DMP_joint_commissioner_claimed_no_sexual_assault_at_DU
দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১০ আগস্ট ২০১৫:  ব্লগারদের যারা হত্যা করে এবং হযরত মোহাম্মদ (সা.), ধর্ম ও কোরআনকে যুক্তিহীনভাবে যারা আঘাত করে ব্লগ লেখে উভয়কেই উগ্রবাদী বলে আখ্যায়িত করলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম। সোমবার দুপুরের পর মিন্টু রোডের নিজ কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের সামনে এ মন্তব্য করেন। যারা উগ্রবাদী তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।ব্লগারদের ব্যাপারে মনিটরিং করা হচ্ছে। ইসলাম বা অন্য কোনো ধর্মের ব্যাপারে কটূক্তি কিংবা সীমালঙ্ঘন করে থাকলে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে সাজার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।

মনিরুল ইসলাম বলেন, যারা সীমালঙ্ঘন করে লিখছেন তারা যেমন উগ্রবাদী, একইভাবে যারা হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটাচ্ছেন তারাও উগ্রবাদী।তিনি বলেন, আগের ব্লগার হত্যাকাণ্ডগুলোর সঙ্গে নীলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় নিলয়ের হত্যাকাণ্ডের কিছু মিল রয়েছে। আমরা প্রাথমিকভাবে ধরে নিচ্ছি, আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের ছোট ছোট গ্র“প যেমন- আনসার আল-ইসলাম, আনসার আল-বাংলাদেশ, সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এ হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটাচ্ছে।সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে নিলয় হত্যাকাণ্ডের মামলাটি ডিবির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, সোমবার সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ডিবির কয়েকজন সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে নিলয়ের প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনসহ আশেপাশের বিভিন্ন লোকের সঙ্গে কথা বলেছেন।এ ঘটনার তদন্তে ডিবি প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে পাওয়া আলামতগুলো ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। ফরেনসিক রিপোর্ট পেলে মামলায় আশানুরূপ অগ্রগতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, দীর্ঘসূত্রিতার কারণেই এফবিআইয়ের কাছ থেকে এ মুহূর্তে সহায়তা নেওয়া হচ্ছে না। আলামতগুলো তাদের ল্যাবে পাঠালে রিপোর্ট েেপতে সময় লাগবে। দ্রুত ব্যবস্থা নিতেই বাংলাদেশের ফরেনসিক বিভাগে এগুলো পাঠানো হয়েছে।

থানা পুলিশের কাছ থেকে ব্লগার নীলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় নিলয় হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব বুঝে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে ডিবি পুলিশ (পূর্ব)।সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডিবি পুলিশের তদন্ত দল ঘটনাস্থল রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ানের ১৬৭ নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলা পরিদর্শন করে।এর আগে খিলগাঁও থানার পুলিশ নিলয় হত্যাকাণ্ডের মামলার সব নথিপত্র ডিবির কাছে হস্তান্তর করে। মামলাটি খিলগাঁও থানায় তদন্তাধীন ছিল।ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের উপপুলিশ কমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।এদিকে, সিআইডির মুখপাত্র ও অর্গানাইজড ক্রাইম ডিভিশনের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) আব্দুল্লাহ- হেল বাকী বলেন, এর আগে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের ক্রাইম সিন ইউনিট যে আলামত সংগ্রহ করেছিল, সেগুলো বিশ্লেষণ করে হত্যাকাণ্ডের যে ক্লু পাওয়া গেছে এবং পরবর্তীতে পাওয়া যাবে, তা তদন্ত কাজে লাগবে।৭ আগস্ট দুপুর একটার দিকে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ানের ১৬৭ নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলায় ব্লগার নীলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় নিলয়কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

বাসাভাড়া নেওয়ার কথা বলে চার যুবক নিলয়ের বাসায় ঢুকে তার স্ত্রী আশামনিকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এবং নিলয়কে কুপিয়ে হত্যা করে।এ ঘটনার পর ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিলয়ের স্ত্রী অজ্ঞাতপরিচয় চারজনকে আসামি করে খিলগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের কওে একদিন আগেই মুক্তমনা ব্লগারদের সীমালঙ্ঘন না করার আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশ প্রধান (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। এরপরই মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্মকমিশনার লেখালেখি আর চাপাতি হাতে মুখোমুখি অবস্থানে দুই পক্ষকেই উগ্রবাদী বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন।এদিকে তরুণ ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমেরই কোনো গ্র“প জড়িত রয়েছে বলে সন্দেহ করছে গোয়েন্দা পুলিশ।গত ফেব্র“য়ারির শেষ দিকে বিজ্ঞান লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় ও মার্চের শেষের দিকে তরুণ ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যার পরও মনিরুল ইসলাম আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দিকেই ইঙ্গিত করেছিলেন।

নিলয় হত্যার তিনদিন পর মনিরুল ইসলাম আবারও সাংবাদিকদের একই সন্দেহের কথা জানালেন। যদিও এই তিনটি হত্যাকান্ডের কোনো কুল-কিনারা করতে পারেনি গোয়েন্দা পুলিশ। স্পর্শকাতর এই তিনটি মামলাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছে।এছাড়া নিলয় হত্যার পর দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে আনসার আল ইসলাম নামে একটি সংগঠন। তারা নিজেদের আল কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশ অংশের বাংলাদেশ অংশ বলে দাবি করেছে। পুলিশ এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারছে না, এ গোষ্ঠীর তৎপরতা এদেশে আছে কি না। আর আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে এদের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা।তারপরও মনিরুল ইসলাম বলছেন, ধারণা করছি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কোনো গ্র“প এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত করেছে। গোয়েন্দা পুলিশের কাছে মামলা হস্তান্তর করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মামলা হস্তান্তরের পর সোমবার সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তারা প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছেন।তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডের সময় নিলয়ের একটি ল্যাপটপ ও সিম্ফোনি স্মার্টফোন খোয়া গেছে। নিজস্ব গুপ্তচর ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় এগুলো উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি আনসার আল ইসলামের ই-মেইল ও ফেসবুক আইডি শনাক্তের চেষ্টা চলছে।