7567567672

দৈনিকবার্তা- গৌরনদী (বরিশাল), ০৪ আগস্ট ২০১৫: বরিশালের গৌরনদী উপজেলা ভূমি অফিসসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে। এ সব অফিসে এখন ঘুষ ছাড়া কোন কাজ হয়না। অভিযোগ রয়েছে, নামজারীর নামে জনসাধারনদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ভূমি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তারা। ভিপি-খ তফসিলের জমি নামজারীর ক্ষেত্রে ঘুষের রেট বহুগুন বেশী । কোন কোন তহশীলদাররা ভিপি-খ তফসিলের জমি নামজারী করতে জমির মালিকের কাছ থেকে শতাংশে এক হাজার টাকা ঘুষ গ্রহন করছেন । অভিযোগ রয়েছে, টাকা দিয়েও মাসের পর মাস জমির মালিকদের নানা ওজুহাতে হয়রানী করা হচ্ছে।

উপজেলার শাহজিরা গ্রামের মাহাবুব সরদার অভিযোগ করেন , তার ১৬ শতাংশ ভিপি-খ সম্পত্তি নামজারী করতে শরিকল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মজিবর রহমান তার কাছ থেকে ১১ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহন করেছেন। একইভাবে তার চাচাতো ভাই মোঃ দুলাল সরদারের কাছ থেকে ২ বিঘা জমি নামজারী করতে ওই কর্মকর্তা ২০ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহন করেন।

এ ছাড়া তিনি একই গ্রামের মোঃ রুহুল আমিন খানের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা, মোজাম্মেল হক খানের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ও হাফেজ আলমগীর হোসেনের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে ভিপি-খ তফশীল ভূক্ত জমি মিউটিশন করার জন্য তিনি মোটা অংকের টাকা উৎকোচ গ্রহন করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এর প্রতিকারের জন্য তারা শরিকল ইউনিয়ন ভূমিঅফিসের ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মজিবর রহমান বিরুদ্ধে স্থানীয় দুর্নীতি প্রেিরাধ কমিটির কাছে সম্প্রতি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

শরিকল ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সৈয়দ মিজানুর রহমান বাদশা জানান, সরিকল ভূমি অফিসে ঘুষ ছাড়া জমির নামজারী হয়না, তহশীল অফিসের পিয়ন জুলহাসের মাধ্যমে ঘুষের লেনদেন হয়। যাদের কাছ থেকে উৎকোচ নেয়া হয়েছে এরা সবাই তার গ্রামের বাসিন্দা বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে শরিকল ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মজিবর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘূষ গ্রহনের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আমরা সরকারী ফি ছাড়া কারও কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেইনা। কাজ করার পর খুশি হয়ে কেউ কিছু দিতে চাইলে তিনি তা গ্রহন করেন বলে স্বীকার করেন।

গৌরনদীর নলচিড়া, খাঞ্জাপুর ,বার্থী , মাহিলাড়া , বাটাজোর ও চাঁদশী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে রয়েছে ঘুষ গ্রহন সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ। একইভাবে অভিযোগ রয়েছে গৌরনদী উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধেও। উপজেলার তাঁরাকুপি গ্রামের মোঃ সালাউদ্দিন, সুন্দরদী গ্রামের বেল¬াত আলী হাওলাদার, চাঁদশী গ্রামের রিপন হাওলাদারসহ একাধিক ব্যাক্তি অভিযোগ করে বলেন, ৩ থেকে ৪ মাস পূর্বে আমাদের ক্রয়কৃত সম্পত্তি নামজারী করার জন্য স্ব-স্ব ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কাগজপত্র জমা দেন।

সংশি¬ষ্ট ইউনিয়ন তহশিলদার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন উপজেলা ভূমি অফিসে জমা দেন। পরবর্তীতে আমরা উপজেলা ভূমি অফিসে ডিসিআর কাটার জন্য গেলে উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহকারী সাজেদা বেগম মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। যারা সাজেদা বেগমকে টাকা দিলে নামজারীসহ ডিসিআর মেলে। টাকা না দিতে পারলে বছরের পর বছর ফাইল অফিসে পরে থাকে। একটি সুত্র জানান, অভিযুক্ত সাজেদা বেগম সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত একই অফিসে চাকুরি করছেন।

জনসাধারনের সুবিধার্থে প্রতিটি ভুমি অফিসে সিটিজেন চার্টার টানানোর সরকারী নির্দেশ থাকলেও অদ্যবধি গৌরনদী উপজেলা ভূমি অফিসে ব্যাতিত কোনও ইউনিয়ন ভুমি অফিসেই সিটিজেন চার্টার নেই। যে কারণে এলাকাবাসী প্রতারনার স্বীকার হচ্ছেন। গৌরনদী উপজেলা ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা- কর্মচারীদের দুর্নীতির বিষয় নিয়ে গৌরনদী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোসাঃ তানিয়া আফরোজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি আমি ঘুষ খাইনা , কেউ প্রমান করতে পারলে চাকুরী ছেড়ে চলে যাব। তবে তার অফিস সহ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নানা অনিয়ম হচ্ছে স্বীকার করে বলেন, অনেকে বেনামে অভিযোগ করেন,কেউ কেউ টেলিফোনেও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। কিন্তু ওই সব অভিযোগের আইনগত ভিত্তি নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।