niloy_wife_305355

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৯ আগস্ট: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের তদন্তের বিষয়ে ডিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা- ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) প্রতিনিধিদল।এর আগে সকালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩ সদস্যের এফবিআই টীম ঢাকা এসে পৌঁছে।এফবিআই টীম নিলয় হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশের সাথে বৈঠকে মিলিত হয়।

রোববার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের জানান গোয়েন্দা পুলিশের পূর্ব বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাহবুব আলম তিনি জানান, তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে ডিবির টিম কাজ করছে। ঘটনাস্থল থেকে যত আলামত পাওয়া গেছে তা পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এফবিআইয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে।অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের তদন্তের বিষয়ে এটি পুর্ব নির্ধারিত বৈঠক ছিল। বৈঠকে তারা নিলয় হত্যার বিষয়ে জানতে এবং কারিগরি সহযোগিতা করতে চেয়েছে। এ ঘটনায় কোন কোন বিষয়ে আমরা কারিগরি সহযোগিতা নিতে পারি তা চিহ্নিত করেছি।

এদিকে পিরোজপুরের নিজ গ্রামের বাড়িতে শেষকৃত্য হয়েছে ব্লগার নিন্দ্রী চট্টোপাধ্যায়ের। শনিবার দিনগত রাত ২টায় তার মরদেহের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়কে তার নিজের বাড়িতে কুপিয়ে হত্যা করার পর দুইদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এতে হতাশা প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবার।শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় নিলয়ের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স ঢাকা থেকে পিরোজপুর সদর উপজেলার চলিশা গ্রামের তার নিজ বাড়িতে পৌঁছায়। এরপর রাত সোয়া ১২টায় তার মরদেহের শেষকৃত্য শুরু হয়।

নীলাদ্রির বোন জয়শ্রী চট্টোপাধ্যায় জানান, ১৯ দিন বাড়িতে থেকে গত ২৫ জুলাই নীলাদ্রি ঢাকায় যান। গত বৃহস্পতিবার রাতে তার সঙ্গে নীলাদ্রির শেষ কথা হয়।তিনি আরো জানান, নীলাদ্রি বিয়ে করেছে এমন খবর আমাদের কাছে নেই। আমরা এবাপারে কিছু জানি না।রাতে নীলাদ্রির গ্রামের বাড়িতে মরদেহ পৌঁছানোর পর তার মায়ের আহাজারি ও স্বজনদের কান্নায় পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। নিলয়কে এক নজর দেখতে বাড়িতে মানুষের ঢল নামে। নীলাদ্রি হত্যার বিচারের দাবি করেছে গ্রামবাসী এবং পিরোজপুরের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

নীলাদ্রির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশ বলছে, হত্যার ঘটনা তদন্তে পুলিশের পাশাপশি অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাও কাজ করছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মুনতাসীর-উল ইসলাম বলেছেন, তদন্তে থানা পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার পূর্ব অঞ্চলের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।রাজধানী খিলগাঁওয়ের গোড়ানের ১৬৭ নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলায় শনিবার দুপুরে বাসাভাড়া নেওয়ার কথা বলে চার যুবক বাসায় প্রবেশ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে নীলাদ্রি চক্রবর্তী নিলয়কে।

ব্লগার নিলয় নীল হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডরেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। রোববার দুপুরে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে এফবিআই ওয়াশিংটনের দু’জন ও বাংলাদেশের এক প্রতিনিধিসহ ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের গোয়েন্দা পুলিশের (পূর্ব জোন) উপ-কমিশনার (ডিসি) মাহবুব আলম এ তথ্য জানান।তিনি বলেন, অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সংক্রান্ত বিষয়ে আজ পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক ছিলো।

এই বৈঠকেই তারা (এফবিআই কর্মকর্তারা) নিলয় হত্যাকাণ্ড সম্পর্কেও জানতে চেয়েছেন এবং এই মামলার তদন্তে সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমরাও কোন কোন বিষয়ে এফবিআই-এর সহযোগিতা নিতে পারি সেগুলো চিহ্নিত করেছি। মামলা চলাকালে সাহায্যের প্রয়োজন হলে তাদের কাছ থেকে কারিগরি ডযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা নেওয়া হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির এই কর্মকর্তা বলেন, এখনও অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের আসামিদের গ্রেফতার করতে পারিনি এটা সত্য। কিন্তু ওয়াশেকুর রহমান বাবু হত্যা মামলার কার্যক্রম অনেকখানি এগিয়েছে।অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে জানিয়ে ডিসি মাহবুব আলম বলেন, আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি এসব ঘটনার রহস্য উৎঘাটন করতে সক্ষম হবো।

নিলয় হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া সব আলামত সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। তদন্ত প্রাথমিক পর‌্যায়ে আছে।এফবিআই-এর কাছ থেকে তদন্ত কাজে আমরা উন্নত প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছি।হত্যাকাণ্ডে জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততা আছে কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, একটি সংগঠন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে হত্যার দায় স্বীকার করে ।

অন্যদিকে, নিলয় (নিলয় নীল) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা টি-শার্টটি হত্যাকারীর হতে পারে। এ হত্যাকাণ্ডে যে ই- মেলটি পাঠানো হয়েছে তা, বাংলাদেশ থেকেই করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।রোববার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান পুলিশের উপ-কমিশনার (পুর্ব) মাহবুব আলম।তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি রক্তমাখা টি-শার্ট উদ্ধার করা হয়। টি-শার্টটি হত্যাকারীর বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। হত্যার দায় স্বীকার করে সামাজিক মাধ্যমে আনসার-আল ইসলামর পাঠানো ই-মেইলটি বাংলাদেশ থেকে করা হয়েছে।তিনি আরো বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত এবং আসলেই দায় স্বীকারকারী সংগঠনটি এর সঙ্গে জড়িত কি-না সে বিষয়টিও আমরা খতিয়ে দেখছি।