দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৯ আগস্ট ২০১৫: নিম্ন আদালত থেকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলার নথি তলব এবং ২০০৮সালে দুদকের দেওয়া অব্যাহতিপত্র তলব করতে খালেদা জিয়ার করা আবেদনেরওপর রোববার (২৩ আগস্ট) আদেশ দেবেন হাইকোর্ট।বুধবার বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি আবদুর রবের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী ও দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।এই আদালতেই একই মামলা বাতিল বিষয়ে প্রায় সাতবছর আগে জারি করা রুলের উপর শুনানি চলছে। এর আগে মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আবেদন দুটি দায়ের করেন।আবেদন দুটি হলো- নিম্ন আদালতে এই মামলা সংশ্লিষ্ট যেসব নথিপত্র রয়েছে সেগুলো উচ্চ আদালতে তলব করা। আর দ্বিতীয় আবেদন হলো-এ মামলায় দুদকের প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করে যে চার্জশিট দিয়েছিলো সে চার্জশিটের কপি উচ্চ অদালত আনা। ওই কর্মকর্তা বেগম খালেদা জিয়াকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত চার্জশিট দাখিল করেছিলেন।কিন্তু পরবর্তিতে দুদক এ মামলাটি তদন্ত করতে নতুন করে একজন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়। মামলাটি দুদক পুনরায় তদন্ত করতে ওই কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়। তিনি এ মামলা তদন্ত করে খালেদা জিয়াসহ বেশ কয়েকজনকে আসামী করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান খালেদার আইনজীবী ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা এ মামলায় নিম্ন আদালতে যেসব নথিপত্র রয়েছে সেগুলো উচ্চ আদালতে তলব করার আবেদন করেছি। এবং এ মামলায় দুদকের ১ম তদন্তকারী কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামের মামলাটি তদন্ত করে যে চার্জশিট দিয়েছিলো সে চার্জশিটের কপি উচ্চ অদালত আনতে আবেদন করেছি।তিনি বলেন, দুদক আইনে একই বিষয়ে পুনরায় তদন্ত করার কোনো বিধান নাই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরো সাক্ষ্য প্রমাণের প্রয়োজন হলে আদালতের অনুমতি নিয়ে তা করতে হবে। এই মামলায় দুদক আদালতের কোনো অনুমতি ছাড়াই দ্বিতীয় বার তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। যা দুদক আইনের পরিপন্থি। আমরা এ জন্য দুটি আবেদন করেছি।খালেদা জিয়া ও ১০ মন্ত্রীসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে বিগত তত্ত্বাবাধয়ক সরকারের সময় এই মামলা করা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে- চীনা প্রতিষ্ঠান কনসোর্টিয়াম অব চায়না ন্যাশনাল মেশিনারিজ ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের (সিএমসি) সঙ্গে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি করার মধ্য দিয়ে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতি করেছেন। এ অভিযোগ এনে গত তত্ত্বাবধায়ক আমলে জরুরি অবস্থা চলাকালীন সময়ে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্র“য়ারি খালেদা জিয়া ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক।শাহবাগ থানায় করা এ মামলায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতি হিসেবে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির অনুমোদন দিয়ে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়েছিল খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। পরে এ মামলা দায়ের ও অনুমোদনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে বাতিল আবেদন করা হয়।
রাষ্ট্রের কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনকে আসামি করে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর মতিঝিল থানায় গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। মামলাটির অনুমোদনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই আদালত মামলার কার্যক্রম স্থগিত এবং রুল জারি করেন। এ ছাড়া এ মামলা জরুরি ক্ষমতা বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৭ সালে আলাদা একটি রিট আবেদন করা হয়। হাইকোর্ট এ বিষয়েও রুল জারি করেন।দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি উত্তোলন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম এবং রাষ্ট্রের ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতি ও আত্মসাৎ করার অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্র“য়ারি শাহবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করে দুদক। এ মামলায় একই বছরের ৫ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।এরপর মামলাটি বাতিল চেয়ে ওই বছরই হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া।
ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সে বছরের ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন। একই সঙ্গে মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না তার কারণ জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এই রুলের উপর বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি আবদুর রবের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি চলছে।এ অবস্থায় মামলার নথি তলব চেয়ে মঙ্গলবার আবেদন করা হয়েছে।ওই মামলায় খালেদা জিয়া ছাড়াও অপরাপর আসামিরা হলেন-এম সাইফুর রহমান (মৃত), আবদুল মান্নান ভূঁইয়া (মৃত), মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার, এম শামসুল ইসলাম (মৃত), আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, এ কে এম মোশাররফ হোসেন, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব নজরুল ইসলাম, পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান এস আর ওসমানী, সাবেক পরিচালক মঈনুল আহসান, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ও খনির কাজ পাওয়া কোম্পানির স্থানীয় এজেন্ট হোসাফ গ্র“পের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন।