দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২১ আগস্ট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এগার বছর আগে তাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলার পেছনে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমান যে জড়িত ছিলেন, সে বিষয়ে তার কোনো সন্দেহ নেই। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমান যেমন জড়িত, তেমনি ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান জড়িত বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী ।শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় শহীদদের স্মরণে এ সভার আয়োজন করা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সরকারের সময় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ওই হামলায় যারা জড়িত ছিল তাদের দেশের বাইরে চলে যেতে সহায়তা করেছিল তখনকার সরকার। হামলার আলামতও মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল।তিনি বলেন, তারা হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগের ওপর দায় চাপাতে থাকলো। নিজেদের অপকর্মের দায় অন্যের ওপর চাপানো বিএনপি-জামায়াতের পুরনো অভ্যাস।
তারা বলতে থাকলো, আমি নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে গ্রেনেড নিয়ে এসেছিলাম। কীভাবে পারে এমন অপপ্রচার চালাতে?আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তারা নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে বলেছিল, আমি নাকি বিরোধীদলের নেতাও হতে পারবো না। এতো বড় ভাগ্য গণনা তারা কীভাবে করতো?প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। মানুষ পুড়িয়ে মারার জন্য খালেদা জিয়া কোনো দিন কোনো লজ্জাবোধ করেননি। আরকেদিকে মানুষ পোড়ানোর হুকুম আসে লন্ডন থেকে। লন্ডনে বসে হুকুম দেয়। যারা মানুষ মারে-পোড়ায়, তারা কোনো গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা মানুষ মেরেই রাজনৈতিক ফায়েদা লুটতে চায়, এটাই তাদের রাজনীতি।
তিনি পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণ করে বলেন, স্বজন হারিয়ে বেঁচে থাকাটা যে কী কষ্টের! আমরা দুই বোন এটা হাড়ে হাড়ে টের পাই। মাত্র ১৫ দিন আগে দেশ ছেড়ে গিয়েছিলাম। স্বামীর কর্মস্থলের জন্য যেতে হয়েছিল। সঙ্গে রেহানাকে নিয়ে যাই। ফিরে এসে পরিবারের কাউকে পাইনি। শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান কোনো দিন চাননি আমি দেশে ফিরে আসি। জিয়া ক্যুর রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। এমনকি জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতিষ্ঠিত করেন। তাদের হাতেই তুলে দেন লাল-সবুজের পতাকা।
১৫ আগস্টের সঙ্গে যেমন জিয়া জড়িত ছিলেন, ২১ আগস্টের হামলার সঙ্গে খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমান জড়িত।তিনি বলেন, বাংলাদেশের সম্পদ লুটে বিদেশে পাচার এবং নিজেদের সম্পদ ভারী করাই তাদের ক্ষমতায় আসার লক্ষ্য। আর আমরা যখন ক্ষমতায় আসি তখন গ্রাম পর্যায় থেকে শুরু করে পুরো বাংলাদেশের মানুষের জন্য কাজ করি।বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পৌঁছান শেখ হাসিনা। সেখানে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ বেদীতে ২১ আগস্টের শহীদদের প্রতি প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শ্রদ্ধা জানান। এরপর দলের নেতাদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ও ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতের পর প্রধানমন্ত্রী সভায় বক্তৃতা শুরু করেন। ওই হামলায় নিহতদের স্মরণে শুক্রবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে নির্মিত অস্থায়ী বেদীতে শ্রদ্ধা জানানোর পর এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ১৫ অগাস্টের ঘটনার সাথে জিয়া যেমন জড়িত ছিল, ২১ অগাস্টের ঘটনার সাথে খালেদা জিয়া ও তার ছেলে জড়িত- তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সময়ে ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় ওই হামলায় ২৪ জন নিহত হন। তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার শ্রবণেন্দ্রীয় ওই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।সেদিনের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেদিন আমরা সন্ত্রাসবিরোধী র্যারলি করতে গিয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হই। যে গ্রেনেড যুদ্ধে ব্যবহার হয়, সেই গ্রেনেড আমাদের সভায় ছুড়ে মেরে হত্যা করা হয়। সেই হামলায় কেন্দ্রীয় নেত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারবিদ্ধ হয়ে পঙ্গু হন অনেকে।
বিভিন্নভাবে আহত হন বহু ব্যক্তি, যাদের অনেকেরই স্বাভাবিক জীবনে ফেরা হয়নি।আইভী রহমানসহ নিহতদের স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, কয়েকশ নেতাকর্মী আহত হয়। আমার সামনে অনেকে রয়েছে, আমার সাথে অনেকে আছে, যারা এখনো সেই স্প্লিন্টার নিয়ে চলছে।সেদিনের সেই সমাবেশস্থলেই আয়োজন করা হয় আলোচনাসভার। সেদিন যে বুলেটপ্রুফ গাড়িতে করে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসেছিলেন, শুক্রবারও সেই গাড়িতে করেই তিনি শোকবেদীতে পৌঁছান। আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা বলেন, তখন বিএনপি ক্ষমতায়।
আলামত রক্ষা করা তো দূরের কথা, আলামত নষ্ট করে। সিটি করপোরেশনের গাড়ি এনে আলামত দ্রুত নষ্ট করে।… দুটো গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়নি, সেগুলো সংরক্ষণ না করে নষ্ট করে দেয়। শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিএনপির মদদে ওই হামলা চালানো হয় বলে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করে আসছে। আর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে এ হামলার তদন্ত যে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা হয়েছিল, তা পরে আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে।
২০১১ সালে সিআইডি এ মামলায় যে সম্পূরক অভিযোগপত্র দিয়েছে, তাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানকেও আসামি করা হয়েছে।অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে ২১ অগাস্টের হামলার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে আসছে বিএনপি। সেই সময় সরকারে থাকা এ দলটির নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে নিজে নিজেকে মেরেছি।
কি ন্যক্কারজনক! যারা মেরেছিল, তাদের বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্তা করে দেওয়া হল!বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, যারা বাংলাদেশকে তালেবান রাষ্ট্র করার স্লোগান দিয়েছে, খালেদা জিয়া তাদের সমর্থন দিয়েছে।… ১৭ অগাস্ট, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি করা- এটাই তাদের প্রচেষ্টা।আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাহারা খাতুন, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দীলিপ বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ এ আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন।