দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৪ আগস্ট ২০১৫: ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হতে একবারই পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে। দ্বিতীয়বার আর এ সুযোগ মিলবে না।দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় সোমবার বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী এ এফ এম মেজবাহউদ্দিন বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ বাতিল করে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিল। সোমবার আপিল বিভাগ তা খারিজ করে দিয়েছেন। এতে শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দিতে ইচ্ছুক, এমন ২৬ জন শিক্ষার্থীর অভিভাবকের করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে গত ১৬ মার্চ হাইকোর্ট রুল দেন। দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ কেন দেওয়া হবে না, তা ওই রুলে জানতে চাওয়া হয়। শিক্ষাসচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, অনলাইন ভর্তি কমিটির আহ্বায়কসহ আটজন বিবাদীকে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়। পরে বিবাদীরা রুলের জবাব দিলে এর ওপর শুনানি হয়।গত ৮ জুলাই বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে রুল খারিজ করে রায় দেন। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়।সোমবার আপিলের রায় দেওয়া হলো।আপিল বিভাগের এই রায়ের ফলে চলতি বছর যারা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, শুধু তারাই ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। গত বছর উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণরা এ বছর আর ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবেন না। এ বছর উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আগামী বছর ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবেন না।
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা এত দিন টানা দুবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পেতেন। গত বছর এই সুযোগ সীমিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন শুধু ওই বছর উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা। অর্থাৎ, চলতি বছর থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার কথা। এই সিদ্ধান্তের পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের যুক্তি হলো, দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকার ফলে প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক আসন শূন্য হয়ে যায়। ২৬ শিক্ষার্থীর অভিভাবকের করা লিভ টু আপিলের শুনানি করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ সোমবার তা খারিজ করে দেয়। এদিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের অনলাইন ভর্তি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ চেয়ে আদালতে আসা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পক্ষে আপিল বিভাগে শুনানি করেন আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে এ এফ এম মেসবাহ উদ্দিন এবং রাষ্ট্রপক্ষে অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি করেন।
আদেশের পর মেসবাহ উদ্দিন বলেন, আপিল বিভাগ আবেদনটি খারিজ করে দেওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকছে না।আবেদনকারীদের আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের এখতিয়ার আছে সিদ্ধান্ত সংশোধন ও পরিবর্তন করার। এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেখানে হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই বলে হাই কোর্ট আমাদের রিট আবেদন খারিজ করেছিল। আগের দুই বছরের শিক্ষার্থীরাও যাতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারে সেজন্য আমরা লিভ টু আপিল করেছিলাম। আপিল বিভাগ সেটিও খারিজ করে দিয়েছেন। এর ফলে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ থাকছে না।এইচএসসি উত্তীর্ণরা এতোদিন টানা দুইবার ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ পেলেও গতবছর তা সীমিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বলা হয়, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি ঠেকাতেই কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্ত।বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক গতবছর ১৪ অক্টোবর ওই সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় শুধু ওই বছর এইচএসসিতে উত্তীর্ণরাই অংশ নিতে পারবে; পুরনোরা নয়।
ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা সে সময় টানা কয়েক দিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও অনশনের মতো কর্মসূচি পালন করেন। এরপর হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন দ্বিতীয়বার ভর্তিচ্ছু ২৬ শিক্ষার্থীর অভিভাবক।তাদের আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে গত ১৬ মার্চ হাই কোর্ট রুল দেয়। দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ বাতিল কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। সেইসঙ্গে ওই সিদ্ধান্ত বাতিল করে আগের মত ভর্তির সুযোগ রেখে নতুন করে সিদ্ধান্ত কেন দেওয়া হবে না- তাও জানতে চাওয়া হয়।ওই রুলের ওপর শুনানি শেষে ৮ জুলাই হাই কোর্ট তা খারিজ করে রায় দেয়। দেশে উচ্চ শিক্ষার সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয় হাজার ৫৮২ আসনের বিপরীতে গতবছর পরীক্ষা দেন তিন লাখ এক হাজার ১৩৮ জন পরীক্ষার্থী।আবেদনকারীপক্ষ এর বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে গেলে ২৯ জুলাই বিচারক বিষয়টি শুনানির জন্য নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।এর ধারাবাহিকতায় আপিল বিভাগ আবেদনটি শুনলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই শেষ বিচারে বৈধতা পেল।