দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩ আগস্ট: সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ১৪ বছর ধরে কারাগারে থাকা ফাঁসির আসামি শুক্কুর আলীর পুনর্বিবেচনার আবেদনে দণ্ড কমিয়ে দিয়েছে আপিল বিভাগ।মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার শিবরামপুর গ্রামের তরুণ শুক্কুর আলীকে এখন মৃত্যু পর্যন্ত কারাগারে কাটাতে হবে।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ সোমবার রায় পুর্নবিবেচনার (রিভিউ) আবেদন নিষ্পত্তি করে এই আদেশ দেন।শুক্কুরের আইনজীবী এম কে রহমান আদেশের পর বলেন, বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার পর দণ্ড কমানোর ঘটনা তার জানা মতে এই প্রথম। শুক্কুর এখন রাষ্ট্রপতির অনুকম্পা (মার্সি) চাইবেন জানিয়ে তার আরেক আইনজীবী নাজনীন নাহার দীপু বলেন, আশা করি সেখানে প্রতিকার পাব।রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদেশের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
শুক্কুর আলীর আইনজীবী এম কে রহমান সাংবাদিকদের জানান, ‘আমার জানা মতে দেশের ইতিহাসে রিভিউ আবেদনে সাজা কমানো এটিই প্রথম ঘটনা।১৯৯৬ সালের ১১ জুন ১৪ বছর বয়সী শুক্কুর আলী মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিবরামপুর গ্রামের সাত বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে। এ ঘটনায় ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে আনা মামলায় ১৯৯৯ সালে শুক্কুর আলীর বিচার শুরু হয়। ২০০১ সালের ১২ জুলাই মানিকগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল শুক্কুর আলীকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে রায় দেয়। পরে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়েও মৃত্যুদন্ড বহাল থাকে। এমনকি আপিল বিভাগে করা রিভিউ আবেদনেও সাজা কমেনি বা অব্যাহতি পায়নি শুক্কুর আলী। রিভিউ খারিজের পর ২০০৫ সালে শুক্কুর আলীর মা রাষ্ট্রপতি বরবাবরে প্রাণভিক্ষা চেয়ে একটি আবেদন জমা দেন।
এদিকে বিচারিক আদালত শুক্কুর আলীকে মৃত্যুদন্ড দেয়ার এক বছর আগে ২০০০ সালে জাতীয় সংসদ ১৯৯৫ সালের আইনটি বাতিল করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন’ ২০০০ নামে আরেকটি আইন প্রনয়ন করে। ওই আইনে ধর্ষণের ফলে বা ধর্ষণের পর কাউকে হত্যা করা হলে তার শাস্তির বিধান রাখা হয় যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা মৃত্যুদন্ড। কিš‘ শুক্কুর আলীর বিচার হয় ১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে।
যে আইনে ধর্ষণের পর হত্যার অপরাধের শাস্তির বিধান ছিলো শুধুমাত্র মৃত্যুদন্ড। এ বিষয়টিকে সামনে এনে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) শুক্কুর আলীর বিচার প্রক্রিয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে। রিটে ১৯৯৫ সালে প্রণীত নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৬(২) ধারায় যেখানে শাস্তির বিধান ছিলো কেবল মৃত্যুদন্ড তার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। হাইকোর্ট ২০১০ সালের ২ মার্চ ৬(২) ধারাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে রায় দেয়। পরে বিষয়টি আপিলে যাওয়ার পর গত ৫ মে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ।
একইসঙ্গে শুক্কুর আলীর দন্ডও বহাল রাখা হয়।শুক্কুর আলীর দন্ড বহাল রাখা সংক্রান্ত আপিল বিভাগের এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দায়ের করে ব্লাস্ট। আজ সোমবার এ রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি করে আদালত রায় দেয়। রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করে শুক্কুর আলীকে মৃত্যুদন্ডের পরিবর্তে আমৃত্যু (আপ টু ন্যাচারাল ডেথ) কারাদন্ডাদেশ দেয় বলে জানান আইনজীবী এম কে রহমান।