দৈনিকবার্তা-গাজীপুর, ২৪ আগস্ট ২০১৫: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বারি) “কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্যালোচনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন কর্মশালা-২০১৫” সোমবার থেকে শুরু হয়েছে। গত অর্থ বছর যে সকল গবেষণা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছিল সেগুলোর মূল্যায়ন এবং এসব অভিজ্ঞতার আলোকে আগামী বছরের গবেষণা কর্মসূচি প্রণয়নের উদ্দেশ্যে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিডসহ), রোগ প্রতিরোধক্ষম ও বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবনের প্রযুক্তিসহ প্রযুক্তির উপযোগিতা যাচাই বাছাই ও দেশের বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কর্মসূিচ গ্রহন করাই এ কর্মশালার প্রধান উদ্দেশ্য।
এ উপলক্ষ্যে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) কাজী বদরুদ্দোজা মিলনায়তনে সকালে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি) মোহাম্মদ নজমুল ইসলাম। ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. রফিকুল ইসলাম মন্ডল এতে সভাপতিত্ব করেন। কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. আবুল কালাম আযাদ। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বারি’র গবেষণা কার্যক্রম ও সাফল্যের ওপর সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা করেন ইনস্টিটিউটের পরিচালক (গবেষণা) ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দীন। অনুষ্ঠানে স¦াগত বক্তব্য রাখেন বারি’র পরিচালক (সেবা ও সরবরাহ) ড. মো. রওশন আলী এবং সবশেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন বক্তব্য রাখেন বারি’র পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ) ড. ভাগ্য রানী বণিক। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বারি’র অবসরপ্রাপ্ত মহাপরিচালকবৃন্দ, পরিচালকবৃন্দ, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ এবং সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠনের প্রতিনিধিসহ প্রায় ৫’শ জন বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানী অংশগ্রহণ করেন। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত আট দিন ব্যাপী এ কর্মশালায় সারা দেশ থেকে আগত কৃষি বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীগণ অংশগ্রহণ করেন।
আয়োজকগণ জানান, এই গবেষণা পর্যালোচনা তিনটি ধাপে (আঞ্চলিক গবেষণা পর্যালোচনা, অভ্যন্তরীণ গবেষণা পর্যালোচনা ও কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্যালোচনা) সম্পন্ন হয়ে থাকে। প্রথমে আঞ্চলিক, পরে অভ্যন্তরীণ এবং সবশেষে কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্যালোচনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন কর্মশালার মাধ্যমে গত বছরের গবেষণা কার্যাবলীর বিশ্লেষণের মাধ্যমে পরবর্তী বছরের গবেষণা কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। যে কারনে এই কর্মশালার গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন পর্যায়ের এই কর্মশালা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষক প্রতিনিধি, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্থানীয় ও আঞ্চলিক কৃষির সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেই আলোকে গবেষণা কার্যক্রম প্রণীত হয়। আঞ্চলিক গবেষণা পর্যালোচনা অঞ্চল ভিত্তিক অনুষ্ঠিত হয়। অভ্যন্তরীণ ও কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্যালোচনা বারি সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন, কৃষি প্রধান বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কৃষির অবদান সবচেয়ে বেশি। এ দেশের শতভাগ মানুষই কৃষির উপর নির্ভরশীল। তিনি ক্রমহ্রাসমান কৃষি জমি এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা গোষ্ঠীর চাহিদা মেটাতে দ্রুততম ভাবে নতুন নতুন উন্নত প্রযুক্তিসমূহ কৃষকের মাঠে পৌছানোর জন্য বিজ্ঞানীদের আহ্বান জানান।উল্লেখ্য, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত ২০০ টিরও বেশি ফসলের ৪৫১ টি উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিডসহ), রোগ প্রতিরোধক্ষম ও বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ প্রতিরোধী জাত এবং ৪৫২ টি অন্যান্য প্রযুক্তিসহ এযাবৎ ৯০০ টিরও বেশি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এ সকল প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে দেশে গম, তেলবীজ, ডালশস্য, আলু, সবজি, মসলা এবং ফলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রযুক্তির উপযোগিতা যাচাই বাছাই ও দেশের বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কর্মসূিচ গ্রহন করাই এ কর্মশালার প্রধান উদ্দেশ্য।