2_80332

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৫ আগস্ট ২০১৫: র‌্যাব ও পুলিশের তিন কর্মকর্তাসহ চারজনের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের হাজারীবাগ থানা শাখার সভাপতি আরজু মিয়াকে অপহরণের পর গুলি করে হত্যার অভিযোগ আমলে নিয়ে বিষয়টি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।মঙ্গলবার সকালে ঢাকার মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনান এ আদেশ দেন।এর আগে গত রোববার নিহত আরজুর ভাই মাসুদ রানা এ অভিযোগে একটি নালিশি মামলা করলে আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে পরে আদেশ দেওয়া হবে বলে জানান।মামলার আরজিতে অভিযোগ করা হয়, ১৭ আগস্ট হাজারীবাগ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আরজু মিয়াকে অপহরণ করে নিয়ে যায় র‌্যাব। তাঁকে হত্যা করে সিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেছনে লাশ ফেলে রাখা হয়। র‌্যাব ১৯ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, আরজু বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন।অভিযোগে আরও বলা হয়, ১৭ ও ১৮ আগস্ট ঘটনাস্থলে কোনো বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেনি। আসামিরা পরিকল্পিতভাবে আরজুকে তুলে নিয়ে যায় এবং হত্যা করে লাশ ফেলে রাখে।

মাসুদ রানা ওই দিন বলেন, তাঁর ভাই আরজু মিয়াকে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগে তিনি আদালতে নালিশি মামলাটি করেছেন। আসামিরা হলেন, র‌্যাব-২ এর পরিচালক মাসুদ রানা, ডিএডি শাহিদুর রহমান, পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদ ও র‌্যাবের সোর্স রতন।গত ১৬ অগাস্ট এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আরজুর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর র‌্যাব তাকে আটক করে এবং পরদিন সকালে কথিত বন্দুকযুদ্ধে এই ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যুর খবর জানায়।বাদীর আইনজীবী আজিম উদ্দিন বলেন, এখন একজন ম্যাজিস্ট্রেট বাদী ও সাক্ষীদের ডেকে তাদের জবানবন্দি শুনবেন। তার প্রতিবেদন ও সুপারিশের ভিত্তিতে আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন- অভিযোগটি মামলা আকারে গ্রহণ করা হবে কি না। কোন হাকিম কত দিনের মধ্যে এই তদন্ত করবেন- তা ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম ঠিক করে দেবেন বলে জানান আজিম। আরজুর ভাই যে চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, তারা হলেন- ওই সময় র‌্যাব-২ এর অধিনায়কের দায়িত্বে থাকা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাসুদ রানা, উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) সাহেদুর রহমান, পরিদর্শক মো. ওয়াহিদ ও র‌্যাবের সোর্স রতন।

এদের মধ্যে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাসুদ রানাকে রোববার র‌্যাব-২ থেকে সরিয়ে সদরদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগ তুলে গত ১৬ অগাস্ট মোহাম্মদ রাজা নামে এক কিশোরকে ঢাকার হাজারীবাগের গণকটুলী এলাকায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়।ছাত্রলীগ নেতা আরজু ওই হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেন দাবি করে রাজার বোন রেশমা বেগম মামলা করলে ওই রাতেই আরজুকে আটক করে র‌্যাব। লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাসুদ রানা পরদিন সাংবাদিকদের বলেন, মামলা হওয়ার পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাজারীবাগ পার্কের পানির পাম্পের কাছ থেকে আরজুকে আটক করেন তারা। পরে তাকে নিয়ে বাকি আসামিদের ধরতে অভিযানে নামেন র‌্যাব সদস্যরা।রাত সাড়ে ৩টার দিকে বেড়িবাঁধের বাড়ুইবাড়ি এলাকায় মান্নান প্রিন্সিপালের বাড়ির সামনে ওঁত পেতে থাকা আরজুর সহযোগীরা র‌্যাব সদস্যদের দেখে গুলি শুরু করে। আত্মরক্ষার জন্য র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে আরজুর গায়ে গুলি লাগে। পরে তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়।

পরদিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে র‌্যাব গুলিবিদ্ধ আরজুকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।এরপর অভিযোগ নিয়ে রোববার আদালতে যান আরজুর ভাই মাসুদ রানা। আরজিতে তিনি বলেন, র‌্যাব আরজুকে সুপরিকল্পিতাভাবে তুলে নিয়ে’ ১৭ অগাস্ট বিকাল থেকে পরদিন ভোরের মধ্যে কোনো এক সময় হাজারীবাগ পার্ক ও শিকদার মডিকেলের মাঝামাঝি এলাকায় বন্দুকযুদ্ধের নামে গুলি করে হত্যা করে।এর আগে গত ১৯ অগাস্ট আরজুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে হাজারীবাগ থানা আওয়ামী লীগের নেতারাও একই অভিযোগ করেন।বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাটিকে কল্পকাহিনী আখ্যায়িত করে জড়িত র‌্যাব সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয় ওই সংবাদ সম্মেলনে।স্থানীয় সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপসও সাংবাদিকদের সামনে ওই ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড বলেন।স্থানীয় আওয়ামী লীগের ওই অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সেদিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আমাদের প্রাইম মিনিস্টার মেসেজ আগেই দিয়েছেন। অপরাধী যে কেউ হোক, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা কাউকে ছাড় দেব না। সে ছাত্রলীগ করুক, ছাত্রদল করুক বা অন্য দল করুক।