দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১০ আগস্ট ২০১৫: প্রতারণা ও জালিয়াতির বেসরকারি মামলাগুলো দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইনের ধারা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন এ সংক্রান্ত মামলাগুলো যাবে পুলিশের কাছে। তবে সরকারি সম্পত্তি এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জালিয়াতি ও প্রতারণা সংক্রান্ত মামলাগুলো দুদক আইনে তদন্ত ও বিচার হবে। অপরদিকে ব্যক্তি পর্যায়ে প্রতারণা, আত্মসাৎ ও জালিয়াতির মামলা তদন্ত করবে পুলিশ। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন হওয়ার আগে যেভাবে মামলা গ্রহণ ও তদন্ত করার এখতিয়ার ছিল সেভাবেই এখন পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে।সব বিধান রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) আইন- ২০১৫ খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে দুদক (সংশোধন) আইন-২০১৫ খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আগে সকালে সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।বৈঠক শেষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঞয়া জানান, দুদক আইনে প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলাগুলো অন্তর্ভুক্ত করায় দুই ধরনের বাস্তব সমস্যার সৃষ্টি হয়। হাজার হাজার প্রতারণা মামলা দুদক আইনে দায়ের হওয়ায় সেগুলোর নিষ্পত্তিতে জটিলতা সৃষ্টি হয়। তা ছাড়া দুদক আইনে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলা অন্তর্ভুক্ত থাকায় পুলিশ এ ধরনের মামলা নিতে অনীহা প্রকাশ করে। এতে এ ধরনের মামলার স্তূপ জমে যায়, বিচার নিষ্পত্তিতে বেশ বিলম্ব ঘটে।সচিব জানান, দুদক আইনে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর বিচার বিশেষ জজ আদালতে হওয়ায় এগুলো নিষ্পত্তিতে বেশ সময় লাগছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইন ও বিচার বিভাগ বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত করে। এরপর আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সচিব জানান, বেসরকারি প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলাগুলো দুদক আইন থেকে বিযুক্ত করা হলেও সরকারি সম্পত্তি সংক্রান্ত প্রতারণা বা জালিয়াতির মামলা এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জালিয়াতি ও প্রতারণা সংক্রান্ত মামলাগুলো দুদক আইনেই বিচার হবে।এক প্রশ্নের জবাবে সচিব জানান, প্রতারণা ও জালিয়াতির বিদ্যমান মামলাগুলোর বিচার যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থাতেই বিশেষ আদালত থেকে বিচারিক আদালতে হস্তান্তর করা হবে এবং ওই অবস্থা থেকেই বিচার শুরু হবে। আবার একই ভাবে মামলার তদন্ত যে পর্যায়ে ছিল সেই পর্যায়েই পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে দুদক আইনে প্রাথমিক তথ্য অনুসন্ধানের পর্যায়ে যেসব মামলা ছিল সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিষ্পত্তি হবে। অভিযোগকারী নতুন করে পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে পারবে। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দণ্ডবিধি ৪২০ ধারার অপরাধ প্রতারণা এবং ৪৬৭ ও ৪৬৮ ধারাসহ আত্মসাৎ ও জালিয়াতির মামলা দুদক আইন থেকে বিযুক্ত করা হচ্ছে। আইন পাশের পর এসব মামলা তদন্ত করতে হবে না দুদককে।তবে সরকারি সম্পত্তি সংক্রান্ত প্রতারণা, সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যাংকের কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকালে প্রতারণা ও জােিলাতির মামলা তদন্ত করবে দুদক।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এসব অপরাধের প্রচুর মামলা হয়েছে। যা স্পেশাল কোর্টে নিষ্পত্তি হতে দেরি হচ্ছে। এই সমস্যা দূর করতে এই বিষয়টি আইন থেকে বিযুক্ত করা হচ্ছে।আর পতারণা, আত্মসাৎ ও জালিয়াতির অভিযোগ নেওয়ার এখতিয়ার দুদক আইনের তফশিল ভুক্ত থাকায় পুলিশ মামলা নিতে চাইতো না। আইন পাশ হলে পুলিশ মামলা নিতে পারবে।মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানান,বর্তমানে দুদকে যেসব মামলা অনুসন্ধানে রয়েছে সেসব মামলা আর পরবর্তী পর্যায়ে যাবে না। তবে অভিযোগকারী নির্দিষ্ট আদালতে বা থানায় মামলা করতে পারবেন। যেসব মামলা তদন্তে রয়েছে সেসব মামলা এখতিয়ারভুক্ত সংশ্লিষ্ট সংস্থা (পুলিশ) তদন্ত করবে। তদন্তের যে পর্যায়ে ছিল সে পর্যায় থেকেই তদন্ত কাজ শুরু করবে পুলিশ।আর বিচারাধীন মামলাগুলো স্পেশাল কোর্ট থেকে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেট কোর্টে মামলাগুলো স্থানান্তরিত হবে। স্পেশাল কোর্টে যে পর্যায়ে মামলাটি ছিল সে পর্যায় থেকে মামলার পরবর্তী কার্যক্রম চলবে।এছাড়া কানাডার সঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহণ চুক্তি সম্পর্কিত খড়সায় এবং জাতীয় পুষ্টিনীতি ২০১৫ ও খসড়া অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। বৈঠক থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়েছে।