rabindronath_850_477

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৫ আগস্ট: বাইশে শ্রাবণ এবং পঁচিশে বৈশাখ। c। আর এ দুটো দিন মানেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ। একটি দিন জন্মের আর একটি মৃত্যুর।জন্ম-মৃত্যুর বোধনে দিবস দু’টি শুধু বাঙালি জাতিকে নয়, বিশ্ববাসীকে নতুন করে ডাক দিয়ে যায়।বৃহস্পতিবার বাইশে শ্রাবণ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণতিথি। মৃত্যুর প্রায় আট দশক পরেও তিনি বাঙালির জীবনে প্রবাদের মত আছেন, আরো কয়েকদশক পরেও থাকবেন। মৃত্যুহীন অনন্ত জীবনের সাক্ষর বয়ে চলেছে যেন আজও।

মহাকালের চেনা পথ ধরে প্রতিবছর বাইশে শ্রাবণ আসে। এই বাইশে শ্রাবণ বিশ্বব্যাপী রবীন্দ্রনাথ ভক্তদের কাছে একটি অনন্য দিন। রবীন্দ্র কাব্য সাহিত্যের বিশাল একটি অংশে যে পরমার্থের সন্ধান করেছিলেন সেই পরমার্থের সাথে রবীন্দ্রনাথ আজও বিদ্যমান।রবীন্দ্র কাব্যে মৃত্যু এসেছে বিভিন্নভাবে। জীবদ্দশায় মৃত্যুকে তিনি জয় করেছেন বারবার। মৃত্যু বন্ধনা করেছেন তিনি এভাবে- ‘মরণ রে, তুঁহু মম শ্যাম সমান। মেঘবরণ তুঝ, মেঘ জটাজুট! রক্ত কমলকর, রক্ত-অধরপুট, তাপ বিমোচন করুণ কোর তব মৃত্যু-অমৃত করে দান।

রবীন্দ্রনাথ ব্যক্তিজীবনে মৃত্যুকে বড় গভীর ভাবে উপলব্ধি করেছিলেন মাত্র একচল্লিশ বছর বয়সে স্ত্রী বিয়োগ এর মধ্য দিয়ে । কবি যখন দূরে থাকতেন স্ত্রী মৃণালিণী দেবীকে ভাই ছুটি সম্বোধন করে চিঠি লিখতেন। কবির সেই ‘ছুটি’ যখন সংসার জীবন থেকে সত্যিই একদিন ছুটি নিয়ে চলে গেলেন তাঁর বয়স তখন মাত্র ঊনতিরিশ।কিশোর বয়সে বন্ধুপ্রতিম বৌদি কাদম্বরী দেবীর অকালমৃত্যু ও আরও পরে স্ত্রীর মৃত্যু এবং একে একে প্রিয়জনদের মৃত্যুর নীরব সাক্ষী ও মৃত্যুশোক রবীন্দ্রনাথের এক অনন্য অভিজ্ঞতা লাভে সহায়ক হয়েছিল। কবি জীবনস্মৃতিতে মৃত্যুশোক পর্যায়ে অকপটে লেখেন, জগৎকে সম্পূর্ণ করিয়া এবং সুন্দর করিয়া দেখিবার জন্য যে দূরত্ব প্রয়োজন, মৃত্যু দূরত্ব ঘটাইয়া দিয়াছিল। আমি নির্লিপ্ত হইয়া দাঁড়াইয়া মরণের বৃহৎ পটভূমিকার উপর সংসারের ছবিটি দেখিলাম এবং জানিলাম, তাহা বডডো মনোহর।

মৃত্যুকালীন সময় পুর্বে অর্থাৎ অসুস্থ অবস্থায় রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু কবিতা ছিল মৃত্যু চেতনাকে কেন্দ্র করে। এর মধ্যে মরণের মুখে রেখে দূরে যাও দূরে যাও চলে, মরণ বলে, আমি তোমায় জীবনতরী বাই, আবার যদি ইচছা করে আবার আসি ফিরে, পেয়েছি ছুটি বিদায় দেহো ভাই সবারে আমি প্রণাম করে যাই, আবার যাবার বেলাতে সবাই জয়ধ্বনি কর’ উল্লেখযোগ্য ।জীবনের শেষ নববর্ষের সময় রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তাঁর সাধের শান্তি নিকেতনে।

সে দিন তাঁর কলমে রচিত হয়েছিল সভ্যতার সংকট’ নামের অমূল্য লেখাটি। তারও ক’দিন পর ১৯৪১ সালেরই ১৩ মে লিখে রাখলেন, রোগশয্যায় শুয়েই ‘আমারই জন্মদিন মাঝে আমি হারা।শান্তি নিকেতনে রবীন্দ্রনাথের শেষ দিনগুলোতে কখনও তিনি শয্যাশায়ী, কখনও মন্দের ভাল। শেষের দিকে ১৯৪১ সালের ২৫ জুলাই, শান্তিনিকেতনের আশ্রম বালক বালিকাদের ভোরের সঙ্গীত অর্ঘ তিনি গ্রহণ করেন তাঁর উদয়ন গৃহের পূবের জানলার কাছে বসে। উদয়নের প্রবেশদ্বার থেকে ছেলেমেয়েরা গেয়ে উঠেন কবিরই লেখা এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিল দ্বার ,আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হল আজ।

রবীন্দ্র জীবনী থেকে জানা গেছে, মৃত্যুর মাত্র সাত দিন আগে পর্যন্তও কবি সৃষ্টিশীল ছিলেন। জোড়াসাঁকো রোগশয্যায় শুয়ে শুয়ে তিনি বলতেন রানী চন্দ লিখে নিতেন । কবি বলে গেছেন, ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন কবিতাটি বলতে বলতে। দিনটা ছিল কবির শেষ বিদায়ের দিন কয়েক দিন আগে চৌদ্দইশ্রাবণ। রানী চন্দ সে দিন সূত্রধরের মতো লিখেও নেন রবীন্দ্রনাথ উবাচ কবিতাটি তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি।রবীন্দ্রনাথের মুত্যুর বর্ণনা পাওয়া গেছে এভাবে – আগস্টের প্রথম দিন দুপুরবেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথের হিক্কা শুরু হয়। কবি কাতর স্বরে তখন উপস্থিত সবাইকে বলেছিলেন, একটা কিছু করো, দেখতে পাচ্ছে না কী রকম কষ্ট পাচ্ছি।

পরের দিন হিক্কা থামানোর জন্য ময়ূরের পালক পুড়িয়ে খাওয়ানো হলেও তাতে কিছুমাত্র লাঘব হল না। আগস্টের ৩ তারিখ থেকে কিডনিও নিঃসাড় হয়ে পরে। ৬ আগস্ট রাখি পূর্ণিমার দিন কবিকে পূবদিকে মাথা করে শোয়ানো হল। পরদিন ২২শে শ্রাবণ, ৭ আগস্ট রবীন্দ্রনাথের কানের কাছে মন্ত্র জপ করা হচ্ছে ব্রাহ্ম মন্ত্র শান্তম, শিবম, অদ্বৈতম….’ ‘তমসো মা জ্যোতির্গময়…..।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন মৃত্যু পথযাত্রী। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ঘড়িতে তখন ২২শে শ্রাবণের বেলা ১২টা বেজে ১০ মিনিট। কবি চলে গেলেন অমৃত আলোকের নতুন দেশে।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠকুরের ৭৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমী বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় একাডেমীর শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। যুদ্ধ এবং বিশ্ব শান্তি’ প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখবেন অধ্যাপক ড. বেগম আখতার জামান।বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এ উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে । বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার বিশেষ অনুষ্ঠানমালা ও নাটক প্রচার করবে। এছাড়াও বিশ্ব কবির প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন স্যাটেলাইট টেলিভিশন বৃহস্পতিবার বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।