Untitled-4

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১১ আগস্ট ২০১৫: সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলেছেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে এই সংস্কার জরুরি। পাশাপাশি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর ও ক্রিয়াশীল করার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন তাঁরা।মঙ্গলবার উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। পূর্ণ গণতন্ত্রের জন্য ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য বিষয়ে ওই বৈঠক রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে আলোচনা শুরু করেন সংগঠনের আহ্বায়ক ও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা। তিনি বলেন, যে সরকারই ক্ষমতায় আসছে, তারা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে নজর দেয় না, গত চারটি সরকারের অভিজ্ঞতায় এটা দেখা গেছে।

সাবেক এই প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, এসব সরকার যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নির্বাচনকে প্রাধান্য দিয়েছে।সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, যেখানে রাষ্ট্রপতির চাকরি নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রীর ওপর, সেখানে তাঁকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা দিয়ে লাভ কী? সংবিধানে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হলেও এই ক্ষমতা প্রয়োগে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করতে হয়।সাউথ এশিয়ান লিগ্যাল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মনজুর হাসান ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের জন্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক রওনক জাহান বলেন, ১৯৯১-পরবর্তী অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, তার চর্চা বা ডয়োগ হচ্ছে না। জাতীয় সংসদ ক্ষমতার ভারসাম্য ও নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বড় জায়গা হলেও বিরোধী দল সংসদে তার যথার্থ ভূমিকা রাখছে না। অথচ সংসদই হচ্ছে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের সবচেয়ে বড় জায়গা।

এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মনে করেন, যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে না, সেগুলো কীভাবে কার্যকর করা যায়, সে চেষ্টাই আগে করতে হবে। এরপর নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরির চেষ্টা করতে হবে।গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরের অভিমত, উদ্বিগ্ন নাগরিকেরা আজ যে উদ্যোগ নিলেন, তার ফল হয়তো তাঁরা দেখে যেতে পারবেন না। কিন্তু উত্তরসূরি উদ্বিগ্ন নাগরিকেরা হয়তো এটা দেখতে পাবেন।মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার হস্তান্তর হওয়াটা জাতীয় আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু আগামী নির্বাচন সেই আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী হবে কি না, তা একটি বড় প্রশ্ন।সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, রাষ্ট্রপতির পদটি এখন অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির নিয়োগ দেওয়াটাই রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা। কিন্তু এ দুটো ক্ষমতা অনেকটা স্বয়ংক্রিয় কাজ। কারণ, জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ লাভ করবেন—এটাই স্বাভাবিক। আর নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করবে এটাও অনেকটা স্বয়ংক্রিয় বিষয়। অতএব, এখানে রাষ্ট্রপতির বেশি কিছু করণীয় নেই।সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী আরও বলেন, রাষ্ট্রপতি না থাকলে হয়তো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সমাবর্তনের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ত। তা-ও রাষ্ট্রপতি সেখানে লিখিত বক্তৃতা পড়েন।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, দেশে জেলা প্রশাসকদের ক্ষমতা এখন রাজা বা রাজপ্রতিনিধির ক্ষমতার মতো হয়ে গেছে। একজন জেলা প্রশাসকের ৬০২টি ক্ষমতা থাকে। তিনি ২০০ কমিটির সভাপতি। একইভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও ৩৮টি ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার আগ্রহই তাঁদের বেশি থাকে। অন্য কাজের চেয়ে এটাই যেন অগ্রাধিকার পায় তাঁদের কাছে।পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে একজন বিচারপতি নিয়োগের সময় তাঁর যোগ্যতা, অতীতের রায়, পারিবারিক ঐতিহ্য প্রভৃতি দেখা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সাধারণ মনোনয়ন দেওয়া হয়। মনোনয়নের আগে যাচাই-বাছাই বা মতামতের কোনো সুযোগ সেই অর্থে নেই।সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনীতিবিদদের অনেকেই মনে করেন, রাজনীতিবিদ ছাড়া রাজনীতি বা গণতন্ত্র নিয়ে কারও কথা বলার অধিকার নেই।

সুজন সম্পাদকের মতে, সংবিধানের পরিবর্তন এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রিয়াশীল করতে না পারলে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য আসবে না।গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নতুন প্রজন্মকে সঙ্গে নেওয়ার আহ্বান জানান গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় কিছু খারাপ বিষয় থাকতে পারে। কিন্তু সবকিছুর পরও অনেক রাজনীতিবিদ দেশপ্রেমিক এবং দেশের জন্য তাঁরা কাজ করতে চান।প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে সংবিধানে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সংবিধান ও গণতন্ত্রের বিদ্যমান ব্যবস্থা কাজ করছে না।রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, তহবিল সংগ্রহ ও আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষার বিষয়গুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তিনি।