দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৮ আগস্ট: ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও মেঘনার পানি কমতে থাকালেও এখনো কিছু কিছু পয়েন্টের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে রয়েছে লক্ষাধিক মানুষ। এদিকে, পানি কমলেও নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে কুড়িগ্রাম, ভোলা মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে। গত কয়েকদিন ধরে প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি এবং টানা বর্ষণের ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দিয়েছে বন্যা। প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। বন্যার্তদের কাছে এখনও সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ পৌঁছেনি। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বন্যার্ত মানুষেরা। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘন্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।বৃহস্পতিবার রাতে ভাঙ্গন রোধে অস্থায়ীবাধ তৈরি করা হলেও তা ভেঙ্গে দরবস্ত ও তালুক কানুপুর ইউনিয়ন নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। মাছের ঘের, আমন ফসল, শাক সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের খেত তলিয়ে গেছে।গত কয়েকদিনে ৫ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে ভোলাতেও। এদিকে,খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে দুর্ভোগ বেড়েছে বানভাসী মানুষের।গত পাঁচদিনে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গনে শতাধিক দোকানপাট, ঘরবাড়ি, মসজিদ ও ঘাট বিলীন হয়ে গেছে।ব্র“হহারা হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ।জামালপুরে বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনার পানি কিছুটা কমলেও এখোনো বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে।একই অবস্থা, মুন্সীগঞ্জ, বগুড়া, নওগা ও লমনিরহাটেরও। এসব জায়গায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। পানিবন্দি হয়ে রয়েছে কয়েক হাজার মানুষ।
ভোলায় মেঘনার ভাঙ্গনে গত চার দিনে বিলীন হয়ে গেছে কমপক্ষে ৭ কিলোমিটার এলাকা। নতুন করে ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি, অর্ধশতাধিক দোকানপাট, মাছের আড়ত, মসজিদ ও পারাপার ঘাট।এদিকে, আগামী ২৪ ঘন্টায় দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে।আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘন্টায় খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অ¯’ায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।আবহাওয়া চিত্রের সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি বিরাজমান রয়েছে।মৌসুমী বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, পূর্ব-মধ্য প্রদেশ, বিহার, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত।
মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় বিরাজ করছে।লালমনিরহাট প্রতিনিধি ঃলালমনিরহাটে টানা ভারি বর্ষনে সৃষ্ঠ বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। পানি নিস্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় এক সপ্তাহ পানিতে ডুবে থাকায় নষ্ট হয়েছে হাজার হাজার হেক্টর আমন ধানের কে।ষত।বুধবার পানি বন্দি বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বন্যা উত্তর মানুষের আহাজারী। আমন ক্ষেত পানিতে নষ্ট হওয়ায় চরম দুঃচিন্তায় পড়েছে জেলার হাজার হাজার কৃষক।স্থানীয়রা জানান, গত সপ্তাহে শুরু হওয়া টানা ভারি বর্ষনে সৃষ্ঠ বন্যায় জেলার নি¤œাঞ্চলের কয়েক হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়ে। এতে জেলার সদর, আদিতমারী ও কালীগঞ্জ উপজেলায় সব থেকে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে। পানি বন্দি পরিবার গুলোর মাঝে সরকারী ও বে সরকারী উদ্যোগে বিতরন করা হয়েছে শুকনো খাবার ও ত্রাণের চাল । দুই দিন ধরে বৃষ্টি কমে গেলেও পানি নিস্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় চরম বিপাকে পড়ে পানি বন্দি পরিবারগুলো। এ বন্যায় জেলার হাজার হাজার হেক্টর জমির আমন ধানের ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়।
দ্রুত পানি নিস্কাশনের জন্য বিভিন্ন স্থানে রাস্তা কেটে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। পানির তোড়ে ভেসে গেছে বেশ কিছু রাস্তা, ব্রীজ, কালভার্ট ও সেতু। অভাবনিয় ক্ষতির মুখে পড়েন কৃষকরা।
বুধবার ধীরগতি হলেও নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি। এরই মধ্যে অনেক পরিবার নিজ নিজ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে।বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে জনদুর্ভোগ কিছুটা কমে গেলেও আমন ধানের ক্ষেত দেখে আতকে উঠছেন জেলার কৃষকরা। তাদের বুনা স্বপ্ন বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে। ধান ক্ষেত দেখে আর্তনাদ করছেন কৃষকরা। কৃষক পরিবারগুলোতে শুরু হয়েছে কান্নার রোল। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর জানান, টানা ৬দিনের ভারি বর্ষনে সৃষ্ঠ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে জেলার ৭হাজার ৭শত ১৭ হেক্টর জমির আমন ধানের ক্ষেত। তবে কৃষি বিভাগের দেয়া এ তথ্য মানতে নারাজ কৃষকরা। তাদের দাবি দ্বিগুন পরিমান আমন ধানের ক্ষেত বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে।
কৃষকরা জানান, পানি নিস্কাশনের অভাবে দীর্ঘ প্রায় ৮/৯দিন ধরে পানির নিচে তলিয়ে থাকায় ধান গাছের কোন চিহ্নটুকুও নেই আমন ক্ষেতে। দীর্ঘ দিন পানির নিচে তলিয়ে থাকায় ধান সম্পুর্ন রুপে পচে গিয়ে নষ্ট হয়েছে। তাদের বুনা স্বপ্ন বন্যার পানিতে নষ্ট হওয়ায় পরিবার পরিজনের খাদ্য নিয়েও দুঃচিন্তায় পড়েছেন তারা।আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা রজবপাড়া গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম জানান, ৯দিন বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় তার দুই বিঘা জমির আমন ধান পচে গিয়ে সম্পুর্ন রুপে নষ্ট হয়েছে। পরিবার পরিজনের খাদ্য হিসেবে একটি ধানও রইল না তার।
সদর উপজেলার কালমাটি এলাকার কৃষক নজির হোসেন জানান, স্থানীয় এনজিওতে ঋৃন নিয়ে ভাদাই দোলায় এক বিঘা জমিতে আমন ধান রোপন করেন। সেই ধান ক্ষেত আজ অবধি পানির নিচেই তলিয়ে আছে। এখন ঋন পরিশোধ নিয়ে বড়ই দুঃচিন্তায় পড়েছেন তিনি।কৃষকের রোপন করা আমন ধানের ক্ষেত বন্যার পানিতে তলিয়ে নষ্ট হওয়ায় জেলায় এ বছর খাদ্য ঘাটতির সম্ভবনা রয়েছে বলে সচেতন মহল ও কৃষকরা আশংকা করছেন।লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ সাফায়েত হোসেন জানান, জেলার নি¤œাঞ্চলের কিছু জমির আমন ধান ক্ষেতের কিছুটা ক্ষতি হলেও উচু অঞ্চলের আমন ক্ষেতের অবস্থা মোটা মুটি ভাল বলে তিনি দাবি করেন। তবে জেলায় খাদ্য ঘটতির কোন আশংকা নেই বলেও জানান তিনি।লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান, বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। ইতোমধ্যে পানি বন্দি পরিবারগুলোর মাঝে ত্রাণ বিতরন করা হয়েছে।
গাইবান্ধা: শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় গাইবান্ধার ৪টি প্রধান নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, এ সময়ের মধ্যে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১৮ সেন্টিমিটার, ঘাগট নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার, করতোয়া নদীর পানি ৪ সেন্টিমিটার এবং তিস্তা নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার কমেছে।করতোয়া ছাড়া বাকী সব নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ৪ সেন্টিমিটার কমলেও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাখালি ব্রিজ পয়েন্টে করতোয়া নদীর পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।বন্যার পানির তোরে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বালুয়া ও রঘুনাথপুর ফতুল্লাপুরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দু’টি পয়েন্ট ভেঙ্গে গেছে। এতে নতুন করে অনেক এলাকা ডুবে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, বন্যায় উপজেলার ২২৩০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষতি হয়েছে।জেলা প্রশাসক এম আব্দুস সামাদ জানান, সুন্দরগঞ্জ সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় বন্যার্তদের মধ্যে ২ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন চাল এবং ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমতে থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ধরলায় ১৭ ও ব্রহ্মপুত্রে ১২ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। তবে এ দুটি নদী এখনও বিপদসীমার খুব কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।নদ-নদী তীরবর্তী গ্রাম, চর ও দ্বীপচরের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ এখনও পানিবন্দী রয়েছে। এদের অনেকের ঘর-বাড়ি এখনও পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দী থাকায় কাজ ও খাদ্য সংকট প্রকট হয়ে উঠছে দিনমজুর পরিবারগুলোতে। বাঁধে ও রাস্তার ধারে আশ্রয় নেয়া অনেক পরিবার এখনও ফিরতে পারেননি ঘরে। সরকারিভাবে যে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে, তা অপ্রতুল বলে অভিযোগ বন্যা কবলিত মানুষদের।জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল মোত্তালেব জানান, জেলার ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৩টি ইউনিয়নের ৫৫২ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৫০ হাজার পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত ৮০ মে’ টন চাল ২লাখ ৪৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জঃ শিমুলিয়া-কাওরাকান্দি শিমুলিয়া-আট দিন ধরে ফেরি বন্ধ, ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে পাঁচ শতাধিক ছোট-বড় যানবাহন । সংশ্লিষ্টরা জানান ফেরি বন্ধ, হাজারো গাড়িশিমুলিয়া-কাওরাকান্দি নৌপথে অষ্টম দিনেও ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। পদ্মা নদীর নাব্যতা সংকট ও তীব্র স্রোতে ২০ আগস্ট বড় ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় গত এক সপ্তাহে প্রায় আড়াই কোটি টাকার লোকসান হয়েছে।
নদী পারাপারে কে-টাইপ ফেরি ক্যামেলিয়া ও কুসুমকুলিই এখন ভরসা। ঘাট এলাকায় পাঁচ শতাধিক ছোট-বড় যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে এর মধ্য মালবাহী ট্রাকের সংখ্যাই বেশি। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের বিআইডব্লিউটিসির ডিজিএম এস এম আশিকুজ্জামান সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সাফায়েত আহমেদ জানান, আট দিন ধরে কার্যত ফেরি চলাচল বন্ধ। এই নৌপথে ১৮টি ফেরি চলাচল করে। সেখানে শুধু ক্যামেলিয়া ও কুসুমকুলি এ দুটি ফেরি চলাচল করছে। পানির গভীরতা পাঁচ ফুটের নিচে, সঙ্গে পদ্মার তীব্রস্রোত। পানি কাটতে পারে না। ‘আগে প্রতিদিন শিমুলিয়া-কাওরাকান্দি এদুই পাড়ে ২৮ থেকে ৩০ লাখ টাকা আয় হতো এখন দেড় থেকে দুই লাখ টাকায় নেমে এসেছে। বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএ পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এ ঘাটের সঙ্গে জড়িত। আরো দেড় হাজার লোক ঘাটের বিভিন্ন পেশার সঙ্গে জড়িত। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় প্রায় আড়াই কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।জরুরী চ্যনেলের ড্রেজিং ছাড়া ফেরি চলাচল কোন মতেই সম্ভব নয়।
বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস সালাম খান বলেন, ‘ড্রেজিংয়ে আমাদের কোনো ত্রুটি ছিল না। স্রোতই মূল সমস্যা। স্রোতের কারণে ঠিকমতো ড্রেজিং করতে পারছি না যেমন, তেমনি ফেরিও চলাচল করতে পারছে না। চায়না কোম্পানি তাদের যন্ত্রপাতি নিয়ে এসেছে। আশা করি, বিকেলের দিকে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করতে পারবে।এদিকে, মুন্সীগঞ্জে পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদী তীরের নিচু এলাকার ২০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ওই ২০ টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের ভাগ্যকুল পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী
ভাগ্যকূল পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান ,আরও কয়েকদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এদিকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পদ্মা তীরের কয়েকটি এলাকায় তীব্র স্রোতের কারণে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া কুমারভোগে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় হুমকিতে রয়েছে পুরো কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডসহ পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিভিন্ন সরঞ্জাম ও স্থাপনা।
ঝিনাইগাতী: শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার উপর দিয়ে বহমান সোমেশ্বরী নদীর আয়নাপুরে বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গত ক’বছর পূর্বে এলজিইডি এ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে। গত ২১ আগস্ট পাহাড়ী ঢলে এ বেড়িবাঁধের প্রায় ৫০ ফুট ভেঙ্গে যায়। ফলে ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ২টি গ্রাম হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো হচ্ছে- আয়নাপুর উচ্চ বিদ্যালয়, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, দাখিল মাদরাসা, হাফেজিয়া মাদরাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২টি, কিন্ডার গার্ডেন স্কুলসহ ২টি গ্রাম, ১টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরিত্যক্ত ইউনিয়ন পরিষদ ভবণ, বাজার হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। বেড়িবাঁধের উজানে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি স্যালো মেশিনে সোমেশ্বরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারনে বেড়িবাঁধটি ভেঙ্গে যায় বলে গ্রামবাসীরা জানায়। বর্তমানে বেড়িবাঁধের পাশে আয়নাপুর ও নাচনমহুরী ২টি গ্রামের বাসিন্দা’রা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। গ্রামবাসীদের মতে জরুরী ভিত্তিতে এ বেড়িবাঁধটি সংস্কার করা না হলে উল্লেখিত ২টি গ্রামসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ ফরিদুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বিষয়টি উপর মহলে জানিয়েছেন বলে জানান।
ফরিদপুর: পদ্মা, মধুমতি ও আড়িয়াল খাঁ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার ৪টি উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলো হচ্ছে- সদর, চর ভদ্রাসন, সদরপুর ও আল্পাডাঙ্গা।পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, পদ্মার পানি বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানিতে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় জনগণ জানান, ঘরবাড়ি প্লাবিত হওয়ায় কয়েক হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।সরকারি সূত্র জানায়, ৯টি ইউনিয়নে নদী তীরবর্তী নি¤œাঞ্চল এবং মধ্য পদ্মার বসবাসরত মানুষ পানিবন্দি হয়েছে।উত্তর চ্যানেল ইউনিয়নে একমাত্র সড়ক যোগাযোগের গোলকান্দি এলাকা প্লাবিত হওয়ায় ওই এলাকার জনগণের যাতায়াতের অসুবিধা হচ্ছে।ফরিদপুর জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, এই মুহূর্তে পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ নয়, তবে পরিস্থিতি তারা ঘনিষ্টভাবে পর্যবেক্ষণ ও মনিটরিং করছে।গত ৫ দিন ধরে ভোলা-লক্ষীপুর রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে উভয় পাড়ে আটকা পড়েছে পণ্যবাহী পরিবহণ। ট্রাকে থাকা কাঁচামাল ইতিমধ্যে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে আর, নৌ ও সড়ক পথ বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। মেঘনার স্রোতে পুরাতন ফেরিঘাট ভেঙে যাওয়ায় পর গত ১০ আগস্ট ভোলার ইলিশা বিশ্বরোডে নতুন করে ফেরি নির্মাণ করা হয়। তবে নির্মানের মাত্র ১৪ দিনের মাথায় সেটিও মেঘনার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।এতে গত ৫দিন ধরে বন্ধ রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে যোগাযোগের সহজ মাধ্যম ভোলা-লক্ষীপুর রুটের ফেরি সার্ভিস। প্রতিদিনই এই নৌ রুটে কাঁচামালসহ বিভিন্ন ধরণের পণ্যসামগ্রী আনা-নেওয়া করা হয়।তবে ফেরিঘাট ভেঙে যাওয়ায় গত ৫ দিন ধরে ঘাটের উভয় পাড়ে অসংখ্য পণ্যবাহী যানবাহন আটকা পড়েছে।ট্রাকে থাকা কাঁচামাল ইতিমধ্যে নষ্টও হতে বসেছে। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা।ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় বন্ধ রয়েছে ঘাটের দোকানগুলোও। ফলে লোকসান গুণতে হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের।শিগগিরই ফেরি চলাচল চালু করার আশ্বাস দিয়েছেন বরিশাল অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিটিএ) মতিউল ইসলাম।