দৈনিকবার্তা-কক্সবাজার, ১৪ আগস্ট: টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদের ছেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী ও মানবপাচারকারী মোস্তাক আহমদ। রহস্যজনক অপহরণের তিন দিন অতিবাহিত হচ্ছে। প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে করা হয়েছে মামলাও। এরপরও অবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে মোস্তাক আহমেদের।
টেকনাফ থানায় পিতার দায়ের করা আবেদনে মোস্তাকের বিরুদ্ধে কেনো অভিযোগ ও মামলা না থাকার কথা বলা হলেও রাষ্ট্রয়ি তালিকায় ইয়াবা-মানবপাচারকারী হিসেবে মোস্তাকের নাম থাকায় তার অপহরণ নিয়ে হিসেব মিলাতে পারছেন না রাজনৈতিক বোদ্ধা মহলও।মোস্তাকের বাবার দাবি অনুসারে তাকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোক পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে প্রশাসন এ দাবি স্বীকার করছে না। আবার তাকে প্রশাসন ছাড়া কোনে দুর্বৃত্তচক্র নিয়ে গেছে কি-না তাও বলতে পারছে না আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। সত্যি যদি প্রশাসন না নিয়ে থাকে তাহলে মোস্তাকের রহস্যজনক অপহরণ চরম উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে।
এর কারণে আইনশৃংখলার অবনতি নিয়ে একটি বিশাল প্রশ্ন সামনে চলে আসে। উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহাম্মদের তার ছেলে খুন হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন থানায় জমা দেয়া এজাহারে। এটি প্রকাশ পাবার পর সাধারণ লোকজনের মাঝে উৎকন্ঠা বিারজ করছে। কারণ, একজন উপজেলা চেয়ারম্যান ও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা লোকের ছেলেকে যদি সবার সামনে থেকে এভাবে তুলে নিয়ে গায়েব করা যায় তবে সাধারণ লোকজনের নিরাপত্তা কী? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মাঝে।
তাই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি আস্থা স্থাপনে মোস্তাকের অবস্থান নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করছেন টেকনাফের সাধারণ মানুষ। তাদের দাবি, মোস্তাক আইনের চোখে অপরাধী হলে তাকে প্রশাসন সবাইকে জানিয়ে ধরে নিয়ে যাক। প্রচলিত আইনে বিচার করে শাস্তি নিশ্চিত করুক। আর অন্য কোনে দুর্বৃত্তচক্র তাকে অপহরণ করে থাকলে তাদের হাত থেকে তাকে উদ্ধার করার দায়িত্বও প্রশাসনের। উপজেলা চেয়ারম্যনরে ছেলে হিসেবে নয়, দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ অধিকার রাখেন মোস্তাক আহমদ এমনটি অভিমত তার এলাকার আমজনতার।
উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ টেকনাফ থানায় করা মামলার এজাহারে বলেছেন, ১১ আগস্ট রাত ৮টার দিকে উপজেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হচ্ছিল। এখানে যোগ দিতে বাড়ির সামনে ছাত্রলীগের কার্যালয়ে এসেছিলেন মোস্তাক। এমন সময় একটি জিপ ও মাইক্রেতে করে ৭-৮ জন সশস্ত্র লোক সাধারণ পোশাকে ছাত্রলীগের অফিস থেকে মোস্তাকের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে কথা আছে বলে ডেকে নিয়ে তাকে গাড়িতে তুলে।
উপস্থিত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা অস্ত্রধারীদের পরিচয় জানতে চাইলে প্রশাসনের লোক বলে পরিচয় দেয় তারা। ঘটনা শোনার পর পরই তিনি বিষয়টি স্থানীয় এমপি আবদুর রহমান বদি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, র্যাব-৭ কক্সবাজার অফিস ও টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জসহ প্রশাসনের সকল স্থরে তৎক্ষনাত জানিয়ে রাখেন।কিন্তু প্রশাসনের কোনো স্তর থেকেই তার ছেলের অবস্থান বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত নিশ্চিত করাতে পারেনি। এ কারণে তার ছেলে মোস্তাকের জীবন নিয়ে তাদের উৎকণ্ঠ রয়েছে বলে দাবি করেন এজাহারে।
তিনি সন্দেহ পোষণ করেন, প্রশাসন যদি মোস্তাককে না নিয়ে থাকে তবে যারা নিয়েছেন তারা সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে তাকে খুন করে লাশ গুম করতে পারেন। তাই তাকে জীবিত উদ্ধারে প্রশাসনের সর্বস্থরের সহযোগিতা কামনা করেন উপজেলা চেয়ারম্যান।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. আতাউর রহমান খোন্দকার মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমরা তার হদিস বের করতে প্রাণান্ড চেষ্টা চালাচ্ছি। আইন শৃংখলা অবনতির আশঙ্কায় এলাকায় পুলিশ-বিজিবি টহল রয়েছে। মোস্তাকের খোঁজ অচিরেই পাওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করলেও প্রশাসনের ব্যর্থতার বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।