দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৭ আগস্ট ২০১৫: দিন যতোই পার হচ্ছে ততোই অস্থির হয়ে পড়ছে কাঁচা বাজার। কিছুতেই কাঁচা পণ্যের দামের লাগাম ধরে রাখা যাচ্ছে না। পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, ডিম, ডাল, সবজি, মাছসহ প্রতিটি পণ্যের দামই বাড়ছে। আর এই লাগামহীন দামে ক্রেতারা অতিষ্ঠ।ঈদের পর দেশে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে পণ্যের দর বেড়েছে বলে দাবি করে আসছে ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বর্তমানে আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলেও বাজারে পণ্যের দর না কমে বরং লাগামহীনভাবে বাড়ছেই। এবার ভারতে বন্যার অজুহাতে পণ্যের দর বাড়ানো হচ্ছে। বিশেষ করে ভারতের বন্যায় দেশের পেঁয়াজের বাজার চড়া বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজের দাম। মাছের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। পেঁপের দাম বেড়েছে এক কেজিতে ১৫ টাকা।দুই একদিন পর পর বৃদ্ধি পাচ্ছে ডালের দাম। সাতদিনের ব্যবধানে ডিমের দাম বেড়েছে প্রতি চারটিতে দুই থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত। তবে ব্রয়লার মুরগির মাংসের দাম ঠিক আছে।শুক্রবার বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। বিক্রেতাদের দাবি, লাগাতার বৃষ্টির কারণেই কাঁচাপণ্যের দাম এভাবে লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছে। আর ক্রেতারা মনে করছেন, যা বাড়ার কথা তার চেয়েও বেশি দাম নিচ্ছেন বিক্রেতারা। বেসরকারি চাকরিজীবী আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিনই কাঁচা পণ্যের দাম বাড়ছে। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে আমাদের মতো সাধারণ ভোক্তাদের বেশ সমস্যায় পড়তে হবে। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, বৃষ্টির কারণে দাম বাড়ছে। কিন্তু তাই বলে এতো দাম বাড়বে!শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, এক সপ্তাহ আগেও বৃষ্টি ছিল। আর বৃষ্টির পানিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনেক শাক-সবজির বাগান তলিয়ে গেছে। আর এ কারণে দেশের কাঁচাবাজারে পণ্যের দর বাড়তি।বাজারে পেঁয়াজ ব্যবসায়িদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, কিছুদিন আগে অর্থাৎ জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে ভারতে অনেক জায়গায় বন্যার হয়েছে। সেই বন্যার পানিতে অনেক ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। যার মধ্যে পেঁয়াজের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এ কারণে দেশে ভারতীয় পেঁয়াজের বাজার ঊর্ধ্বমুখি।এছাড়া সেই সময় যেসব ব্যবসায়ী মালামাল মজুদ রেখেছিল বন্যার অজুহাতে তারা অতিরিক্ত দামে সেগুলো বিক্রি করে মুনাফা করছে। আগামী ঈদের আগে পেঁয়াজের দাম তেমন কমার সম্ভাবনা নেই বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।শুক্রবার কাওরান বাজার প্রতিকেজি ভারতীয় বড় পেঁয়াজ ৫০ টাকা থেকে ৫২ টাকায়, ছোট পেঁয়াজ ৪৭ টাকা থেকে ৪৮ টাকায়, দেশি পেয়াজ ৫৩ টাকা থেকে ৫৪ টাকায় পাইকারী বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকায়, ভারতীয় বড় পেঁয়াজ ৬০ টাকা থেকে ৬২ টাকায়, ছোট পেঁয়াজ ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি দেশি রসুন ৬০ টাকায়, ভারত থেকে আমদানি করা রসুন ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।কাওরান বাজারের পাইকারী পেঁয়াজ ব্যবসায়ী লাকসাম বাণিজ্যালয়ের সত্বাধিকারী মো. হাবিবুর রহমান মোস্তফা জানান, কিছুদিন আগের ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর তখন দেশের বাজারে পেঁয়াজের দর বাড়িয়ে দিয়েছে আমদানিকারকরা। যদিও সে সময় তাদের হাতে বন্যার আগেই আমদানি করা পেঁয়াজ ছিল। তারা তখন পেঁয়াজের দর না বাড়ালেও পারতো। কিন্ত বন্যার অজুহাতে তারা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করেছে। তবে বর্তমানে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম আসলে বাড়তি তাই বাজারে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।অপর পেঁয়াজ ব্যবসায়ী খাজা অ্যান্ড সন্সের সত্বাধিকারী লোকমান হোসেন জানান, পেঁয়াজের বাজারে ভারতের বন্যার রেশ এখনো রয়ে গেছে। আর এতে আগামী ঈদের আগের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমবে বলে মনে হচ্ছে না।
শুক্রবার কাপ্তান বাজার, সেগুনবাগিচা, শান্তিনগর খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মানভেদে প্রতিকেজি লাল লম্বা বেগুন ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকায়, সাদা গোলাকার বেগুন ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়, মরিচ ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকায়, শশা ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকায়, গাজর ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকায়, ধনিয়া পাতা ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা, টমেটো ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকায়, করলা ৫৫ টাকা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকায়, কাকরুল ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকায়, জিঙা ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায়, সাদা গোল আলু ২৪ টাকায়, লাল গোল আলু ২৫ টাকায়, দোন্দল ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়, কচুর ছড়ি ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকায়, মূলা ৩৫ টাকা থেকে ৪৫ টাকায়, বরবটি ৭০ টাকা থেকে ৭৫ টাকায়, কহি ৬৫ টাকা থেকে ৭০ টাকায়, উস্তা ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায়, পটল ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকায়, গাজর ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায়, কচুর লতি ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকায়, শিম ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।এদিকে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি সাদা ১৬০ টাকা থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, লাল মুরগি ১৮০ টাকা থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।গরুর মাংস: খুচরা বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।এদিকে, বাজারে ডিমের দাম বেড়েছে। বাজারে প্রতি হালি ব্রয়লার মুরগির লাল ডিমের পাইকারী দাম ৩৫ টাকা থেকে ৩৬। যা খুচরা বাজারে ৪০ থেকে ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাঁসের ডিম প্রতি হালি ৪৪ টাকা থেকে ৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা পাইকারী বাজারে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।