে যানবাহনে ভাড়া ও পণ্য পরিবহন খরচ বৃদ্ধির জন্য নিত্যপণ্যের দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে, একই সঙ্গে বৃদ্ধি পাবে বাড়ি ভাড়াও।

দেড় বছরের মাথায় সরকার আবারও গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ গ্রাহকেরা।গ্রাহকরা দাম বাড়ানোরএ প প্রক্রিয়াটিকে মরার ওপর খাড়ার ঘা বলেও আখ্যা দিয়েছেন।বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই তারা এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।ওইদিন বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। ব্রিফিংয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে ২.৯৩ শতাংশ, আর গ্যাসের দাম ২৬.২৯ শতাংশ। ১ সেপ্টেম্বর থেকে এটি কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়।দাম বাড়ানোর বিষয়ে রাজধানীর পূর্ব রামপুরার বাসিন্দা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রোকেয়া খানম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি এর মধ্যে জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি একেবারে মরার ওপর খাড়ার ঘা ছাড়া আর কিছুই না।

সরকার যদি প্রতিবছর এভাবে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ায় তাহলে আমাদের মত নিম্ন আয়ের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়বে।তিনি আরও বলেন, একটা কিছুর দাম বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে বাড়িভাড়াসহ সব কিছুর দাম বেড়ে যায়। কিন্তু সেই অনুপাতে আমাদের উপার্জন তো বাড়ে না।মিরপুরের পল্লবী এলাকার ফারজানা বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ছে কিন্তু আমাদের আয় তো বাড়ছে না। আর ঢাকা শহরে এমনিতেই জীবন যাপনে ব্যয় অনেক বেশি। এর মধ্যে এই দুই জিনিসের দাম বাড়ল মানে রিকশা ভাড়াও বেড়ে যাবে!এদিকে জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্ত ডত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (মার্কসবাদী)। বামপন্থী এ রাজনৈতিক সংগঠন এক বিবৃতিতে বলেছে ক্ষমতাসীন সরকার অযৌক্তিকভাবে জ্বালানি মূল্য বাড়িয়েছে। ক্রমাগত দুর্ভোগ বাড়ানো এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।

উল্লেখ্য, বিদ্যুতের দাম গড়ে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ হারে আর গ্যাসের দাম ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ হারে বাড়িয়েছে সরকার। এতে গ্যাস ব্যবহারে এক চুলার কানেকশনে ৬০০ টাকা, আর দুই চুলার কানেকশন ৬৫০ টাকা হবে। যে দর এর আগে ছিল যথাক্রমে ৪০০ টাকা ও ৪৫০ টাকা।এছাড়া বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ১ থেকে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত আগের দর অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে ৫০ থেকে ৭৯ ইউনিট খরচে ইউনিট প্রতি ২৭ পয়সা বেড়ে ৩ দশমিক ৫৩ টাকা থেকে ৩ দশমিক ৮০ টাকা করা হয়েছে।এর আগে ২০১৪ সালের মার্চে বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা দাম বাড়ানো হয়। আর গ্যাসের দাম সর্বশেষ বাড়ে (সিএনজি) ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর।