দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১১ আগস্ট ২০১৫: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব নিয়েই একপাহাড় প্রতিবন্ধকতার সম্মুথীন বলেই জানালেন আ. জ. ম. নাছির। জলাবদ্ধতা, পাহাড় ধস, দখল, উচ্ছেদ, বিলবোর্ড রাজনীতি, দলীয় প্রভাব, মাদক, প্রশাসনিক দুর্বলতা, মূলধন সংকট, পরিকল্পনাহীনতা আর অপরিকল্পিত উন্নয়নের নানা হুমকির কথা বললেন বন্দর নগরীর এই অভিভাবক।আর এইসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে তিনি এবার চাইলেন প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা। সঙ্গে সঙ্গে এবার তিনি দাবি তুললেন নগর সরকার গঠনেরও। এটা পেলে সকল রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে গিয়ে দুর্নীতি মুক্ত প্রশাসন গঠনের অঙ্গীকার করেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক।
মঙ্গলবার চট্টগ্রামের এই মেয়র তার দাবিগুলো জানান ঢাকার একটি কর্মসূচিতে।জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে চিটাগাং জার্নালিস্ট ফোরাম ঢাকা (সিজেএফডি) আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে সামনের চ্যালেঞ্জগুলোর কথা তুলে ধরছিলেন তিনি। পূর্বসূরি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সমন্বয়ের জন্য নগর সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।সমন্বয় ছাড়া কোনো কাজ ভালো মতো করা সম্ভব না। চট্টগ্রামকে উদ্ধার করা প্রয়োজন, নগর সরকার প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি প্রত্যাশা করছি, ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।নগরের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের দায়িত্ব সরকারি বিভিন্ন সংস্থার হাতে থাকায় সমন্বিতভাবে কাজ করা যায় না বলে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হওয়ায় চট্টগ্রামের তিন বারের মেয়র মহিউদ্দিন বারবারই নগর সরকারের দাবি জানাতেন।একই সুরে নাছিরও বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়হীনতায় নগরীর উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নগরবাসী ও দেশের স্বার্থেই সিটি গভর্নমেন্ট প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।আগের মেয়ররাও নগর সরকারের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন।তবে সিটি গভার্নমেন্ট নির্ভর করবে সরকারের উপর, বলেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।নাছির বলেন, নগর সরকার প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিলে এরপর আইনি প্রক্রিয়া শেষ করা হবে।গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মেয়রের দায়িত্ব নিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ক্রীড়া সংগঠক নাছির।সকাল ১০টায় ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানটি শুরুর কথা থাকলেও সাড়ে ১১টায় অনুষ্ঠানস্থলে আসেন মেয়র নাছির। আয়োজকদের পক্ষ থেকে একজন স্বাগত বক্তব্য রাখার পরে টানা এক ঘণ্টা বক্তব্য দেন তিনি।
দীর্ঘ বক্তব্যে চট্টগ্রাম নগরীর সমস্যাগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন তিনি, পরে সাংবাদিকদের কয়েকটি প্রশ্নের জবাব দেন।বন্দর নগরী চট্টগ্রামের উন্নয়নে যে কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত আছেন জানিয়ে নাছির বলেন, অনেক দখলকারদের উচ্ছেদ করছি। এসব কাজ করতে গেলে অনেকের স্বার্থে আঘাত লাগে। তারা বেপরোয়া হয়ে সুযোগ কাজে লাগাতে পারে।চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আর্থিকভাবে নাজুক অবস্থায় থাকলেও সক্ষমতা আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন নতুন মেয়র।যে কেউই চট্টগ্রামে এসে ব্যবসা করতে পারেন, জায়গা কিনতে পারেন, বাড়ি করতে করতে পারেন। চট্টগ্রামবাসী আঞ্চলিকতা দ্বারা প্রভাবিত না। মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে কে কোন দলের অনুসারী তা বিবেচনায় নেওয়া হবে না বলেও প্রতিশ্র“তি দেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।কারও সঙ্গেই বৈষম্যমূলক আচরণ করব না। সব ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করতে চাই।মেয়র নাছির বলেন, আমি একটি রাজনৈতিক দলের নেতা। চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে ও রাজনৈতিক ভেদাভেদ আছে। তবে আমি সবাইকে বলেছি, আমার কাছে মেয়র হিসেবে কোন দল, ধর্ম বর্ণ ভেদাভেদ নাই।সবকিছুর উর্ধ্বে উঠে আমি নিরপেক্ষ প্রশাসন গড়ে তুলতে চাই। এ ক্ষেত্রে নগর সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। কারণ মেয়রদের নগরের ওপর কোন কর্তৃত্ব নেই। শহরের অনেক রাস্তা বা স্থাপনাই অন্য প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু দায় নিতে হয় সিটি কর্পোরেশনকেই। মেয়র জানান, ১৯৯৫ সালে করা চট্টগ্রামের মাস্টার প্ল্যানে সিটি কর্পোরেশনের কাউকে রাখা না হওয়ায় সিটি কর্পোরেশন তা বাস্তবায়ন করতে দেয়নি। এবার একটি পরিকল্পিত নগর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হবে।
নাছির বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর নগরীর সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছি। কর্নফুলীর নিচ দিয়ে টানেল নির্মিত হচ্ছে। এটা হলে দুপাড়ে পরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন হবে।চট্রগ্রাম এক সময় দেশ ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বেও সুনাম অর্জন করেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু মানুষের খামখেয়ালীপনা, আত্মকেন্দ্রিকতা আর লোভের কারণে চট্টগ্রাম আজ হুমকির মুখে। জলবায়ু পরিবর্তন, অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাত, সমুদ্রের পানিস্তর বেড়ে যাওয়ার কারণে চট্টগ্রাম আজ জলাবদ্ধতা আর দুর্গন্ধের নগরীও। এ নগরকে বাঁচাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কেবল সিটি কর্পোরেশনের একার পক্ষে এটাকে বাঁচানো সম্ভব নয়।আ জ ম নাছির বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এখন কয়েকশ কোটি টাকার দেনা। সাতটি বিভাগই চলছে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যোগ্য লোকবল নেই। যা লোকবল রয়েছে তার অর্ধেকই অস্থায়ী। হটাৎ করেই এইসব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। আর উন্নয়নের জন্য কর্পোরেশনের টাকাও নেই। নগরের একটি রাস্তার অবস্থাও ভালো নেই। খালগুলো খননের প্রয়োজন। বেড়ি বাঁধের মাধ্যমে নগর বাচাতে হবে জোয়ারের পানি থেকে। খালে দিতে হবে স্লুইস গেট।নাছির বলেন, খালের মধ্যে প্রভাবশালীদের অনেক বহুতল ভবন রয়েছে। অনেকেই পাহাড় বা সিটি কর্পোরেশনের কোটি কোটি টাকার জমি দখল করে আছে। কেউবা কাঁচা টাকার বিলবোর্ডের ব্যবসা করছেন। কেউ আছেন মাদক সম্রাট, মানব পাচারকারী। আমি সবার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। এরা সবাই আমার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ক্ষতি করতে পারে। তবে ব্যক্তিগত ভাবে আমি যে কোন ঝুঁকি নিতে রাজি। এতে আমার জীবন গেলেও ভয় পাইনা।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিজেএফডি সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল, সাধারণ সম্পাদক শামীম জাহাঙ্গীর, শাহীনুল ইসলাম চৌধুরী, মুস্তফা কামাল, অনুপ খাস্তগীর প্রমুখ।