দৈনিকবার্তা-গৌরনদী, ১৭ আগস্ট ২০১৫: শোকাবহ আগষ্টেও নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে বেপরোয়া হয়ে উঠছেন গৌরনদী পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক হারিছুর রহমান। তার একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে উত্তর বরিশালের শান্ত গৌরনদী ক্রমেই অশান্ত হয়ে উঠছে। দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে চরম অসন্তোষ।সূত্রমতে গত গৌরনদী পৌরসভার নির্বাচনে পারিবারিক সূত্রে পাওয়া অরাজনৈতিক হারিছ আ’লীগের ব্যানারে মেয়র নির্বাচিত হন। মেয়র নির্বাচিত হয়েই যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান তিনি। কিছুদিন পরেই স্থানীয় সংসদ সদস্যের আস্থাভাজন হয়ে গৌরনদী উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপরই সাবেক চীফ হুইপ জননেতা আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য গৌরনদীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও চরমপন্থীদের সাথে হাত মিলিয়ে শুরু করেন নিজের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড।
নিজের আধিপত্য জানান দিতে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে ফিল্মি ষ্টাইলে হামলা চালান সরকারী হাসপাতাল, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, কলেজ, মসজিদসহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এমনকি গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা যেখানে বঙ্গবন্ধুর ছবি আকাঁয় ব্যস্ত ঠিক সেদিনই মেয়র হারিছের বড় ভাই আকবর হোসেন ফারুকের সাথে কথাকাটির বিরোধকে কেন্দ্র করে মাহিলাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগ নেতা সৈকত গুহ পিকলুকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সশস্ত্র হামলা চালায় হারিছ ও সন্ত্রাসী বাহিনী। ভেঙ্গে গুড়িয়ে ফেলে মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদে টানানো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি, ডিগ্রি কলেজ, মসজিদসহ ১০ টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। এঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় গোটা বরিশালে। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির আড়ালে এখন বহাল তবিয়তে গৌরনদীতে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে শান্ত গৌরনদীতে অশান্ত করে তুলছেন মেয়র হারিছ।গৌরনদী উপজেলা যুবলীগ নেতা সৈকত গুহ পিকলু জানান, বরিবার জাতীয় শোক দিবসের কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বাটাজোর ইউনিয়ন আ’লীগের আয়োজনে দোয়া-মিলাদ অনুষ্ঠানে শতাধিক দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে গৌরনদী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফরহাদ মুন্সী, গৌরনদী পৌর আ’লীগের সভাপতি মনির হোসেন মিয়া, যুবলীগ নেতা সলিল গুহ পিন্টু ও যুবলীগ নেতা রেজাউল করিম টিটু কমিশনার দলীয় কর্মসূচীতে অংশগ্রহন করি।
কর্মসূচীতে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের দেখেই কর্মসূচী পন্ড করার চেষ্টা চালায় মেয়র হারিছ ও তার সহযোগীরা। পরে পুলিশ মোতায়েনের কারনে কোন রকম অঘটন ছাড়াই সফল কর্মসূচী পালন করে নেতাকর্মীরা বাড়ীতে চলে যান। তিনি আরও জানান রাত আটটায় আমার ছোট ভাই সলিল গুহ পিন্টু, যুবলীগ নেতা মাসুদ ও শিপনকে নিয়ে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে চা পান করছিলো। হঠাৎ অতর্কিত ভাবে পৌর মেয়র হারিছের নির্দেশে সন্ত্রাসী টেরা আল আমিন, জিয়া হাওলাদার, দেলোয়ার হাওলাদারের নেতৃত্বে ১০/১২ জন সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্র নিয়ে যুবলীগ নেতা সলিল গুহ পিন্টু ও মাসুদকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে। হামলায় পিন্টুর মাথা ও গায়ে একাধিক কোপ লেগে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। খবর পেয়ে গৌরনদী থানা পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে গৌরনদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরন করেন।
যুবলীগ নেতা পিন্টুকে হত্যার চেষ্টার কথা শুনে তাৎক্ষনিক শেবাচিম হাসপাতালে ছুটে আসেন কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। এছাড়াও অপরাধীদের গ্রেফতারের জন্য থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক চীফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। গৌরনদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আলাউদ্দিন জানান, যুবলীগ নেতা পিন্টুর উপর আক্রমনকারী দু’জনকে আটক করেছে থানা পুলিশ। বাকীদেরও গ্রেফতারের অভিযান চলছে। অপরদিকে যুবলীগ নেতা পিন্টুকে হত্যা চেষ্টার পর সোমবার দুপুরে মেয়র হারিছের নেতৃত্বে গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ড ও বন্দর এলাকায় মহড়া দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এঘটনায় গৌরনদীতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শোকের মাসে যুবলীগ নেতা সলিল গুহ পিন্টুর উপর আক্রমনকারী পৌর মেয়র হারিছসহ সকল সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর কাছে দাবী জানিয়েছেন গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগসহ সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।