Bogra Pic-14

দৈনিকবার্তা-বগুড়া , ১৪ আগস্ট, ২০১৫: ‘নদী ভাঙা’ নামেই পরিচিতি পেয়েছে ফরিদপুর গ্রাম। দুই দশকে বাঙালী নদীর তীব্র ভাঙনের শিকার হয়েছে গ্রামটি। ফলে স্থানীয় জনসাধারণের কাছে ‘নদী ভাঙা’ হিসেবেই পরিচিতি পায় এ গ্রাম। বগুড়ার ধুনট উপজেলার নিমগাছী ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায় এ গ্রামের অবস্থান।গ্রামবাসীর দেওয়া তথ্যমতে, ফরিদপুর গ্রামে ১২০০ ভোটার রয়েছে। এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান পেশা কৃষি। ফরিদপুর গ্রামের অধিকাংশ কৃষক ধান ও সবজি চাষ করেন। কিন্তু সবুজ গ্রামের বুকচিরেছে খর¯্রােতা বাঙালী নদী। ফলে গ্রামটি দু’ভাগে বিভক্ত। নদী পারাপারের জন্য কোন সেতুর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রবীণদের ভাষ্য অনুযায়ি স্বাধিনতার আগে থেকেই নদী পারাপারের একমাত্র ব্যবস্থা নৌকা। পানির অভাবে নদীর বুকে বালু চর জেগে উঠেছে। তবে এক সপ্তাহ যাবত নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে পানি বৃদ্ধির আগে থেকেই নদীর তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে জানা যায়, নদী ভাঙনের ফলে ফরিদুর গ্রামের বজলু মিয়া, লাল চাঁন, লালু, শফিকুল ইসলাম, জহুরুল ইসলাম, বিষা ও সিরাজ ইতিমধ্যে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছে। ভাঙনের মুখে ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে সিরাজ উদ্দিন আকন্দ, গোফার আকন্দ, জাবেদ আলী, আব্দুল গফুর, আবদ আলী ও ফয়জাল হোসেন। এছাড়া নদী ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে আব্দুল কাফি, জামাল উদ্দিন, শামছ উদ্দিন, মাফু, হাফিজার, আব্দুস ছাত্তার, রফিকুল ইসলাম, সোলায়মান আলী, মোখলেছার রহমান, নান্টু মিয়া, এনামুল হক, রেজাউল ইসলাম, আব্দুল ওহাব ও নজরুল ইসলামের বসত ভিটা। এদিকে নদী ভাঙনের ফলে তীরবর্তী এলাকার মানুষের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।

ফরিদপুর গ্রামের গোফার আকন্দ জানান, বাঙালী নদী ভাঙনের শিকার হয়ে তিনি ৭বার বাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন। আবারো নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই তিনি বাড়ির একটি ঘর সরিয়ে নিয়েছেন। ওই গ্রামের জাবেদ আলী, ফয়জাল হোসেন জানান, দুই দশক আগে থেকেই বাঙালী নদীর ভাঙনে অতিষ্ঠ ফরিদপুর গ্রামবাসী। বর্ষা এলেই নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারন করে। নদী ভাঙনের ফলে গ্রামের অধিকাংশ মানুষ তাদের আবাদী জমি ও বসতভিটা হারিয়েছে। ফরিদপুর গ্রাম এখন ‘নদী ভাঙা’ গ্রাম হিসেবে পরিচিত। গ্রামবাসী জানান, বিভক্ত গ্রামবাসীর নদী পারাপারের জন্য সেতুর নির্মাণের প্রতিশ্রুতি মেলে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সেতু নিমাণ হয়নি। ফলে প্রায় ৬ কিলোমিটার পথ ঘুরে সেতুর উপর দিয়ে অথবা ফরিদপুর ঘাটে নৌকার মাধ্যমে নদী পারাপার হতে হয়। উপজেলার সীমান্তবর্তী এই গ্রামরক্ষায় নদী ভাঙন রোধে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে প্রতিবছরই নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছে গ্রামটি। আর এ করানেই মানুষের মুখে গ্রামটি ‘নদী ভাঙা’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। তবে কাগজে-কলমে ফরিদপুর নামই ব্যবহৃত হয়। গ্রামের লোকজন নদী ভাঙন রোধ করতে সরকারের প্রতি দাবী জানান।নিমগাছী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুজাউদৌলা রিপন বলেন, দীর্ঘদিন যাবত ফরিদপুর গ্রামবাসী নদী ভাঙনের শিকার। নদীর ভাঙন রোধে সরকারি ভাবে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এজন্য স্থানীয় লোকজন ফরিদপুর গ্রামকে ‘নদী ভাঙা’ নামে ডেকে থাকে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফরিদপুর, নিমগাছী, নাংলু ও জয়সিং গ্রামে বাঙালী নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।