দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ আগস্ট ২০১৫: কথিত বন্দুকযুদ্ধে রাজধানীর হাজারীবাগ থানা ছাত্রলীগ সভাপতি আরজু মিয়া নিহতের ঘটনায় র্যাবের তিন কর্মকর্তাসহ চারজনের বিরুদ্ধে করা মামলাটি গ্রহণ করা হবে কি না এবিষয়ে আগামী মঙ্গলবার আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত। রোববার বিকালে ঢাকা মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনানের আদালত শুনানি শেষে এ দিন ধার্য করেন। সকালে আরজু মিয়ার বড় ভাই মাসুদ রানা মামলাটি দায়ের করেন। মাসুদ রানা বলেন, তাঁর ভাই আরজু মিয়াকে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগে তিনি রোববার সকালে আদালতে নালিশি মামলাটি করেছেন। আসামিরা হলেন, র্যাব-২ এর পরিচালক মাসুদ রানা, ডিএডি শাহিদুর রহমান, পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদ ও র্যাবের সোর্স রতন।মামলায় অপহরণের পর বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে ।ছাত্রলীগের হাজারীবাগ থানা শাখার সভাপতি আরজু মিয়াকে অপহরণের পর গুলি করে হত্যার অভিযোগে র্যাব ও পুলিশের তিন কর্মকর্তাসহ চারজনের বিরুদ্ধে একটি নালিশি মামলা হয়। রোববার সকালে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলাটি করেন নিহতের ভাই মাসুদ রানা।হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনান বাদীর জবানবন্দি নিয়েছেন। তবে আদেশ আগামী মঙ্গলবার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আদালত।
মামলার আরজিতে অভিযোগ করা হয়, ১৭ আগস্ট হাজারীবাগ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আরজু মিয়াকে অপহরণ করে নিয়ে যায় র্যাব। তাঁকে হত্যা করে সিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেছনে লাশ ফেলে রাখা হয়। র্যাব ১৯ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, আরজু বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন।অভিযোগে আরও বলা হয়, ১৭ ও ১৮ আগস্ট ঘটনাস্থলে কোনো বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেনি। আসামিরা পরিকল্পিতভাবে আরজুকে তুলে নিয়ে যায় এবং হত্যা করে লাশ ফেলে রাখে।বাদীর আইনজীবী আজিম উদ্দিন বলেন,মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মোহাম্মদ আদনান আবেদন শুনেছেন। মঙ্গলবার আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে।বাদী আরজিতে বলেছেন, র্যাব আরজুকে সুপরিকল্পিতাভাবে তুলে নিয়ে’ ১৭ অগাস্ট বিকাল থেকে পরদিন ভোরের মধ্যে কোনো এক সময় হাজারীবাগ পার্ক ও শিকদার মডিকেলের মাঝামাঝি এলাকায় নিয়ে বন্দুকযুদ্ধের নামে গুলি করে হত্যা করে।পরদিন মর্গে গিয়ে মাসুদ রানা ভাইয়ের লাশ পান বলে আরজিতে উল্লেখ করেছেন।এর আগে হাজারীবাগ থানা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও একই অভিযোগ করা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপসও ওই ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড বলেছেন, যদিও র্যাবের দাবি, আরজুর মৃত্যু হয়েছে বন্দুকযুদ্ধে।মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগ তুলে গত ১৬ অগাস্ট মোহাম্মদ রাজা নামে এক কিশোরকে হাজারীবাগের গণকটুলী এলাকায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই কিশোর আরজুর প্রতিবেশী।আরজুই ওই কিশোরকে পিটিয়ে হত্যায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অভিযোগ তুলে রাজার বোন মামলা করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হাজারীবাগের বড়ইখালী এলাকায় কথিত সেই বন্দুকযুদ্ধ হয় বলে র্যাবের দাবি।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাসুদ রানা সে সময় বলেছিলেন, মামলা হওয়ার পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাজারীবাগ পার্কের পানির পাম্পের কাছ থেকে আরজুকে আটক করেন তারা। পরে তাকে নিয়ে বাকি আসামিদের ধরতে অভিযানে নামেন র্যাব সদস্যরা।রাত সাড়ে ৩টার দিকে বেড়িবাঁধের বাড়ুইবাড়ি এলাকায় মান্নান প্রিন্সিপালের বাড়ির সামনে ওঁত পেতে থাকা আরজুর সহযোগীরা র্যাব সদস্যদের দেখে গুলি শুরু করে। আত্মরক্ষার জন্য র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে আরজুর গায়ে গুলি লাগে। পরে তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়।পরদিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে র্যাব গুলিবিদ্ধ আরজুকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।এরপর গত ১৯ অগাস্ট আরজুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন হাজারীবাগ থানা আওয়ামী লীগের নেতারা।
থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক হামিদ সাজু বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাটিকে কল্পকাহিনী’ আখ্যায়িত করে জড়িত র্যাবের সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।তিনি বলেন, হাজারীবাগ এলাকা বিএনপির ঘাঁটি। গত নির্বাচনের পর এলাকায় উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় একটি পক্ষ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে উদীয়মান ছাত্রনেতা আরজুকে হত্যা করেছে।আর মোবাইল চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে রাজার মৃত্যু হয় বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় পর্যায়ের এই নেতা।অন্যদিকে রাজার বোন রেশমা বেগমের দাবি, তার ভাইকে আটকের পর বেধড়ক পেটান আরজু। তিনি মাফ চেয়ে ছেড়ে দিতে বললেও দেননি।ওই সংবাদ সম্মেলনের আরজুর বড় ভাই মাসুদ রানা বলেন, আমার ভাইকে সন্ত্রাসী বলবেন না। তার অপরাধ, সে বড় নেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখত। সে সব সময় মানুষের সেবা করত।স্থানীয় আওয়ামী লীগের এই অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ওইদিনই সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের প্রাইম মিনিস্টার মেসেজ আগেই দিয়েছেন। অপরাধী যে কেউ হোক, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা কাউকে ছাড় দেব না। সে ছাত্রলীগ করুক, ছাত্রদল করুক বা অন্য দল করুক।