দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ আগস্ট: দেশের উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে পাহাড়ি ঢলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে, দক্ষিণাঞ্চলসহ চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বন্যায় হাজার মানুষ পানিবন্ধি হয়ে আছে ।বাড়ীঘর,ব্যাবসা প্রতিষ্টান,শিক্ষা প্রতিষ্টান সহ আমন ফসলের হাজার হাজার হেক্টর আবাদি জমি আকস্বিক বন্যায় তলিয়ে যায়। এতে করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট,বাড়িঘর, মসজিদ, মন্দির, কয়েক হাজার হেক্টর আমন ধানের ক্ষেত, মরিচ, বেগুন, শাক সব্জি, বীজতলা, শতাধিক মৎস্য খামার, পুকুর পানিতে ডুবে গেছে এবং কয়েক শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত গ্রামগুলুতে দেখা দিয়েছে খাবার পানির সংকট।
কুড়িগ্রাম: ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কুড়িগ্রাম জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার ৫৩ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। বসতভিটা ও সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বানভাসী মানুষজন গবাদি পশু নিয়ে পাকা সড়ক ও উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বানভাসীদের মাঝে এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়নি। ফলে অনেক পরিবারের মাঝে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট।
দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটও। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ফারাজী পাড়া গ্রামের আবেদ আলী জানান, গত ৪ দিন ধরে পানি বাড়ছেই। চৌকির উপর পানি উঠেছে। আর থাকা যায় না। ঘর-বাড়ি ছেড়ে পাকা সড়কে আশ্রয় নিচ্ছি। একই এলাকার জমিলা বেগম জানান, বাড়ি ছেড়ে ছেলে-মেয়ে, গরু-ছাগল নিয়ে পাকা সড়কে ধাপরী ঘরে আছি। খাওয়া-দাওয়ার খুব কষ্ট। চেয়ারম্যান- মেম্বার কোনো খোঁজ নেয় না। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমির হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সরকারি বা বেসরকারিভাবে এসব মানুষের জন্য এখন পর্যন্ত কোন ত্রাণ সহায়তা পাওয়া যায়নি।
জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমীন জানান, বন্যাকবলিতদের জন্য ৮০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা দ্রুত বিতরণ করা হবে। এ ছাড়াও তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তালিকা তৈরি হলে দ্রুত আরো ত্রাণ সহায়তা চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।কৃষি বিভাগের তথ্যমতে বন্যার পানিতে সম্পুর্ণ রূপে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে ৪৫ হাজার ৮শ ৪০ হেক্টর জমির আমন ক্ষেত।কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শওকত আলী সরকার জানান, যেহেতু অতি বৃষ্টির কারণে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে, সেহেতু আশা করছি বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাবে।
পানি দ্রুত নেমে গেলে উচু স্থানের আমন ক্ষেতের তেমন ক্ষতি হবে না। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘন্টায় সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১৭ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ২৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার সামান্য নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি অপরিবর্তিত রয়েছে।
রাজারহাট(কুড়িগ্রাম) ঃ গত ৩দিনে অবিরাম প্রবল বর্ষনে কুড়িগ্রামের রাজারহাটের নিুাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চর বিদ্যানন্দ, চতুরা, রামহরি, পাড়ামৌলা, তৈয়বখাাঁ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের বুড়িরহাট, খিতাবখাঁ, গতিয়াসাম, বড়দারগা ও নাজিমখান ইউনিয়নের সোমনারায়ন গ্রামসহ উপজেলার ২৫টি গ্রামে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। পানি বন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৫হাজার মানুষ। বিদ্যানন্দ, চর বিদ্যানন্দ, কালুয়ার চর ও দূর্গারাম আবাসন প্রকল্পে বাড়ী-ঘরে পানি উঠেছে।
এসব এলাকাসহ চরাঞ্চলের মানুষ চরম দূর্ভোগে পড়েছে। প্রবল বর্ষনে গত তিনদিনে জরুরী কাজ ছাড়া ঘরের বাইরে কেউ যায়নি। রাস্তা-ঘাট ও হাট-বাজারগুলো ছিল প্রায় জনশুণ্য। মেটোপথগুলো কদমাক্ত হয়ে গেছে। চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অপর দিকে গত ৭২ ঘন্টার মধ্যে পুরো ৪৮ঘন্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায়নি। ৭২ ঘন্টায় (২১ আগষ্ট) রাতে মাত্র ৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অনেক এলাকায় এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ উপজেলায় সামান্য বৃষ্টি শুরু হলেই শুরু হয় বিদ্যুৎ বিভ্রাট। ফলে অফিস ও বাসা বাড়ীর কাজ কর্ম ব্যাহত হয়।
এছাড়া বন্যার পানিতে সহস্রাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। আমন ধান গাছ পানিতে তলিয়ে গেছে। ভাদ্র (ভাদাই) মৌসুমী ধান, মরিচ, শাকসবজীসহ উঠতি ফসল ক্ষতি সাধিত হয়েছে। রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিস ইনচার্জ প্রদীপ কুমার রায় জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহেও বৃষ্টির পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। উপজেলা কৃষি অফিসার ষষ্টি চন্দ্র রায় জানান, বন্যায় শাকসবজির বেশী ক্ষতি হবে। তবে এখন পর্যন্ত ক্ষতির পরিমান নিরুপণ করা হয়নি। সাঘাটা যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধিএদিকে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও প্রবল বর্ষণে গাইবান্ধার সাঘাটায় যমুনা নদীর পানি ২০ সেন্টিমিটার বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় হলদিয়া, সাঘাটা ও জুমারবাড়ী ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সেই সাথে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫ হাজার পরিবার। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায় গত রোববার সকালে ১৯.৯২ সেন্টিমিটার ও বিকালে ২০.০২ সেন্টিমিটার পানি রেকর্ড করা হয়েছে। সাঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইট জানান, গোবিন্দি, কামারপাড়া, হাসিলকান্দি, হাটবাড়ী সহ ১০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নদীর তীরবর্তী হওয়ায় এসব এলাকার লোকজন ঘর থেকে বের হতে পারছে না। উপজেলা প্রশাসন বন্যা দূর্গতদের আশ্রায়ন কেন্দ্রে যাওয়ায় জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।
মুন্সীগঞ্জ: শিমুলিয়া (মাওয়া)-কাওড়াকান্দি নৌরুটে ফেরি চলাচল সার্ভিসে ব্যাপক-ক্ষতির মুখেগত চারদিন পর রবিবার সকাল সাড়ে ৯টায় সিমিত আকারে শুরু হয়েছে। এর আগে রাত দেড়টা থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে উভয় পাড়ে ১৫শ,শতাধিক ছোট বড় যান পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ ফেরি সার্ভিসে বিপর্যয় চলছে গত প্রায় দু’ সপ্তাহ ধরে।এতে দক্ষিাণঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের দুর্গতিও ব্যাপক-ক্ষতির মুখে বিআইডব্লিউটিসির সহ পড়তে হচ্ছে। এই দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিতে পড়েছে নেতীবাচক প্রভাব।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে আলাপকালে বলেন,জানাগেছে, নাব্যতা সংকটের কারণে অল্প সংখ্যক যানবাহন নিয়ে হালকা ও মাঝারী ধরণের ফেরিগুলো আপাততঃ চলাচল করছে। তাও চলবে জোয়ারে। খুব তারাতারি এ নৌরুটের জন্য হালকা ধরণের ফেরির ব্যবস্থা করা আছে। যা কিনা ৫ ফুট গভীরতার পানিতে চলাচল করতে পারে।এদিকে সকল যাত্রী ট্রাক ও বাস চালক এবং মালিকদের এই নৌ নৌরুট এড়িয়ে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া আছে । নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান শুক্রবার দুপুরে নৌপথ পরিদর্শণকালে. বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান সহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তা বৃন্দ বলেন, খুব তাড়াতাড়ি আমারা ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থার গতি বাড়িয়ে নদীতে গভীরতা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করছি। নদীতে গভীরতা ফিরিয়ে আনতে ড্রেজিং চলছে দ্রুত গতিতিত।
প্রয়োজনে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানির ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটার ব্যবস্থা কর হবে।মাওয়া বিআইডব্লিউটিসির, এজিএম এসএম আশিকুজ্জামান জানান এঘাট থেকে টানা ফেরিগুলো চালু করা হয়।তবে লৌহজং টানিংয়ে ড্রেজিংও পদ্মায় কম-পানিথাক্র কারনে কাওড়াকান্দি ঘাটে যাওয়া সম্ভব হয়নি ফের শিমুলিয়া ঘাটে ফিরে আসে।
প্রতিদিন প্রায় ২৫/২৬ লাখ টাকা শিমুলিয়া (মাওয়া)-কাওড়াকান্দি নৌরুটে ফেরি চলাচল সার্ভিসের আয় । টানা ৩দিন ধরে. পদ্মায় ড্রেজিংও অব্যাহত পানি হ্রাস,¯্রােতের তীব্রতায় অসংখ্য পলিতে এনৌরুট নাব্যতা সঙ্কট তাতে বর্তমানে আয় নেমে ৪থেকে ৫লাখ টাকায় এতে প্রতিদিন ২০লাখ টাকা বিআইডব্লিউটিসির ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে এখোনো। উভয় পাড়ে পর্যাপ্ত যানবাহনের চাপ রয়েছে। নৌরুটের চ্যানেলের লৌহজং টার্নিংয়ে খুবই ঝুুঁকিপূর্ণ অবস্থা দেখা দিয়েছে- এক্ষেত্রে জরুরীভিত্তিতে বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং বিভাগ আরো একটি ড্রেজার ঘূর্ণাবর্তে পলি জমা স্থানে পলি অপসারণ কাজ শুরু করা জরুরী । শেরপুর: ভারি বর্ষণ আর ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে শ্রীবরদীর ১০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভাসহ প্রায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট,বাড়িঘর, মসজিদ, মন্দির, কয়েক হাজার হেক্টর আমন ধানের ক্ষেত, মরিচ, বেগুন, শাক সব্জি, বীজতলা, শতাধিক মৎস্য খামার, পুকুর পানিতে ডুবে গেছে এবং কয়েক শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত গ্রামগুলুতে দেখা দিয়েছে খাবার পানির সংকট।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শুক্রবার রাতভর ভারি বর্ষণ আর ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী সিংগাবরুনা, রানীশিমুল, কাকিলাকুড়া, তাতিহাটি, গোশাইপুর, শ্রীবরদী সদর, পৌরসভা, ভেলুয়া, কেকেরচর, কুড়িকাহনিয়া ও গড়জরিপা ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত গ্রামগুলো হচ্ছে, মাটিমাটা, সিংগাবরুনা, গোবিন্দপুর, বরইকুচি, মাধবপুর, ভায়াডাঙ্গা, টেংগরপাড়া, বিলভরট, চক্রপুর, হালুহাটি, বালিজুরি, খাড়ামোড়া, রাঙ্গাজান, শিমুলকুচি, রানীশিমুল, কন্টিপাড়া, বকচর, গেরামারা, ভুতনিকান্দা, ঘোনাপাড়া, বনপাড়া, চককাউরিয়া, ষাইটকাকরা, জালকাটা, গিলাগাছা, চকবন্দি, হেরুয়া, শিমুলচড়া, কাউনেরচর, আশ্বিনীকান্দা, পানাতে বাড়ি, গোপালখিলা, লঙ্গরপাড়া, ভাঙ্গারপাড়াসহ প্রায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে করে সীমান্তবর্তী এ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দিসহ নানা দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে। রাস্তঘাট ও বাড়িঘরে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্যা কবলিত এলাকার লোকজন গরু-মহিষসহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হওয়াতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শনিবার ভায়াডাঙ্গা বাজার বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দোকানিরা দোকানের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার লোকজন জানান, ১৯৮৮ সালের বন্যার চেয়েও এবারের বন্যা ভয়াবহ আকার ধারন করেছে এবং ক্ষয় ক্ষতির পরিমান প্রায় কয়েক কোটি টাকা। জানাগেছে, ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা সোমেশ্বরী নদীর পানি দু’কূল ছাপিয়ে ফসলের মাঠ, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট প্লাবিত করেছে। বকচর গ্রামের মৎস্য খামার মালিক দেলোয়ার বলেন, ১৫ একর জমিতে মৎস্য খামার করেছি।
বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। হালুহাটি গ্রামের মোস্তফা বলেন, ৪০ একর জমিতে ৪ টি পুকুর করে মৎস্য চাষ করেছি, বন্যার পানিতে এসকল পুকুর তলিয়ে যাওয়ায় প্রায় ৫০ লক্ষধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ্ এফ এম মোবারক আলী জানান, ১৭ হাজার ২ শত ৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপন করা হয়েছে, এর মধ্যে বন্যায় ৩ হাজার ৩ শত ২৬ হেক্টর জমির আমন ধান পানিতে ডুবে গেছে। তাছাড়া, আরো ৪ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান পানিতে আংশিক নিমজ্জিত রয়েছে। বন্যার পানি বাড়লে ক্ষয় ক্ষতির পরিমান আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জামালপুর: পাঁচ দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জামালপুরের ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। রোববার দুপুর ২টায় জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীতে বিপদসীমার ২২ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্র নদে ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়। জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী সরওয়ার জাহান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার নোওয়ারপাড়া, বেলাগাছী, পার্থশী, সাপধরী ও কুলাকান্দি, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ডাংধরা, চর আমখাওয়া, হাতিভাঙ্গা ও বাহাদুরাবাদ এবং বকশীগঞ্জ উপজেলার বাট্টাজোড়, কামালপুর, বগারচর, মেরুরচর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
বন্যায় রোপা আমন খেত ডুবে গেছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এছাড়া, বন্যার পানিতে ভেসে গেছে অনেক পুকুরের মাছ।জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী আব্দুল খালেক জানান, রোববার সকাল থেকে বৃষ্টিপাত বন্ধ হলেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেলে বন্যার পরিধি আরো বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
নীলফামারী: বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও পানি সরেনি নীলফামারীর নিম্নাঞ্চল থেকে। কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে হাঁটু পানিতে তলিয়ে থাকা এলাকার মানুষগুলো পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। বাড়ি থেকে বের হতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরাঅন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পানিতে তলিয়ে থাকায় লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটছে শিক্ষার্থীদের। হাঁটু পানিতে ভিজে স্কুলে যেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
জেলা শহরসহ একই অবস্থা অন্যান্য উপজেলাগুলোরও।এদিকে ভারী বৃষ্টিপাত হলেও পানি বাড়েনি তিস্তা নদীতে। তবে গত চার দিনে তিস্তা নদীর আশপাশের এলাকায় আড়াইশ’ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড। জেলা জুড়ে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ঘর থেকে বের হতে পারছেন না নিম্ন আয়ের মানুষ। দিনমজুর ওইসব মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে।নীলফামারী শহরের শ্রমজীবী জয়নাল আবেদিন বলেন, গত পাঁচ দিন বৃষ্টির কারণে বাড়ি থেকে বের হতে পারিনি। অন্যের বাড়িতে শ্রম দিয়ে উপার্জিত টাকা দিয়ে সংসার চালাতে হয়।
বৃষ্টিপাতের কারণে ঠিকমত খেতেও পারছিনা পরিবার পরিজন নিয়ে।টানা বৃষ্টিপাতের কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। নিয়মিত স্কুলে যেতে পারছে না তারা। বৃষ্টি না থাকলেও হাঁটু পানি ভেঙে তবেই অনেক কষ্ট করে তাদের স্কুলে যেতে হচ্ছে।শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোতে। হাঁটু পানি জমে থাকায় পোশাক ভিজিয়েই তাদের কাজ কর্ম চালিয়ে যেতে হচ্ছে।মুন্সিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সাগরিকা শারমিন বলে, বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাঁটু পানি ভেঙে স্কুলে আসি। পানির ভেতর দিয়ে যেতে অনেক ভয় করে। চলার পথে গর্ত থাকায় পড়ে যাওয়ারও ভয় থাকে।অনেকেই আবার পড়ে গিয়ে বই-খাতাও ভিজিয়ে ফেলে।
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী লাভলী আক্তার বলে, চার দিন থেকে হাঁটু পানি ভেদ করে স্কুলে ক্লাস করছি আমরা।বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মান্নান জানান, হাল্কা বৃষ্টিপাত হলেও পানি বন্দি হয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। গত কয়েকদিন থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় ভোগান্তি আরো বেড়েছে শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকদের।প্রধান শিক্ষক আকলিমা বেগম লাইলী জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে সাড়ে তিনশ শিক্ষার্থী রয়েছে। বৃষ্টিপাতের কারণে আসা যাওয়া সমস্যা হয় সবার। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। অতি দ্রুত বিদ্যালয়ের মাঠটি ভরাট করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।জেলা প্রশাসক মো. জাকীর হোসেন বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার কথা শিকার করে বলেন, বন্যার বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। পানি নামতে শুরু করেছে তবে এখনো ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। জলাবদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সারিয়াকান্দি(বগুড়া): উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ১ হাজার ৮৫ হেক্টর জমির ফসল প্লাবিত হয়েছে।উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চালুয়াবাড়ী, কাজলা, কর্ণিবাড়ী, বোহাইল, কামালপুর, কুতুবপুর, চন্দনবাইশা, হাটশেরপুর, সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের মাসকালাই ৩০ হেক্টর, আউশ ৪৭৫ হেক্টর, বীজতলা ৫০ হেক্টর, শাক-সবজি ১০ হেক্টর, রোপা আমন ৪২০ হেক্টর মিলে মোট ১ হাজার ৮৫ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
এতে ব্যাপক কৃষকের ক্ষতি হয়েছে।২৩ আগস্ট রোববার বিকেল ৩টায় সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ কামরুজ্জামান ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে।পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল মোতালেব জানান, যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার প্রায় ২৭ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদীর পানির বিপদসীমা ১৬.৭০ সেন্টিমিটার, বর্তমানে রয়েছে ৪৩ সেন্টিমিটার
দিনাজপুর: অবিরাম বর্ষণে দিনাজপুরে পূর্ণভবা, আত্রাই ও ইছামতি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জেলার নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে।গত তিন দিনের বৃষ্টিতে জেলার জনজীবন বিপর্যস্ত্য হয়ে পড়েছে। টানা বর্ষণে দিনাজপুর শহরের বাঙ্গিবেচা ঘাট, হঠাৎপাড়া, সাধুর ঘাট, দপ্তরিপাড়া, ৮,৯ ও ১০নং উপশহর, ফুলবাড়ী উপজেলার রাজারামপুর, সুজাপুর, খয়েরবাড়ী ও বেতদীঘি, বিরল উপজেলার, পলাশবাড়ী, চকেরহাট, হাকিমপুর উপজেলার হিলি স্থলবন্দরসহ এর আশপাশ এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন নিম্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।এছাড়া দিনাজপুর- গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কে বৃষ্টিতে সৃষ্ট খানা-খন্দকের কারণে ৩টি মালবোঝাই ট্রাক ও ২টি মাইক্রোবাস উল্টে খাদে পড়ে গেছে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।