দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ আগস্ট ২০১৫: বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতের নথি তলব ও দুদকের দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদন তলব চেয়ে খালেদার জিয়ার করা দুটি আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি আবদুর রবের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেন।বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার বিচারিক আদালতের নথি এবং এ মামলা থেকে খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি দিয়ে ২০০৮ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দেওয়া তদন্ত কর্মকর্তার চূড়ান্ত প্রতিবেদনের নথি তলব চেয়ে গত ১৮ আগস্ট আবেদন দুটি করা হয়। ওই দিনই আবেদন দুটির ওপর শুনানি করেন আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী। সঙ্গে ছিলেন জাকির হোসেন ভূঁইয়া। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।
শুনানিতে রাগীব রউফ বলেন, ২০০৮ সালের জুনে এ মামলা থেকে খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি দিয়ে দুদকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন তদন্ত কর্মকর্তা। কিন্তু সেটি আদালতে না দিয়ে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয় দুদক। একই বিষয় নিয়ে পুনঃতদন্ত করার বিধান দুদক আইনে নেই। একমাত্র আদালত চাইলে পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন। কিন্তু দুদক নতুন করে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে এবং তারপর তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এটা আইনসম্মত নয়।বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্র“য়ারি খালেদা জিয়াসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় দুদক এ মামলাটি করে। পরে এ মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। শুনানির পর ২০০৮ সালের ১৬ অক্টোবর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ রুল ও মামলার কার্যক্রম স্থগিতাদেশ দেন। মামলাটি কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। হাইকোর্টে এখন ওই রুলের শুনানি চলছে।
মামলাটি বাতিল চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের আবেদনের প্রেক্ষিতে রুল শুনানির সময় এ দু্টি আবেদন করা হয়েছিল। গত ১৯ অগাস্ট শুনানি শেষে আদালত বিষয়টি রোববার আদেশের জন্য রেখেছিল।আদেশের পর খালেদার আইনজীবী ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী বলেন,আবেদন দুটি আদালত খারিজ করে দিয়েছেন। রুল শুনানির জন্য আগামী ৩০ অগাস্ট দিন রাখা হয়েছে।সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, ১০ মন্ত্রীসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খনি দুর্নীতির মামলা হয়।২০০৮ সালের ২৬ ফেব্র“য়ারি শাহবাগ থানায় দুদক এ মামলা করার পর ৫ অক্টোবর ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।এতে বলা হয়, চীনা প্রতিষ্ঠান কনসোর্টিয়াম অফ চায়না ন্যাশনাল মেশিনারিজ ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের (সিএমসি) সঙ্গে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি করার মধ্য দিয়ে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতি করেছেন।
২০০৮ সালের ১৬ অক্টোবর খালেদার বিরুদ্ধে এ মামলার কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করে হাই কোর্ট। মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও দেওয়া হয়। হাই কোর্টের ওই আদেশ আপিলেও বহাল থাকায় আটকে যায় খনি দুর্নীতি মামলা।সাত বছর পর চলতি বছরের শুরুতে দুদক মামলাটি সচল করার উদ্যোগ নিলে হাই কোর্টের দেওয়া রুলের চূড়ান্ত শুনানি শুরু হয়।মামলার নথি তলব চেয়ে গত ১৮ আগস্ট আবেদন দু’টি করেন খালেদার আইনজীবীরা। ১৯ আগস্ট শুনানি শেষে রোববার আদেশের দিন ধার্য করেন আদালত।এই আদালতেই একই মামলা বাতিল বিষয়ে প্রায় সাত বছর আগে জারি করা রুলের ওপর শুনানি চলছে।এরপর মামলাটি বাতিল চেয়ে ওই বছরই হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সে বছরের ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন। একই সঙ্গে মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না তার কারণ জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এ রুলের শুনানি চলছে।ওই মামলায় খালেদা জিয়া ছাড়াও অন্য আসামিরা হলেন-এম সাইফুর রহমান (মৃত), আবদুল মান্নান ভূঁইয়া (মৃত), মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার, এম শামসুল ইসলাম , আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, এ কে এম মোশাররফ হোসেন, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব নজরুল ইসলাম, পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান এস আর ওসমানী, সাবেক পরিচালক মঈনুল আহসান, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ও খনির কাজ পাওয়া কোম্পানির স্থানীয় এজেন্ট হোসাফ গ্র“পের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন।