1439557871

দৈনিকবার্তা-মাদারীপুর, ১৪ আগস্ট: দুই স্কুল ছাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনা এখন রহস্য দানা বেঁধেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও নিশ্চিত করে বলা হয়নি দুই স্কুল ছাত্রীর নিহতের কারণ। তবে পুলিশ প্রশাসন প্রাথমিক ভাবে ধারণা করছে, ত্রিভূজ প্রেমের কারণে এই নিহতের ঘটনা ঘটতে পারে। যদিও উভয় পরিবারের পক্ষ হতে দাবী করা হচ্ছে, ধর্ষণের পরেই জোরপূর্বক বিষ পানে হত্যা করা হয় দুই স্কুল ছাত্রীকে।

এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্তের কাজ শুরু করেছে পুলিশ, সিআইডি টিম।প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় মস্তফাপুর বাজারের দর্জি দোকানদার সূর্য বেগম জানান, বিকেলে আমি দোকানে এসে চিৎকারের শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখি দুইটি ছেলে দুটি মেয়েকে অচেতন অবস্থায় কোলে তুলে ভ্যানে নিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শী আরেক দোকানদার জাহাঙ্গীর নাগাছি জানান, বিকেলে আমি দেখি দুইটি ছেলে দুটি অসুস্থ মেয়েকে ভ্যানে তুলে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।চিকিৎসক জানিয়েছেন, শুক্রবার দুপুরে শেষ হওয়া ময়নাতদন্তে সুমাইয়ার দেহে একাধিক নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

তবে, হ্যাপির দেহে কোনো জখম নেই।তবে, তারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে কি না পরীক্ষার জন্য আলামত পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান মাদারীপুর কোতোয়ালি থানার ওসি জিয়াউর মোর্শেদ।বৃহস্পতিবার সকালে মাদারীপুর সদরের মোস্তফাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির দুই ছাত্রী সুমাইয়া (১৪) ও তার সহপাঠী প্রতিবেশী হ্যাপি (১৫) স্কুলের উদ্দেশে বের হয়।বিকালে মাদারীপুর হাসপাতালে তাদের লাশ পাওয়া যায়। সুমাইয়া আক্তার (১৬) মাদারীপুর সদর উপজেলার মোস্তফাপুর গ্রামের বিল্লাল শিকদারের মেয়ে এবং হ্যাপি (১৫) গ্রামের হাবিব খানের মেয়ে।

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের ডা. শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, দুই কিশোরীর ময়নাতদন্ত শেষে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে।ময়নাতদন্তে সুমাইয়া আক্তারের গলা, ডান হাতের কবজির উপর, পেটের বাম পাশে ও দুই পায়ের পাতায় ক্ষত চিহ্ন দেখা গেছে।মস্তফাপুর এলাকায় বৃহস্পতিবার ২ ছাত্রী নিহত হওয়ার এলাকায় চলছে শোকের মাতম। নিহতের পরিবারের আহাজারিতে গোটা এলাকার বাতাশ ভারি হয়ে উঠুুুছে। বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন সুুুমাইয়ার মা-বাবা,হ্যাপির মা, দাদি।

নিহত সুমাইয়ার মা আসমা বেগম জানান, আমার এক সুমাইয়া মারা গেছে। যদি ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার হয় তাহলে হাজারো সুমাইয়া বেঁচে যাবে। আমি ঘটনার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, যেন আমার সুমাইয়ার মতো কোন মেয়েকে অকালে প্রাণ হারাতে না হয়। নিহত হেপীর চাচী কেয়া বেগম ঘটনার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন। ঘটনার পর শুক্রবার পুলিশ সকালে একই গ্রামের রানার মা সালমা বেগম এবং ফজলুল কবিরের পুত্র মেহেদির মা রহিমা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে সদর থানার পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই মেহেদি ও রানাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা পলাতক আছে।

মাদারীপুর সদর থানার সেকেন্ড অফিসার ফায়েকুজ্জামান জানান, ধারণা করা হচ্ছে একই গ্রামের রানা নামে এক ছেলের সাথে নিহত উক্ত দুই স্কুল ছাত্রী সুমাইয়া ও হ্যাপীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এরই জের ধরে উক্ত ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি আরো জানান, মস্তফাপুর গ্রামের সৈকত খলিফার ছেলে রানার সাথে দুই বান্ধবীর দীর্ঘদিন যাবৎ প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। বিষয়টি প্রাথমিক ভাবে আমাদের কাছে ত্রিভূজ প্রেমের ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। তিনি আরো জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসা যুবকই হচ্ছে মেহেদি ও রানা। আটককৃত শিপন ও রাকিব জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, মেহেদি ও রানা নিহত দুই স্কুল ছাত্রীকে ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে দেখে তারা হাসপাতালে আসে।

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শফিকুল ইসলাম রাজিব জানান, ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।মাদারীপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন জানান, প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে প্রেম ঘটিত কারণে দুই কিশোরী আত্মহত্যা করতে পারে। তবে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের ব্যবস্থা হচ্ছে।জেলা প্রশাসক মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস জানান, ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হবে। যাতে কোন নিরহ ব্যক্তি হয়রানীর শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।মারা যাওয়া কিশোরী সুমাইয়ার বাবা বিল্লাল শিকদার বাদী হয়ে শুক্রবার দুপুরে সদর থানায় মামলাটি করেছেন। থানার উপপরিদর্শক বারেক করিম হাওলাদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।