হাসানুল-হক-ইনু_6456

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮ আগস্ট ২০১৫: সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের গ্রেপ্তারের ঘটনাকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, তিনি যাতে আইনি সুরক্ষা পান সেভাবে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।মঙ্গলবার দুপুরে তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তথ্যমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।তিনি বলেন, গণমাধ্যমের কোনো কর্মী তথ্য সরবরাহ করতে গিয়ে নিগৃহীত হলে আমরা তাকেও সহযোগিতা করবো।সম্প্রতি বিএনপির পক্ষ থেকে যে নির্বাচনের দাবি তোলা হয়েছে সে প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এই মুহূর্তে নির্বাচন নিয়ে কোনো সঙ্কট নেই। দেশে আগাম বা মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো বাস্তব কারণ বা প্রয়োজন নেই। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কোনো রকম আইনি সুরক্ষা থেকে উনি (প্রবীর) যাতে বঞ্চিত না হন, সেজন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা নজর রাখব।

ফেইসবুকে লিখে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সুনাম ক্ষুন্নের অভিযোগে গত রোববার রাতে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের এক মামলায় সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ, যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা একে চিহ্নিত করেছেন তথ্য-প্রযুক্তি আইনের অপব্যবহার হিসেবে।তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রবীর সিকদারকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। আমার ঘনিষ্ঠজন। তিনি যখন আরেকবার বিপদে পড়েছিলেন, আমার ক্ষুদ্র সামর্থ্য অনুসারে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। প্রবীর শিকদারের গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনা দুঃখজনক বলে আমি মনে করি।তবে প্রবীর সিকদারের গ্রেপ্তারের ঘটনা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতায় বাধা হবে বলে মনে করেন না ইনু।এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের ১২ শ’ পত্রিকা এবং ত্রিশটির উপরে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে কয়েক হাজার সাংবাদিক কর্মরত আছেন। অবাধ তথ্য প্রবাহ ‘বন্ধ করার কোনো আইন’ সরকারের কাছে নেই।তথ্য প্রবাহ, তথ্য সংগ্রহ করা, সমালোচনা করা, ভিন্নমত প্রকাশ করার যত রকম অধিকার আছে, সব রকম অধিকার ভোগ করছেন। এই সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন করে আপনারা অধিকার চর্চা করছেন। কোনো ব্যক্তির গ্রেপ্তারের উপর নির্ভর করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে কি-না, তা বিবেচনা করা ঠিক নয়, বলেন ইনু।

গণমাধ্যমের কোনো কর্মী যদি প্রশাসন, কোনো জঙ্গিবাদি গোষ্ঠী বা মাফিয়া চক্রের দ্বারা নিগৃহীত হয়, তথ্য মন্ত্রণালয় এবং সরকার সেখানে গণমাধ্যমকর্মীর পক্ষে দাঁড়ায় বলেও দাবি করেন তিনি। কোনো সাংবাদিক তথ্য তুলে ধরার জন্য নিগৃহীত হচ্ছেন কি-না, সেই ব্যাপারাটায় যদি বলি, তাহলে অবশ্যই আমরা সাংবাদিকের পক্ষে থাকব, গণমাধ্যমের পক্ষে থাকব। আমাদের সরকার অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করছে। ফেইসবুকে লেখালেখিকে কেন্দ্র করে হুমকি পাওয়ায় নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরে ঢাকায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গিয়েছিলেন একাত্তরে শহীদের সন্তান প্রবীর সিকদার। কিন্তু পুলিশ ওই জিডি নেয়নি জানিয়ে গত ১০ অগাস্ট ফেইসবুকে নিজের জীবন নিয়ে ঝুঁকির কথা বলেন এই সাংবাদিক।আমার জীবন শঙ্কা তথা মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী থাকবেন শিরোনামের ওই স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন- আমি খুব স্পষ্ট করেই বলছি, নিচের ব্যক্তিবর্গ আমার জীবন শংকা তথা মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবেন : ১. এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি, ২. রাজাকার নুলা মুসা ওরফে ড. মুসা বিন শমসের, ৩. ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকার ওরফে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এবং এই তিনজনের অনুসারী-সহযোগীরা।

এই লেখার মাধ্যমে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে অভিযোগ তুলে রোববার রাতে ফরিদপুর সদর থানায় মামলা করেন স্বপন পাল নামের এক আইনজীবী। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই ঢাকা থেকে প্রবীর সিকদারকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন তাকে ফরিদপুরে পাঠানো হয়। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় দায়ের করা ওই মামলায় মঙ্গলবার প্রবীরকে তিন দিনের রিমান্ডেও পেয়েছে পুলিশ। উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ এবং দৈনিক বাংলা ৭১ নামের পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক প্রবীর সিকদার আগে সমকাল ও কালের কণ্ঠে কাজ করেছেন। দৈনিক জনকণ্ঠের ফরিদপুর প্রতিনিধির দায়িত্বপালনকালে ২০০১ সালে সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি। এরপর থেকেই তিনি পঙ্গু জীবন যাপন করছেন।

মামলার বিষয়টি আগে থেকে জানা ছিল না বলে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন সোমবার টেলিফোনে বলেন, ডাইরেক্ট সে লেখতেছে, সে মারা গেলে আমি তাকে খুন করছি, তাহলে আমি আইনের আশ্রয় নিব না? এটা কি আমি কোনো অন্যায় কাজ করছি?আর তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা হলে গ্রেপ্তার করা ছাড়া কোনো ‘উপায় থাকে না’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী ইনু সাংবাদিকদের বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আপনাকে যে রকম একটা মুক্ত বিশ্বের হাতছানি দিচ্ছে, সে রকম এটা আবার প্রযুক্তির ডিজিটাল সমাজে সাইবার অপরাধীদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। সাইবার অপরাধী থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ডিজিটাল সমাজকে রক্ষা করা একটি গণতান্ত্রিক সরকারের কর্তব্য। সেই কর্তব্য সম্পাদনে এখন যে আইন আছে, আমরা সেটা ব্যবহার করে থাকি।

উন্নত বিশ্বের মতো একটি সমন্বিত সাইবার অপরাধ আইন তৈরির চেষ্টা করছি। যে আইনটা আমাদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুফলভোগকারী কোটি কোটি জনগণকে রক্ষার জন্য কাজ করবে।মত প্রকাশের স্বাধীনতার চর্চা করার ক্ষেত্রে সবাইকে দেশের প্রচলিত আইন, ধর্মীয় অনুভূতি এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংক্রান্ত আইনের দিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন তথ্যমন্ত্রী।তিনি বলেন, এই মুহূর্ত পর্যন্ত আপনি দেখবেন,ফেইসবুক বা সামাজিক মাধ্যমের কোনো মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, যাকে সমালোচনা করার জন্য বা নতুন তথ্য দেওয়ার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে।মামলা দায়েরের আগেই আটক করা বা একজনের বিরুদ্ধে লেখা নিয়ে অন্যের মামলা দায়ের আইনের ব্যত্যয় কি-না, এমন প্রশ্নে ইনু বলেন, প্রবীর সিকদারের গ্রেপ্তারে প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তার আইনগত প্রক্রিয়ায় কোন ভুল-ত্র“টি যদি থাকেও, যেহেতু বিষয়টি ইতোমধ্যে আদালতে চলে গেছে, সেখান থেকে তিনি ন্যায়বিচার পাবেন। নিষ্পত্তি যাতে সঠিকভাবে হয়, সেটা আমি দেখব।