দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৫ আগস্ট: ৬ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।এদিকে, মায়ানমার, চীন, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে সড়ক পথে যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সীমান্ত ঘুমধুম থেকে মায়ানমার সীমান্তের টাংব্রো ভূমিতে দুই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করবে বাংলাদেশ। এই দুই কিলোমিটার সড়ক চার লেনে নির্মাণ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাজধানীর আগারগাঁও এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা অনুষ্ঠিত হয়।অনুমোদন প্রাপ্ত প্রকল্পগুলোর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৪৭ কোটি, সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৫৭ কোটি ৫৮ লাখ ও প্রকল্প সহায়তা তহবিল থেকে ২ হাজার ৫৮৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফাকামাল সাংবাদিকদের জানান, ৬ হাজার ৫৩৩ কোটি ১ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ৫টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৪৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৭ কোটি ৮৫ লাখ এবং বৈদেশিক সাহায্য থেকে ২ হাজার ৫৮৭ কোটি ৫২ লাখ সঙ্কুলান করা হবে।
অনুমোদিত ৫টি প্রকল্প:রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকার দ্বিতীয় ব্লাকের ভূমি উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ প্রকল্প। এতে ব্যয় হবে ৪৬২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।দ্বিতীয় প্রকল্প হচ্ছে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় সমন্বিত পানি সম্পদ পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনা। এতে ব্যয় হবে ৪৮২ কোটি ১০ লাখ টাকা।তৃতীয় প্রকল্প হচ্ছে বাংলাদেশ মায়ানমার মৈত্রী সড়ক (বালুখালি-ঘুনধুম) বর্ডার রোড। এতে ব্যয় হবে ৫৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।চতুর্থ প্রকল্প বেগুনাবাড়ী খালসহ হাতিরঝিল এলাকার সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের চতুর্থ সংশোধনীর অনুমোদন করা হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ২৩৬ কোটি ২ লাখ টাকা।পঞ্চম প্রকল্পটি হচ্ছে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্প। এতে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৩১৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
এতে ২ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য দেবে চায়না এক্সিম ব্যাংক । এছাড়া সরকারি তহবিল থেকে ১ হাজার ১২৩ কোটি ৭৭ লাখ এবং সংস্থার তহবিল থেকে ১০ কোটি সঙ্কুলান দেয়া হবে।একনেক সভা সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সীমান্ত ঘুমধুম থেকে মায়ানমার সীমান্তের টাংব্রো ভূমিতে দুই কিলোমিটার সড়ক দুইলেনে নির্মাণের জন্য একনেকে প্রস্তাব করা হয়। এর পরে প্রধানমন্ত্রী এই সড়ককে চারলেনে নির্মাণের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও মায়ানমার সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে বাংলাদেশের অর্থায়নে ৪৫ মিটারের একটি ব্রিজও তৈরি করা হবে। এই ব্রিজও চার লেনে নির্মাণের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
একনেক সভা জানায়, দু’দেশের সীমান্তে দুই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের ফলে মায়ানমার, চীন, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সড়ক পথে সরাসরি যোগাযোগ করা যাবে। এর ফলে বাণিজ্যিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজতৈকি সম্পর্ক শক্তিশালী হবে। সেই লক্ষ্যেই বাংলাদেশ-মায়ানমার মৈত্রী সড়ক নির্মাণ করবে সরকার। সড়কটি এ অঞ্চলের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নতি সাধনের পাশাপাশি রাজনৈতিক সুসম্পর্ক জোরদার করবে।
বাংলাদেশ-মায়ানমার মৈত্রী সড়ক’ প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে নানা দিক দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)। প্রকল্পটির প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। একনেক সভা প্রকল্পের ব্যয় ৮১ কোটি টাকা নির্ধারণ করে। জুলাই ২০১৫ থেকে জুন ২০১৭ সাল মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।একনেক সভায়, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের জন্য ভূমি রক্ষা বাবদ চূড়ান্ত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৯২ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
এই অর্থ দিয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভূমি প্রস্তুত করাসহ নদী ভাঙন থেকে প্রকল্প এলাকা রক্ষা করা হবে। এছাড়া অস্থায়ী অনাবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য পূর্তকাজ করার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার এক লাখের অধিক গাছ লাগানো হবে।রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প এলাকার দ্বিতীয় ব্লকের ভূমি উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে। প্রকল্পটি মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ২৭ লাখ ১৩ হাজার ঘন মিটার ভূমি উন্নয়ন করা হবে। এছাড়া, ১৪ হাজার মিটার সীমানা প্রাচীরসহ যানবাহন ভাড়া নেওয়া হবে। বিআইডব্লিউটিএ ঘাসিয়াখালি চ্যানেল ড্রেজিং থেকে বালি পরিবহন করে প্রকল্প এলাকা ভরাট করবে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।একনেক সভা সূত্র জানায়, হাতিরঝিল প্রকল্পের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ দ্রুত গতিতে বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।