দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১০ আগস্ট ২০১৫: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে যদি আয়না ধরা হয়, তবে সে আয়নায় মুখ দেখাতে আসেননি তার দলের এমন কোনো আইনজীবী নেই। খালেদার উপস্থিতিতে এমন চিত্র বহুবার দেখা গেছে আদালত প্রাঙ্গণে।তবে সোমবার মামলার প্রধান আসামি খালেদা জিয়া না আসায় বকশি বাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে অবস্থিত অস্থায়ী জজ আদালত-৩ এ পূর্বের দিনগুলোর দৃশ্যপট বদলে যায়। খালেদার অনুপস্থিতিতে কোনো রকম ভীড় ও গোলযোগ ছাড়াই দুদকের দুই মামলার (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট) নির্ধারিত দিনের বিচার কার্য শেষ হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট ও জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার পরবর্তী তারিখ রাখা হয়েছে ২৭ অগাস্ট। সোমবার ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার এই দিন ঠিক করে দেন।বকশিবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন কারা অধিদপ্তর প্যারেড মাঠে বিশেষ এজলাসে এ দুই মামলার শুনানি চলছে।হাজিরার তারিখ থাকলেও স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে খালেদা জিয়া এদিন আদালতে আসেননি।খালেদার চোখের চিকিৎসার কথা বলে ছয় সপ্তাহের জন্য সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবির পাশাপাশি চারটি আবেদন করেন তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। সোমবার সকাল ১০টা ৩৪ মিনিটে এই বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া ও মাহবুব উদ্দিন খোকন দুর্নীতির দুই মামলায় সময় চেয়ে চারটি আবেদন করেন।শুনানি শেষে বিচারক সোমবারের জন্য খালেদাকে হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিলেও বাকি আবেদনগুলোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে তা নথিভুক্ত করেন।এরপর বিচারক আগামী ২৭ অগাস্ট শুনানির পরবর্তী দিন ঠিক করে দেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল জানান।তিনি বলেন, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাই কোর্টের একটি আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের জন্য আসামিপক্ষের একটি সময়ের আবেদনও ছিল। আদালত সেটি নথিভুক্ত রাখার কথা জানিয়েছেন।এতিমখানা মামলায় বাদীর জবানবন্দি বাতিল করে নতুন করে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য উচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন খালেদা। কিন্তু গত ৬ জুলাই হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ তা খারিজ করে দেয়।
নথিপত্র না পাওয়ায় ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেননি জানিয়ে এই আবেদন করেছিলেন খালেদার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব।এ মামলার আসামি জিয়াউল হক মুন্নার পক্ষে তার আইনজীবী এদিন বাদী হারুণ-অর-রশিদকে জেরা শেষ করেছেন।মুন্নার পক্ষেও একটি সময়ের আবেদনও করা হয়েছিল। তবে এর বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে জানায়, তারা জেনেছেন, মুন্না যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ড পেয়েছেন, তিনি সেখানে পোলিয়ে যেতে পারেন।পরে বিচারক মুন্নার বিদেশে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আগামী তারিখে তার পাসপোর্ট-ভিসা আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দেন। মামলার অন্য আসামি মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে বাদীকে জেরা করার জন্য এদিন তার নতুন আইনজীবী টি এম আকবর সময়ের আবেদন করেন। এজন্য তিনি মামলার কাগজপত্র না পাওয়ার কারণ দেখান।বিচারক বলেন, কাগজ তো প্রস্তুতই আছে। আমরা বার বার বলার পরও আগের আইনজীবী ইচ্ছে করেই কাগজ নেননি। আপনি নেন।আইনজীবী আকবর নিজের অসুস্থার জন্য সময় চাইলে বিচারক আবেদন মঞ্জুর করেন।দাতব্য ট্রাস্টের মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সোমবার আরও পাঁচজন আদালতে এসেছিলেন। আগামী তারিখেও তাদের হাজির থাকতে বলা হয়েছে।২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট এবং ২০১০ সালের ৮ অগাস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুই মামলারই প্রধান আসামি।এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ৭১ লাখ ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ এবং দাতব্য ট্রাস্ট মামলায় অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে।