দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২০ আগস্ট: রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে আটক করা হয়েছে, যারা প্রতারক চক্রের সদস্য বলে পুলিশের দাবি। গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার এস এম জাহঙ্গীর আলম সরকার জানান, বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আটককৃতরা হলেন- বিনিয়োগ ও পরিকল্পনাকারী হাজী আব্দুল গফুর, দলনেতা মো. টুটুল বিশ্বাস, সেকেন্ড-ইন-কমান্ড কাজী সারোয়ার জামাল ওরফে নেতাজী, আলহাজ্ব মো. ইব্রাহিম, মো. মনির হোসেন, মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে বাচ্চু।এদের মধ্যে আলহাজ্ব মো. আব্দুল গফুর, আলহাজ্ব মো. টুটুল বিশ্বাস ওরফে সুমন এ বছর পকেটমারের উদ্দেশ্যে হজ পালন করতে যাচ্ছিলেন। আরেক পকেটমার মো. রওশনও তাদের সঙ্গে সৌদি আরব যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। তবে রওশন এখন পলাতক।
জাহঙ্গীর আলম সরকার বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে আবদুর গফুর নামের একজন রয়েছে, যে এই অজ্ঞান পার্টির দলনেতা। তাদের তিনজনের কাছে হজের ভিসাও পাওয়া গেছে।ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশে এ ধরনের প্রতারক চক্রের তৎপরতা বেড়ে যায়। সাধারণ মানুষের ভাষায় এরা অজ্ঞান পার্টি হিসাবে পরিচিত।এদের খপ্পরে পড়ে চেতনানাশক ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে।
অনেকে আবার সর্বস্ব হারিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী শারীরিক সমস্যায় ভুগেছেন।প্রতি বছরই পকেটমারের একটা বা দুটো গ্র“প হজে গিয়ে পকেটমারসহ নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড করে থাকে। এ বছর এ চক্রের তিন সদস্য বাংলাদেশ থেকে হজে যাচ্ছিলেন পকেটমারের জন্য।এ তিনজনকে হজ্জে পাঠাতে পরিকল্পনাকারী হাজী আব্দুল গফুর ১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। এ বছর হজ থেকে তার আয়ের টার্গেট ছিল এক কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানিয়েছেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।বৃহস্পতিবার সকালে অভিযান চালিয়ে ওই তিনজনসহ অজ্ঞানপার্টির মোট ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। এ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।মনিরুল ইসলাম জানান, আলহাজ্ব মো. টুটুল বিশ্বাস সৌদি আরবে ধরা পড়েছেন এবং দু’বছর কারাগারে ছিলেন। এবার এই তিনজন হজে যাওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছিলেন।তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক ৩-৪টি গ্র“প রয়েছে, যারা প্রতিবছর হজ গিয়ে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড করে থাকেন।
এমনকী বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কিছু রোহিঙ্গা নাগরিকও সেখানে গিয়ে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করেন।এতে করে দেশের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে বলেও দাবি করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।এ সম্পর্কে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্কতামূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে মনিরুল ইসললাম বলেন, আমরা বিষয়টি সম্পর্কে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। তারা কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালে আমরা সেভাবেই পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
এদিকে, ২০ আগস্ট সকালে শাহবাগ এলাকা থেকে অজ্ঞান পার্টির ছয় সদস্যকে আটক করে পুলিশ। তারা হলেন- মো. নুরুল আনোয়ার, মো.সুজন খান, মো. আবুল বাশার, মো. আবুল হাসান, মো. আক্তার হোসেন, মো. আবুল কালাম।একই সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম জানান, এই গ্র“পের ৮-১০ জন সদস্য ও আশেপাশের জেলায় প্রতিদিন পাবলিক বাসের যাত্রীদের আচার ও অন্যান্য খাবার খাইয়ে অজ্ঞান করে সর্বস্ব নিয়ে বাস থেকে নেমে যায় এরা। এই গ্র“পের নেতৃত্বে আছেন নুরুল আনোয়ার এবং সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মো. সুজন খান।রাজধানীর বিভিন্ন অজ্ঞানপার্টি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, পথিমধ্যে অপরিচিত কারো কাছ থেকে খাবার খেতে সতর্ক থাকুন।