7004-rab

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৪ আগস্ট ২০১৫: র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে রাজধানীর হাজারীবাগ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আরজু মিয়া নিহত হওয়ার পর এবার র‌্যাব-২ এর পরিচালক লে. কর্নেল মাসুদ রানাকে বদলি করা হয়েছে। র‌্যাব সদর দপ্তরের সহকারী পরিচালক মাকসুদুল আলম সোমবার বলেন, মহাপরিচালকের নির্দেশে মাসুদ রানাকে র‌্যাব-২ থেকে প্রত্যাহার করে সদর দপ্তরে নিয়ে আসা হয়েছে।রোববার র‌্যাব-২ এর এই পরিচালককে বদলি করা হয়। রোববারই নিহত আরজু মিয়ার ভাই মাসুদ রানা র‌্যাব-২ এর পরিচালকসহ চারজনের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একটি নালিশি মামলা করেন। এর আগে ওই ‘বন্দুকযুদ্ধে’র পরদিন ১৮ আগস্ট হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাঈনুল ইসলামকে বদলি করা হয়। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান সোমবার বলেন, (রোববার) লে. কর্নেল মাসুদ রানাকে র‌্যাব-২ থেকে বদলি করে সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।

মামলার আরজিতে অভিযোগ করা হয়, ১৭ আগস্ট হাজারীবাগ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আরজু মিয়াকে অপহরণ করে নিয়ে যায় র‌্যাব। তাঁকে হত্যা করে শিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেছনে লাশ ফেলে রাখা হয়। র‌্যাব ১৯ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, আরজু বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন।অভিযোগে বলা হয়, ১৭ ও ১৮ আগস্ট ঘটনাস্থলে কোনো বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেনি। আসামিরা পরিকল্পিতভাবে আরজুকে তুলে নিয়ে যায় এবং হত্যা করে লাশ ফেলে রাখে।রাজধানীর হাজারীবাগে চুরির অভিযোগে এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আটক থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আরজু মিয়া গত ১৭ আগস্ট ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন বলে দাবি করেছে র‌্যাব।

মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগ তুলে গত ১৬ অগাস্ট মোহাম্মদ রাজা নামে এক কিশোরকে ঢাকার হাজারীবাগের গণকটুলী এলাকায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়।হাজারীবাগ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আরজু মিয়া ওই হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেন দাবি করে রাজার বোন রেশমা বেগম মামলা কররে ওই রাতেই আরজুকে আটক করে র‌্যাব। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে তার মৃত্যু হয় বলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাসুদ রানা সে সময় বলেছিলেন, মামলা হওয়ার পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাজারীবাগ পার্কের পানির পাম্পের কাছ থেকে আরজুকে আটক করেন তারা। পরে তাকে নিয়ে বাকি আসামিদের ধরতে অভিযানে নামেন র‌্যাব সদস্যরা।রাত সাড়ে ৩টার দিকে বেড়িবাঁধের বাড়ুইবাড়ি এলাকায় মান্নান প্রিন্সিপালের বাড়ির সামনে ওঁত পেতে থাকা আরজুর সহযোগীরা র‌্যাব সদস্যদের দেখে গুলি শুরু করে। আত্মরক্ষার জন্য র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে আরজুর গায়ে গুলি লাগে। পরে তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়।

পরদিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে র‌্যাব গুলিবিদ্ধ আরজুকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।এরপর গত ১৯ অগাস্ট আরজুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন হাজারীবাগ থানা আওয়ামী লীগের নেতারা। বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাটিকে কল্পকাহিনী আখ্যায়িত করে জড়িত র‌্যাব সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তারা। স্থানীয় সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপসও সাংবাদিকদের সামনে ওই ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড বলেন।এরপর আরজুকে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগে র‌্যাব-২ এর অধিনায়কসহ চারজনের বিরুদ্ধে রোববার আদালতে মামলার আবেদন করেন তার ভাই মাসুদ রানা।আদালতে দাখিল করা আরজিতে র‌্যাবের উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) সাহেদুর রহমান, পরিদর্শক মো. ওয়াহিদ ও রাবের সোর্স রতনকেও তিনি আসামি করেছেন।আরজিতে বলা হয়েছে, র‌্যাব আরজুকে সুপরিকল্পিতাভাবে তুলে নিয়ে ১৭ অগাস্ট বিকাল থেকে পরদিন ভোরের মধ্যে কোনো এক সময় হাজারীবাগ পার্ক ও শিকদার মডিকেলের মাঝামাঝি এলাকায় বন্দুকযুদ্ধের নামে গুলি করে হত্যা করে।এ অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হবে কি না, সে বিষয়ে মঙ্গলবার আদেশ দেবেন ঢাকার মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মোহাম্মদ আদনান।