cf9ffdbd3c2ff70c4849d2c70e8151f5-SLM_7004

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮ আগস্ট ২০১৫: বিজ্ঞানমনস্ক লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায় ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারীসহ তিন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে বলে দাবি করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-৩। সোমবার রাতে রাজধানীর দুটি স্থান থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন তৌহিদুর রহমান, সাদেক আলী ও আমিনুল মল্লিক। র‌্যাবের দাবি, তাঁরা নিষিদ্ধ সংগঠন আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। এর মধ্যে তৌহিদ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক।র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর নীলক্ষেত থেকে প্রথমে সাদেককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে, তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ধানমন্ডির স্টার কাবাবের সামনে থেকে তৌহিদুর ও আমিনুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।র‌্যাবের ওই কর্মকর্তার দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তৌহিদ ও সাদেক অভিজিৎ ও অনন্ত হত্যায় পরিকল্পনা ও হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসিমউদ্দিন রহমানীর কাছ থেকে হত্যার নির্দেশনা পেতেন সাদিক ও তাঁর ছোট ভাই আবুল বাশার। সেই অনুযায়ী তৌহিদুর হত্যার পরিকল্পনা করতেন। আর সাদিকসহ আরও চারজন হত্যাকাণ্ডে অংশ নিতেন।মুফতি মাহমুদ খানের ভাষ্য, অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে রমজান, নাঈম, জুলহাস, জাফরান ও সাদিক অংশ নেন। গত ২৬ ফেব্র“য়ারি অভিজিৎকে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের তিন ঘণ্টা আগে মুহসীন হলের মাঠে ওই পাঁচজন জড়ো হন। সেখানে দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে রমজান ও নাঈম বইমেলায় গিয়ে অভিজিৎকে অনুসরণ করেন। পরে অভিজিৎকে তাঁরা কুপিয়ে হত্যা করেন।

অভিজিৎ হত্যাকারী এ ৫জনই একইভাবে সিলেটের অনন্ত দাশ বিজয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটান।র‌্যাবের পরিচালক জানান, তৌহিদুর রহমান মূলত জসিম উদ্দিন রাহমানির (বর্তমানে কারাগারে আটক আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সংগঠক) অনুপস্থিতিতে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আর্থিক বিষয় দেখাশোনা এবং সকল হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করতেন। তিনি বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী, কিন্তু ব্রিটিশ নাগরিক এবং যুক্তরাজ্যের একজন আইটি বিশেষজ্ঞ বলেও দাবি করে র‌্যাব।জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা গেছে, তৌহিদুর রহমান অভিজিৎ ও অনন্ত বিজয় হত্যাকাণ্ডের কার্যক্রম ও সকল গতিবিধি নজর রাখতেন।

নব্বইয়ের দশকে তৌহিদুর যুক্তরাজ্যে গমন করেন এবং আইটি বিষয়ে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে জসিম উদ্দিন রাহমানির মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগঠনের সার্বিক ও আর্থিক বিষয় পরিচালনা করে আসছেন।মুফতি মাহমুদ খান জানান, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, জসিম উদ্দিন রাহমানির কাছ থেকে ব্লগার হত্যাকাণ্ডের সব ধরনের নির্দেশনা আসতো। আটককৃত সাদেক আলীর সঙ্গে ২০০৭ সালে জসিম উদ্দিন রাহমানির পরিচয় হয়। পরবর্তীতে তিনিও জসিম উদ্দিনের মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ও তার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।আটককৃত অপর আসামি আমিনুল মল্লিকও আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সক্রিয় সদস্য। তিনি সংগঠনের সকল সদস্যকে আত্মগোপনে ও পালিয়ে দেশের বাইরে যেতে তাদের নামে পাসপোর্ট তৈরি করে দিতেন। জেল থেকে রাহমানির কাছ থেকে নির্দেশনা নিয়ে মিঠু ও তার আপন ছোট ভাই আবুল বাশারের মাধ্যমে বিভিন্ন সদস্যকে সরবরাহ করতেন সাদেক আলী।

মুফতি জানান, অভিজিৎ হত্যাকারী এ ৫ সদস্য একইভাবে সিলেটের অনন্ত দাশ বিজয় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেন বলেও স্বীকার করেছেন আটককৃতরা।মুফতি মাহমুদ জানান, অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের তিন ঘণ্টা আগে তারা মহসীন হলের সামনে বৈঠক করেন। এরপর সবাই বইমেলায় অবস্থান নেন। পরে অভিজিৎ মেলা থেকে বের হলে সময় সুযোগ বুঝে রমজান ও নাঈম সরাসরি ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে তাকে হত্যা করেন।জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা গেছে, রমজান কালোজিরা ও মধু বিক্রেতার ছদ্মবেশে রাজধানীতে ঘুরে বেড়ান। এ হত্যাকাণ্ডের পর তৌহিদুর রহমানের নির্দেশে সাদেকসহ জুলহাস ও জাফরানের দায়িত্ব ছিলো অনলাইনের মাধ্যমে আনসারুল্লাহ বাংলা-১ থেকে শুরু করে বিভিন্ন নামে দায় স্বীকার করা।