feni photo-1 05.08.15

দৈনিকবার্তা-ফেনী, ৫ আগস্ট: ‘আমরা ত্রাণ চাইনা, চাই মুহুরী নদী ও কহুয়া নদীর ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দ্রুত মেরামত।’ এটাই এখন ফেনীর ফুলগাজীর উপজেলার দুটি ইউনিয়নের আট গ্রামসহ আশেপাশের বিভিন্ন গ্রামের কৃষকের প্রধান দাবি। এখন তাদের একমাত্র আতঙ্ক মুহুরী নদী ও কহুয়া নদীর ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ।

নতুন করে বৃষ্টি হলে এবং পাহাড়ী ঢলের পানির প্রবাহ বাড়লেই এ গ্রাম গুলোর মাঠের ফসল আবারও পানিতে তলীয়ে যেতে পারে বলে কৃষকদের আশংকা । ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহিদুর রহমান জানান, অবিরাম বর্ষন ও পাহাড়ী ঢলের পানিতে গত ২৫ ও ২৬ জুলাই ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়ন ও দরবারপুর ইউনিয়নের মুহুরী নদী ও কহুয়া নদীর বেড়িবাঁধের পাচটি স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। এতে ওই দুই ইউনিয়নের ৮টি গ্রামের আমনের বীজতলা, সদ্য জমিতে লাগানো আমান ধানের চারা পানিতে তলীয়ে যায়। ভেসে যায় পুকুর ও খামারের মাছ, কাচা-পাকা সড়ক পানিতে তলীয়ে যায়। ফুলগাজী বাজরের শতশত দোকোনে বন্যার পানি ঢোকে মালামাল নষ্ট হয়েছে।

ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের কৃষক আবদুর রহমান জানান, তিনি রোপা আমনের জন্য ৬০ শতক বীজতলা তৈরী করেছিলেন। বীজতলায় সুন্দর চারাও হয়েছিল। কিন্তু বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বন্যার পানি ঢুকে তার সব বীজতলা সম্পূর্ন নষ্ট হয়ে গেছে। আশেপাশের সবার বীজতলা একই ভাবে নষ্ট হয়েছে। নতুন করে অন্য কোথাও থেকে আমনের চারা সংগ্রহ করে রোপা লাগানোর সাহসও করছেন না।

কারণ, ভাঙ্গা বেড়িবাধ মেরামত না হলে যে কোন সময় আবারও পানি ঢুকে ধার-দেনা করে লাগানো আমন রোপা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। শ্রীচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক জহর লাল বলেন, তিনি তিন একর জমিতে আমন রোপার জন্য প্রায় এক শত কেজি বীজের চারা লাগিয়ে ছিলেন। সবটাই বন্যার পানিতে পচে গেছে। গ্রামের অন্যদের চারও নষ্ট হয়েছে। এখন আমনের রোপা কিভাবে লাগাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তারাসহ এসব গ্রামের সব মানুষের দাবি, বেড়িবাঁধের ভাঙ্গন স্থানগুলি যেন দ্রুত মেরামত করা হয়।

ফেনী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ ফেনীর উপ-পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম জানান, সাম্প্রতিক সময় অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের পানির চাপে মুহুরী নদী ও কহুয়া নদীর বেড়িবাঁধের ভাঙ্গন স্থান দিয়ে বন্যার পানিতে উপজেলার আট গ্রামের ৬০ হেক্টর (প্রতি হেক্টরে ২.৪৯ শতক অর্থাৎ আড়াই একর) জমির রোপা আমনের চারা এবং ৩০ হেক্টর জমিতে লাগনো রোপা আমনের চারা পানিতে তলীয়ে গিয়ে নষ্ট হয়েছে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রমজান আলী প্রামানিক জানায়, পাহাড়ী ঢলের পানির চাপে মুহুরী নদী ও কহুয়া নদীর পাচটি স্থানে অন্তত ২৫০ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এসব ভাঙ্গন স্থান দিয়ে এখনো পানির প্রবাহ রয়েছে। ভাঙ্গন স্থান সমুহ সম্পূর্ন শুকানো ছাড়া বেড়িবাধ পুনঃনির্মান বা মেরামত সম্ভব নয়। তাছাড়া এ ভাঙ্গন স্থানের বাঁধ মেরামতের জন্য কম করে হলেও এক কোটি টাকা প্রয়োজন। ক্ষয়ক্ষতির বিষয় ও ভাঙ্গন স্থান মেরামতের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট বরাদ্ধ চাওয়া হয়েছে। ভাঙ্গন স্থান শুকালে এবং বরাদ্ধ পাওয়া গেলেই বাঁধ মেরামত করে গ্রামে পানি ঢোকা বন্ধ করা যাবে।