7bd04603eeb694d9898206bf83b2369f_M

দৈনিকবার্তা- সিলেট, ০৪ আগস্ট ২০১৫: পুলিশে আচরণগত ত্রুটি নিয়ে কাজ করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত পুলিশ সদস্যদের আচরণগত ত্র“টি নিয়ে কাজ করা। আইনি সহায়তার জন্য মানুষ থানায় যান। পুলিশের কাছ থেকে তারা এ রকম আচরণ প্রত্যাশা করেন না। শিশু রাজন হত্যার ঘটনাকে নির্মম, অমানবিক, অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, দায়িত্বে অবহেলার জন্য যে তিনজন পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে, তাদের অপরাধ ফৌজদারি অপরাধের সমতুল্য। তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা তো হবেই, এর বাইরে তাদের অপরাধ ফৌজদারির সমতুল্য। তাই ফৌজদারি আইনেও তাদের বিচার করা উচিত।মঙ্গলবার সিলেটে সামিউল আলম রাজনের বাড়িতে যান মিজানুর রহমান।সেখানে তিনি নিহত সামিউলের মা, বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানবাধিকার কমিশন পর্যবেক্ষণ করছে রাজন হত্যার বিচার যেন দ্রুত হয়। বরখাস্ত হওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের ফৌজদারি আইনে বিচার হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন। মঙ্গলবার সিলেটের কুমারগাঁওয়ের বাদেআলী এলাকায় রাজনের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সমবেদনা জানানোর পর সাংবাদিক ও স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি বলেন, রাজন হত্যার বিচার প্রক্রিয়া মানবাধিকার কমিশন পর্যবেক্ষণ করছে।

গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চুরির অভিযোগ তুলে শিশু রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করে কয়েকজন। ওই নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিও করে তারা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিলে সারা দেশে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।পিটিয়ে হত্যার কারণ হিসাবে ভ্যানগাড়ি চুরির অভিযোগ শোনা গেলেও রাজনকে বলাৎকার করতে ব্যর্থ হয়ে হত্যা করা হয় বলে তার পরিবারের অভিযোগ।হত্যাকাণ্ডের পর লাশসহ ধরা পড়া মুহিত আলমকে বাঁচাতে এবং তার সৌদিপ্রবাসী ভাই কামরুল ইসলামকে পালিয়ে যেতে সিলেটের জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আলমগীর হোসেন ও এসআই আমিনুল ইসলাম সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ করেন রাজনের বাবা।রাজন হত্যার ঘটনায় মুহিত, তার স্ত্রী লিপি বেগম, দুই প্রত্যক্ষদর্শী আজমত উল্লাহ ও ফিরোজ আলীসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, যাদের মধ্যে সাতজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।কামরুল ইসলাম পালিয়ে সৌদি আরবে চলে গেলেও প্রবাসীদের সহযোগিতায় সেখানেই তাকে আটক করা হয়। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।মঙ্গলবার সিলেটে মতবিনিময়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান।

মঙ্গলবার সিলেটে মতবিনিময়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে গঠিত কমিটির অনুসন্ধানে গাফিলতির প্রমাণ পাওয়ায় জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আলমগীর হোসেনকে প্রত্যাহার এবং এসআই জাকির হোসেন ও আমিনুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।মিজানুর বলেন, রাজন হত্যার পর মামলা করতে গেলে তার বাবার সঙ্গে পুলিশ যে দুর্ব্যবহার করেছে, তা প্রত্যাশিত নয়।রাজন হত্যার মূল আসামি কামরুলকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সদিচ্ছা প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, কামরুলকে দেশে ফিরিয়ে আনা সময়ের ব্যাপার। তাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের আশ্বাসের প্রতিফলন দেখতে চাই।দ্রুত রাজন হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দিয়ে বিচার শুরুর তাগিদ দেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।এছাড়াও নোয়াখালীর কিশোর মিলন হত্যার বিচার নিয়ে মানবাধিকার কমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কড়া চিঠি দিয়েছে। কমিশন বিষয়টি নজরদারিতে রেখেছে।মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, আসামিরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, রাষ্ট্রের উচিত সব ধরনের ফাকফোকর দূর করে তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানো।

দ্রুত সময়ে যেন এই মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হয়। এই চার্জশিটে যেন কোনো পদ্ধতিগত ত্রুটি না থাকে। আসামিরা যেন কোনো ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে। যতক্ষণ না এই মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হচ্ছে ততক্ষণ আমাদের নজরদারি থাকবে।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, রাজন হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হবে। এই আশ্বাস কেবল আশ্বাস থাকলেই হবে না। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, প্রকৃত অর্থেই এর দ্রুত বিচার হবে। যদি এই মামলা নিয়ে কোনো টালবাহানা চলে, তাহলে কমিশন চুপচাপ বসে থাকবে না। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের কিশোর শামছুদ্দিন মিলন হত্যার বিচার সম্পর্কে মিজানুর বলেন, এ ধরনের ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে কোনো দফারফা হতে পারে না। এটি আইনের লঙ্ঘন। মানবাধিকার কমিশন এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কড়া চিঠি দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। নোয়াখালীর মিলন হত্যার ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ওই ঘটনায় আপস নিষ্পত্তির খবর পাওয়ার পর আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। এ ধরনের ফৌজদারি অপরাধের আপস নিষ্পত্তি বা রফা করা যাবে না। এটা আইনের লঙ্ঘন। রাষ্ট্র এভাবে আইনের লঙ্ঘন করতে পারে না।