দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩১ জুলাই ২০১৫: বৃষ্টির কারণে সবজির বাজার চড়া।বিক্রেতারা বলছেন,বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে দাম আরও বাড়তে পারে।রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেগুন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়, টমেটো ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৪০ টাকা, গাজর ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৫০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, ঝিঙে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।ধনে পাতা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা।কারওয়ান বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা আল আমিন বলেন, বৃষ্টির কারণে সবজির জোগান কম। অনেক জায়গায় সবজি পচে যাচ্ছে। এ কারণে সবজির দাম বাড়ছে। একই কথা বললেন খুচরা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হোসেন। তাঁর আশঙ্কা বৃষ্টি না থামলে সবজির বাজার আরও চড়া হবে।সবজির মতো শাকের দামও বাড়ছে। খুচরা শাক বিক্রেতা আরশাদ জানান, লাউ শাক, লাল শাক, কচু শাকসহ প্রায় সব শাকের দাম আঁটিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে।দুএকদিন আগেও প্রতিকেজি পিঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হতো ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকায়। আর শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা ৬৫ টাকায়। শুধু পিঁয়াজই নয় কাঁচাবাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। রাজধানীর কাঁচাপণ্যের বাজার এখন আকাশ ছোঁয়া। তবে চালের বাজার স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রিতারা।শুক্রবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, দয়াগঞ্জ, স্বামীবাগ, কাপ্তানবাজার, সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে এমনটি জানা গেছে। খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, সারাদেশে বৃষ্টির কারণে রাজধানীতে কাঁচামাল সময় মতো আসতে পারছে না বলে পাইকারি বাজারে দর বাড়তি। এ কারণে খুচরা বাজারে তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই কাঁচাপণ্যের দর বাড়তি বলে জানিয়েছেন তারা।
তারা আরো জানান, সারাদেশে বন্যা হচ্ছে এ খবরে বাজারে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের দর ইচ্ছে করেই বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই গুজবেই এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী ফায়াদা হাসিল করেছে বলেই বাজারে পণ্যের দর ঊর্ধ্বমুখি বলে মনে করছেন তারা।শুক্রবার খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি লাল লম্বা বেগুন ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকায়, সবুজ গোলা বেগুন ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়, মরিচ ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকায়, শশা ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকায়, গাজর ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকায়, ধনিয়া পাতা ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা, টমেটো ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকায়, করলা ৪০ টাকা ৪৫ টাকা, ভেণ্ডি ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকায়, কাকরুল ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকায়, ঝিঙা ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায়, সাদা গোল আলু ২৪ টাকায়, ধুন্দল ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়, কচুর ছড়ি ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকায়, মূলা ৩৫ টাকা থেকে ৪৫ টাকায়, বটবটি ৭০ টাকা থেকে ৭৫ টাকায়, কহি ৬৫ টাকা থেকে ৭০ টাকায়, ওস্তা ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায়, পটল ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকায়, লতি ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকায়, শিম ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি সাদা ১৬০ টাকা থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, লাল মুরগি ১৮০ টাকা থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।বাজারে ডিমের দাম বেড়েছে। বাজারে প্রতি হালি ব্রয়লার মুরগির লাল ডিমের পাইকারি দাম ৩৩ টাকা। যা খুচরা বাজারে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাঁসের ডিম প্রতি হালি ৪৪ টাকা থেকে ৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা পাইকারি বাজারে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।ডিম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, সারাদেশে বৃষ্টি হলেও পানিতে মাছ নেই। এ কারণে বাজারে মাছের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ কারণে মানুষ ডিমের উপর নির্ভর করছে। এতে ডিমের চাহিদা বেড়ে গেছে। ফলে বাজারে ডিমের দাম বাড়ছে বলে জানান তারা।চালের দাম: পাইকারি বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি নাজিরশাইল চাল ৪৯ টাকা থেকে ৫০ টাকায়, মিনিকেট ৩৯ টাকা থেকে ৪০ টাকা, বিআর-২৮ চাল ৩১ টাকা থেকে ৩৪ টাকা, পারি চাল ৩৩ টাকা থেকে ৩৪ টাকায়, ঘুটি স্বর্ণা ২৭ টাকা থেকে ২৮ টাকায়, বাসমতি ৫৩ টাকা থেকে ৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে এসব চাল প্রতিকেজিতে ১ টাকা থেকে ৩ টাকা লাভে বিক্রি হচ্ছে।চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, ঈদের আগে ও পরে চালের দর স্বাভাবিক রয়েছে। প্রত্যেক ব্যবসায়ী প্রচুর পরিমান চাল মজুদ রেখেছে। বন্যা বা বৃষ্টিতে চালের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই বলে জানান তারা।
বাবু বাজারের চাল ব্যবসায়ী আম্মাজান এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম বলেন, দেশে এখন বৃষ্টি বা বন্যা হলে চালের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কারণ দেশে এখন দিন দিন অটোরাইস মিলের সংখ্যা বাড়ছে। এসব মিলে বৃষ্টিতেও ধান মাড়াই হচ্ছে। এসব মিলে ধান দিলেই চাল হয়ে বের হয়। বৃষ্টিতে চাল বানাতে কোনো ধরনের বাধা নেই। তাছাড়া তো ভারতীয় চাল দেশের আসছেই। দেশের বাজারে চালের দাম সামান্য বাড়লেই ভারতীয় চালে দেশ ভরে যাবে। তখন চাল ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের বিপদে পড়বেন। সবকিছু বিবেচনা করেই চালের দর স্বাভাবিক রয়েছে।’দয়াগঞ্জ কাঁচাবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন জানান, পিঁয়াজের দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। মানভেদে দেশি পিঁয়াজ প্রতিকেজি ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। যা আগে শুধু ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি করা হতো। এদিকে চায়না থেকে আমদানি করা রসুন প্রতিকেজি ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে দেশি রসুন প্রতিকেজি ৮০ টাকা থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা ঈদের আগে ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতো।
শ্যামবাজারে বিক্রমপুরে ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী পিঁয়াজ ব্যবসায়ী হাজী শুক্কুর আলী জানান, বৃষ্টির কারণে পিঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে পাইকারি বাজারে দর খুব বেশি একটা বাড়েনি। তবে ঘূর্ণিঝড় কোমেন আসছে এ খবরে অনেক বাজার গরম হয়েছে। এ সুযোগে অনেক ব্যবসায়ী বাজারে পিঁয়াজের দাম কিছুটা ইচ্ছে মতো বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে খুচরা ব্যবসায়ীরাও সুযোগ নিয়ে বেশি দরে পিঁয়াজ বিক্রি করছে বলে জানান তিনি।পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, বৃষ্টিতে দেশের সড়কগুলো খানাখন্দে ভরে গেছে। এ কারণে আমদানি খরচ বেশি পড়ছে। সেই সঙ্গে বৃষ্টিতে কাঁচামাল আমদানি করতে গিয়ে পানিতে অনেক পণ্য নষ্ট হয়ে লোকসান গুণতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এছাড়া সাড়াদেশে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় কোমেন আসছে এই খবরেও কাঁচাপণ্যের দর কিছুটা বাড়ছে। তবে আবহাওয়া স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলে পণ্যের দর কমবে বলে জানান তারা।এ সম্পর্কে যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার আড়তের ব্যবসায়ীদের নেতা নুরু হাজী জানান, বৃষ্টির কারণে মালবাহী গাড়ি আসতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীতে আসার পথে বৃষ্টির পানিতে কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বৃষ্টিতে আমদানি কম। তাই এ সময়টায় পণ্যের দর একটু বাড়তি বলে জানান তিনি। তবে আবহাওয়া ভালো থাকলে পণ্যের দর কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।