দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩১ জুলাই: উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় কোমেন ক্রমেই দুর্বল হয়ে পশ্চিম-দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে।শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এটি স্থিতিশীল থাকলেও গত তিন ঘন্টায় ১৬ কিলোমিটার অগ্রসর হয়ে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপকূল হয়ে নোয়াখালীর দিকে যাচ্ছে।
সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এটি ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।এরআগে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন জানিয়েছিলেন, ঘুর্ণীঝড় কোমেন ক্রমেই দুর্বল হয়ে গতিপথ পরিবর্তন করে নোয়াখালীর দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সন্ধ্যা সাতটার পর এটির সুস্পষ্ট গতিপথ নিশ্চিত হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি ওই সময় চট্টগ্রামকে আশংকামুক্ত বলেছিলেন।
বিকেল ৩টা পর্যন্ত কোমেন চট্টগ্রাম থেকে ৬৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল।চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসে কর্মরত মাসুদ করিম বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি বিকেলের পর ১৬ কিলোমিটার অগ্রসর হয়েছে। এটি ক্রমেই দুর্বল হয়ে উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি মধ্যরাত নাগাদ চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের পাশ দিয়ে বঙ্গোপসাগারের মধ্য দিয়ে নোয়াখালী হয়ে বরিশাল-ভোলার উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
তিনি আরো জানান, কোমেন দুর্বল হলেও পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে পাঁচ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেত বিপদ সঙ্কেতের আওতায় থাকবে।এদিকে ঘূর্ণিঝড় কোমেন এর প্রভাবে চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়া থেকে ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকার কথাও জানিয়েছেন এ আবহাওয়া কর্মকর্তা।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘুর্ণিঝড় কোমেনের আঘাতে সারাদেশে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৮ জন। উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় ঝড়ের সময় গাছচাপাসহ আঘাতজনিত কারণে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, ঝড়ের সময় গাছ পালা ভেঙে যায়। অনেক বাড়িঘরও ধসে পড়ে। এসব কারণে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
ঘূর্ণিঝড়ের কবল থেকে রক্ষার জন্য উপকূলীয় জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল থেকে প্রায় বিশ লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়। তবে এর মধ্যে ঝড়ের কারণে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ভোলা, সেন্টমার্টিন ও পটুয়াখালীতে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ঘুর্ণিঝয়টি উপকূল অতিক্রম করে গেলেও তার প্রভাবে সারাদেশেই এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। সাত নম্বর সতর্ক সংকেত নামিয়ে উপকূলীয় এলাকায় তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে সারা দেশে নৌ চলাচল ফের শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ঘূর্ণিঝড় কোমেন দুর্বল হয়ে শুক্রবার ভোরে সন্দ্বীপের কাছ দিয়ে চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে। এর আগে ঘুর্ণিঝড় কোমেন দুর্বল হয়ে চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। রাত নয়টার দিকে উত্তর দিকে সরে গিয়ে কিছুটা দুর্বল হয়ে সন্দ্বীপের কাছ দিকে চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করা শুরু করে।
বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নিম্নচাপের প্রভাবে শনিবার পর্যন্ত রাজধানীসহ দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত চলবে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শুক্রবার সকাল ৬টায় সন্দ্বীপের কাছ দিয়ে চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে ঘূর্ণিঝড় কোমেন। এটি এখন দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপ হিসেবে নোয়াখালী ও তৎসংলগ্ন স্থলভাগ এলাকায় অবস্থান করছে।আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. শাহ আলম বলেন, স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে অনেক এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। শনিবার দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি থাকবে।তিনি জানান, স্থল নিম্নচাপটি আরো পশ্চিম উত্তর-পশ্চিমে স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে যাবে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে পারে।
এসময় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলেছে অধিদপ্তর।এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর শনিবারের পূর্বাভাসে জানিয়েছে, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সেই সঙ্গে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ এবং দেশের অন্যত্র কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণ হতে পারে।পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রে সহকারী প্রকৌশলী রিপন কর্মকার জানান, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভারি বর্ষণ হচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে।ফলে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বান্দরবন জেলাসমূহের কতিপয় অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে।
শুক্রবার ঢাকায় ৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এসময় রংপুর বিভাগ ছাড়া ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল বিভাগের অনেক এলাকায় মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হয়েছে।ভারি বর্ষণের পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তরও জানিয়েছে, নোয়াখালী ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত স্থল নিন্মচাপের প্রভাবে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।ঝড় কেটে যাওয়ায় আবহাওয়া অধিদপ্তর সংকেত কমিয়ে আনার পর অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষও (বিআউডব্লিউটিএ)নৌ চলাচলে সতর্কতা তুলে নিয়েছে।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে একদিন বন্ধ থাকার পর শুক্রবার সকাল থেকে সব নৌপথে শুরু হয়েছে লঞ্চ ও অন্যান্য নৌযান চলাচল।ঢাকা সদরঘাটে বিআইডব্লিটিএ’র ট্রাফিক পরিদর্শক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান মাহফুজ বলেন, খারাপ আবহাওয়ায় নদী উত্তাল থাকায় গতকাল সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল।
আজ সকাল ৮টায় ওই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।বিআইডব্লিটিএ’র চাঁদপুর বন্দরের পরিবহন কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সতর্কতা উঠে যাওয়ার পর চাঁদপুর থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, শরীয়তপুরসহ ১৮টি রুটের লঞ্চ চলাচল আবার শুরু হয়েছে।তবে বৃষ্টির কারণে ঘাটে যাত্রী সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম বলে আমাদের চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে বন্ধ থাকা চাঁদপুর-শরীয়তপুর রুটে ফেরি চলাচলও আবার শুরু হয়েছে বলে চাঁদপুর হরিনা ফেরিঘাটের ম্যানেজার মো. ইমরান হোসেন জানান।এক দিন বন্ধ থাকার পর মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার মধ্যেও ফেরি পারাপার শুরু হয়েছে।রাজধানী ও দক্ষিণ জনপদের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী গুরুত্বপূর্ণ এই নৌপথে শুক্রবার সকাল থেকে লঞ্চ ও অন্যান্য নৌযান চলাচলও শুরু হয়েছে বলে বিআইডব্লিটিএ’র আরিচা ঘাট কর্মকর্তারা জানান।ঘূর্ণিঝড় কোমেন এগিয়ে আসায় আবহাওয়া অধিদপ্তর বুধবার রাতে সংকেত বাড়িয়ে ৭ নম্বর করলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সারা দেশে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয় বিআইডব্লিটিএ।এছাড়া উপকূলীয় জেলাগুলোতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতাধীন ফেরিগুলোও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলা হয়।
এই নির্দেশনার পর ঢাকার সদরঘাট, চাঁদপুর, মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।শুক্রবার সকালে বিআইডব্লিটিএ’র মত সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরও ফেরি চলাচলে সতর্কতার আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়। কোমেন রাতে সন্দ্বীপের কাছ দিয়ে চট্টগগ্রম উপকূল অতিক্রম করার পর সকালে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়।
এ কারণে সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৭ ও ৫ নম্বর বিপদ সংকেতের বদলে ৩ নম্বর স্থানীয় সর্তকর্তা সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপকূলীয় জেলাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিলের যে আদেশ মন্ত্রণালয় দিয়েছিল, তাও প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে সার্বিক পিরিস্থিতি নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছে মন্ত্রণালয়।
কক্সবাজার: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় কোমেন দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।সংকেত কমে যাওয়ায় উপকূলের আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেয়া মানুষ ভোর রাত থেকে সকালের মধ্যে নিজ নিজ বসতবাড়িতে ফিরে গেছে।
ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে বৃহস্পতিবার উপকূলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিকের চেয়ে ৪/৫ ফুট বেশি উচ্চতায় প্লাবিত হয়। ঘূর্ণিঝড়ে টেকনাফের সেন্টমার্টিনে গাছচাপা পড়ে মৃত্যু হয় এক বৃদ্ধের, মহেশখালীর সোনাদিয়া সাগরে বোট ডুবির ঘটনায় উদ্ধার করা হয় দুই জেলের লাশ ও বড় মহেশখালীতে পাহাড়ি এলাকায় বাড়ির মাটির দেয়ালচাপা পড়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়।ঘূর্ণিঝড় কোমেন’র অগ্রভাগ বৃহস্পতিবার সকালে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও টেকনাফের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হয়। সেন্টমার্টিনসহ টেকনাফের ৪টি ইউনিয়নে আংশিক ও সম্পূর্ণভাবে বিধস্ত হয়েছে ৪ শতাধিক ঘর-বাড়ি। উপড়ে গেছে অসংখ্য গাছপালা। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪/৫ ফুট বেশি উচ্চতায় প্লাবিত হয় উপকূলীয় এলাকা। প্লাবনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও পেকুয়া উপজেলার।
চট্টগ্রাম: টানা বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদী-খালের পানি বেড়ে চট্টগ্রামের ১৩ উপজেলার অধিকাংশ এলাকার নিম্নাঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানিতে ডুবেছে ঘরবাড়ি, সড়ক, ফসলি জমি ও চিংড়িঘের। পানি বন্দী হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ। অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে বানভাসিদের। উপজেলাগুলোতে আভ্যন্তরীন সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।আবহাওয়া দপ্তরের পতেঙ্গা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে শুক্রবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত সাতদিনে চট্টগ্রামে ৯৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
টানা বর্ষণ ও জোয়ারের উপচে পড়া পানিতে সাতকানিয়া উপজেলার ১৭ ইউনিয়ন ও ১টি েেপৗরসভার মধ্যে কয়েকটি ইউনিয়ন ছাড়া সব কটি ইউনিয়ন বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। শঙ্খ ও ডলু নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে অর্ধশতাধিক বসত ঘর। বিলীন হওয়ার পথে রয়েছে আরো শতাধিক বসত ঘর। কয়েকলাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। মৎসখামার পানিতে ডুবে গেছে।
কোন কোন এলাকায় বানভাসি লোকজন সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে।এছাড়া উপজেলার আমিলাইষ, ঢেমশা, পশ্চিম ঢেমশা, সোনাকানিয়া, ছদাহা, সাতকানিয়া সদর ইউনিয়ন কেঁওচিয়া, বাজালিয়া, ধর্মপুর, কালিয়াইশ, নলুয়া, খাগরিয়া, ও চরতি সাতকানিয়া পৌর এলাকার অধিকাংশ এলাকা পানিতে ডুবে আছে।প্রবল বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া, চাম্বল, শেখেরখিল, গন্ডামারা, পুঁইছড়ি, বাহারছড়া, খানখানাবাদ, গুনাগরি, কাথারিয়া, বৈলছড়িসহ ১৪টি ইউনিয়ন ও বাঁশখালী পৌরসভার কয়েক লাখ মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। পানিতে ডুবে গেছে মাঠ-ঘাট। পুকুর ও খামার ডুবে মাছ ভেসে গেছে।
লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি, পদুয়া, পশ্চিম আমিরাবাদ, বড়হাতিয়া, সুখছড়ি, জলিলনগর এলাকায় বিভিন্ন খালে পানি বেড়ে গিয়ে আশপাশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বাড়িতে পানি ঢুকে কয়েকটি মাটির ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। পাড়গুলোর কোন কোন অংশ ধ্বসে পড়েছে।চন্দনাইশ উপজেলার পৌরসভা ও ৯ টি ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
চন্দনাইশ পৌরসভা, বৈলতলী, বরমা, বরকল, সাতবাড়িয়া, জোয়ারা, হাশিমপুর ও কাঞ্চনাবাদের আংশিক, দোহাজারী, ধোপাছড়ি ইউনিয়নে নিম্নাঞ্চল পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়ে পড়েছে।এসব এলাকার আভ্যন্তরীণ সড়কগুলো ডুবে ে ে যোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া পাহাড়ি ঢলে প্লাবিতহয়েছে উপজেলার দোহাজারী, দক্ষিণ হাশিমপুর, বড়পাড়া ও পাঠানীপুল এলাকা।ক্রাবণের অঝোর ধারায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে পটিয়া উপজেলার ভাটিখাইন, খরনা, কচুয়াই, বড়লিয়া, জঙ্গলখাইন, আশিয়া, কাশিয়াইশ, জুলধা, বড়উঠান, চরলক্ষ্যা, চরপাথরঘাটা, শিকলবাহা, কোলাগাঁও, কুসুমপুরা, কেলিশহর, ধলঘাট, হাবিলাসদ্বীপ, দক্ষিভূর্ষি, হাঈদগাও ইউনিয়ন এলাকার লোকজন।পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে পানি বন্দী হয়ে পড়েছে ফটিকছড়ি উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নের শান্তির হাট, সাদীনগর, হাসনাবাদ, তাঁরাখো, ধুইল্যাছড়ি, নতুন পাড়া, কাঞ্চনহাট, বেদুয়া গ্রামের লোকজন। এছাড়া ভুজপুর ইউনিয়নের আমতলী, পশ্চিম কৈইয়া, কোর্টবাড়িয়া, পূর্ব ভূজপুর, পাগলী ছড়ি গ্রামের অধিকাংশ এলাকা পানিতে ডুবে আছে।উপজেলার হালদা নদী, সর্ত্তা খাল, ধুরুং খাল, গজারিয়া খাল, বারমাসিয়া খাল, লেলাং খাল ও ফটিকছড়ি খালের পানি উপচে পড়ে আশপাশের এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
হাটহাজারী উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকাও পানিতে ডুবে আছে। উপজেলার পূর্ব ফরহাদাবাদ, পূর্ব ধলই, এনায়েতপুর, গুমানমর্দ্দন, মির্জাপুর, চারিয়া রুদ্রপুর, মিরেরখীল, মোহাম্মদপুর, কাজিরখীল, নাঙ্গলমোড়া, ছিপাতলী, মোজাফ্ফরপুর, জাফরাবাদ, রহিমপুর, ইছাপুর, পূর্বমেখল, ভবানীপুর, গড়দুয়ারা, উত্তর ও দক্ষিণ মাদার্শা, শিকারপুর, বুড়িশ্চর বাথুয়া, খন্দকিয়া এলাকার অধিকাংশ এলাকা পানিতে ডুবে আছে।
এছাড়া আনোয়ারা, বোয়ালখালী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, মীরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলার অধিকাংশ নিচু এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে বেশকটি গ্রাম। পানি বন্দী হয়ে আছে এসব এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। ভেসে গেছে মৎস ও ক্ষেত খামার।
বান্দরবান: বান্দরবানে গত দুই দিনের অবিরাম বর্ষণে পাহাড়ি ঢলে ও সাঙ্গু নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় আবারও জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।শুক্রবার সকালে জেলা সদরের সুয়ালক এলাকায় একটি ব্রিজ ধসে পড়ে বান্দরবানের সঙ্গে কক্সবাজার-চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।প্রবল বর্ষণে বৃহস্পতিবার থেকে সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
এতে রাত থেকে নদীপাড়ের বাসিন্দারা নিরাপদ স্থানে সরে যেতে শুরু করে এবং পানিবন্দি হয়ে পড়ে শহরের কয়েকটি এলাকার মানুষ।এ বর্ষণ অব্যাহত থাকলে আগামী ২/১ দিনের মধ্যে আবারও বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তি আর হতাশা দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বান্দরবান শহরের হাফেজঘোনা, আর্মি পাড়া, ইসলামপুর, মেম্বার পাড়া, শেরেবাংলানগর, ওয়াপদাব্রীয় সংলগ্ন এলাকাসহ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ফলে ওই এলাকার লোকজন আবারও আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে শুরু করেছেন।অন্যদিকে, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় পাহাড়ের পাদদেশে ও পাহাড়ের ঢালুতে বসবাসরত লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।বান্দরবান পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ জাবেদ রেজা জানান, পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে সে অনুযায়ী প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চরফ্যাশন: ঘুর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে অস্বভাবিক উচ্চতায় সাগরের পানি বৃদ্ধি টানা ভারী বর্ষনের ফলে চরফ্যাশনের দক্ষিণ উপকূলের ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জলাবদ্ধতায় পঁেচ যাচ্ছে বনাঞ্চলের হাজার হাজার গাছের চারা ও আমনের বীজ তলা।পানির ঢেউয়ে ঘর ভিটার মাটি সরে যেতে শুরু করায় বসত ঘর ধ্বসে পড়ার আশংকায় নিঘুম রাত কাটাচ্ছে প্লাবিত এলাকা বিচ্ছিন্ন ঢালচর ইউনিয়নের শান্তি নগর, শরীফ পাড়া, দালাল পুর, হাজি পুর, আদর্শ পাড়া, মোহাম্মদ পুর, শরীফ পাড়া, ভদ্র পাড়া, শান্তি নগর, চর মাদ্রাজ , শেথ পাড়া, কুকরী -মুকরি ইউনিয়নের চর পাতিলা, কুকরী, মুসলিম পাড়া, বাবুগঞ্জ, ডাকাতিয়া, হাজিপুর, নবী নগর, শাহবাজ পুর, মুজিব নগর ইউনিয়নের চর মনোহর, চর লিউলিন, শিকদারের চর, মূল ভূ-খন্ডের মানিকা ইউনিয়নের চরফারুকী, চর লক্ষী, পূর্ব চর আইচা, দ: আইচা ও দ: মানিকার গ্রামের বেড়ীর বাহির অংশ। মাদ্রাজ, আসলামপুর, জাহানপুর, আট কপাট, হাসিনার চর, হাজারীগঞ্জ, চর ফকিরা, চর কলমীর পরিবার গুলো। সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। কৃষি অফিস সুত্রে জানাযায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ মাত্রা নিধারণ করা হয়েছে। এর জন্য বপন করা বীজ তলার বেশীর ভাগ জলাবদ্ধতার কারণে পঁেচ যাচ্ছে। ফলে এবারের আমনের লক্ষ মাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।
বন বিভাগ স্ত্রু জানান, পানি না নামায় বাশির দোন বিটে ম্যানগ্রোভ কেওড়া বাগান এবং চরফ্যাশন রেঞ্জ থেকে উত্তোলিত ঢালচরে মাউন্ড বাগানের হাজার হাজার গাছের চারা জলাবদ্ধতায় পঁেচ যাচ্ছে। এতে বাশির দোন বিটে ম্যানগ্রোভ কেওড়া বাগানের প্রায় ৩০% এবং চরফ্যাশন রেঞ্জ থেকে উত্তোলিত ঢালচরে মাউন্ড বাগানের প্রায় ২০% ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। স্থানীয় সুত্র জানায়,বন বিভাগের উচু এলাকা গুলোতে শত শত গরু, মহিষ বিচরণ করছে করার কারনে মাউন্ড বাগানের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি করছে।
মংলা: ঘূর্ণিঝড় কোমেনের তেমন কোন প্রভাবই পড়েনি। বৃহস্পতিবার রাতে কোমেন চট্টগ্রাম ও কক্্রবাজার উপকূলে আঘাত হানার পর রাতেই মংলাসহ আশপাশ উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে হালকা বাতাস ও বৃষ্টিপাত বয়ে যায়। এতে মংলার কোথাও কোন ধরণের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: নাহিদুজ্জামান। এদিকে ৫ নং বিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নং স্থানীয় সতর্কতা সংকেত জারি করায় এবং ঘূর্নিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির আশংকা কাটিয়ে শুক্রবার সকাল থেকে স¦াভাবিক হতে শুরু করেছে মংলাসহ সাগর ও সুন্দরবন উপকূলীয় জনজীবন।
শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ছিল রৌদ্রজ্জল আবহাওয়া থাকলেও দুপুরের পর থেকে থেমে থেমে কয়েক দফা বৃষ্টিপাত হয়েছে। এদিকে আবহাওয়া অফিস বিপদ সংকেত প্রত্যাহার করে সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলায় মংলা বন্দরে পণ্য বোঝাই, খালাস ও পরিবহণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) গোলাম মোক্তাদির বলেন, বন্দর জেটি ও চ্যানেলে অবস্থানরত জাহাজগুলোতে কাজ শুরুর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
তবে বৃষ্টিপাতের কারণে জাহাজের হ্যাচ খুলতে না পারায় পণ্য ওঠা-নামার কাজ বন্ধ রয়েছে।পূর্ব সুন্দরবনের চাদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো: বেলায়েত হোসেন জানান, সুন্দরবনের দুবলার চর ও আলোরকোলসহ বিভিন্ন নদী-খালে আশ্রয় নেয়া জেলে-মাঝিল্লারা এখনও নিরাপদে সেখানে অবস্থান করছে। তবে বনের ভিতর ও নদীর খালের পানির উচ্ছতা স্বাভাবিকে তুলনায় ৩/৪ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় কোমেন, বৈরী আবহাওয়া, বারীবর্ষণ ও পূর্ণিমার কারণে সৃষ্ট জোয়ারে ছোট ফেনী নদী ও বামনীয়া নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ফুট উপর দিয়ে প্রভাবিত হওয়ায় কোম্পানীগঞ্জের ৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার। শুক্রবার দুপুরে জোয়ার আসলে গ্রাম গুলো প্লাবিত হয়। প্লাবিত গ্রাম গুলো হচ্ছে- কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড চরকচ্ছোপিয়া, ৪নং ওয়ার্ড পূর্ব চর লেংকটা, ৫নং ওয়ার্ড ক্লোজারঘাট, ৯নং ওয়ার্ড গাংচিল এবং চরফকিরা ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রাম, আদর্শ গ্রাম ও জেলে পাড়া।চরএলাহি রেড ক্রিসেন্ট সভাপতি আব্দুল গনি জানান, স্বাভাবিকের চেয়ে ৩/৪ফুট বেশি উপর দিয়ে পানি প্রভাবিত হওয়ায় গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ওই গ্রাম গুলোর লোকজন। এছাড়াও ঝড়ো বাতাস ও গত কয়েকদিনের ভারীবর্ষণে গ্রাম গুলোর অনেক কাঁচা ঘর বাড়ী ও গাছ পালা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশাফুর রহমান জানান, জোয়ারের পানি কয়েকটি গ্রামে প্রবেশ করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করেছে। বিকেল থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ফেনী :ফেনীতে বন্যায় ভেসে আসা সাপের কামড়ে বিবি ফাতেমার (৫২) মৃত্যু। নিহতের স্বামী-সন্তান মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের খোঁজ নেয়নি এলাকার জনপ্রতিনিধি, পৌঁছেনি ত্রাণ।এলাকাবাসী সূত্র জানায়, ফেনীর দাগনভূঞা রাজাপুর ইউনিয়নের ঘোনানাথ পাড়া গ্রামে বন্যার পানিতে ভেসে আসা বিষাক্ত সাপের কামড়ে নিহত হন বিবি ফাতেমা।
সাপের কামড়ালে প্রথমে ফেনী সদর হাসপাতালে নেন, আশংকাজনক অবস্থায় কর্তব্যরত চিকিৎসক চট্টগ্রামে প্রেরণ করলে পথে তার মৃত্যু ঘটে।নিহতের স্বামী সফিকুর রহমান জানায়, তিনি দিনমজুর। তার তিন সন্তান ও তিন মেয়ে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নেয়নি কোন খবর, মেলেনি কোন ত্রাণ সামগ্রী।স্থানীয ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ভূঞা জানান, সাপের কামড়ে বিবি ফাতেমার মৃত্যুর খবর তিনি শুনেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: দেশে চলমান বৈরী আবহাওয়ার কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর থেকে নৌযান চলাচল বন্ধ রেখেছে নৌ কর্তৃপক্ষ। এতে আশুগঞ্জ নৌ-বন্দরে আটকা পড়েছে কয়েকশ যাত্রী ও মালবাহী লঞ্চ।বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে এ যান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের আশুগঞ্জের পরিদর্শক শাহ আলম জানান, দেশে চলমান বৈরী আবহাওয়ার কারণে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর থেকে নৌযান চলাচল বন্ধ রেখেছে। এ কারণে এ বন্দর থেকে ৬টি রুটে লঞ্চ ও মালবাহী ট্রলারসহ সব ধরনের নৌ-চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার কারণে আশুগঞ্জ বন্দরে আটকা পড়েছে শত শত মালবাহী জাহাজ। আবহাওয়া ঠিক না হওয়া পর্যন্ত এই বন্দর থেকে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।
বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে এ যান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ।বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের আশুগঞ্জের পরিদর্শক শাহ আলম জানান, দেশে চলমান বৈরী আবহাওয়ার কারণে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর থেকে নৌযান চলাচল বন্ধ রেখেছে। এ কারণে এ বন্দর থেকে ৬টি রুটে লঞ্চ ও মালবাহী ট্রলারসহ সব ধরনের নৌ-চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার কারণে আশুগঞ্জ বন্দরে আটকা পড়েছে শত শত মালবাহী জাহাজ।
আবহাওয়া ঠিক না হওয়া পর্যন্ত এই বন্দর থেকে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। ঘূর্ণিঝড় কোমেনের দুর্যোগ মোকাবেলায় লক্ষ্মীপুর ব্যাপক প্রস্ততি নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে জেলায় ১০১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা রয়েছে। চালু করা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। এছাড়া উপকূলের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে মাইকিং করার পাশাপাশি রেডক্রিসেন্ট, হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রস্তত রাখা হয়েছে।তবে জেলা প্রশাসনের এতো প্রস্তুতির পরও লক্ষ্মীপুরের উপকূলের মানুষ রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। কখন ঘূর্ণিঝড় কোমেন আঘাত হানে এ নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তারা।
এদিকে, জেলার রামগতি ও কমলনগর উপজেলার নদীর কাছাকাছি মানুষদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ে। পাশাপাশি জনসাধারণকে পরিস্থিতি মোকাবেলার লক্ষ্যে উপকূল এলাকাগুলোতে মাইকিং করা হচ্ছে।দূর্যোগ মোকাবেলার লক্ষ্যে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী করণীয় শীর্ষক জরুরি বৈঠক বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
রাজশাহী: রাজশাহীতে ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলের পর রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবল বাতাস ও বৃষ্টিপাত শুরু হয়। শুক্রবার বিকেলে পর্যন্ত কখনো ভারি ও কখনো ঝিরঝিরে বৃষ্টিপাত হচ্ছে।রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, রাজশাহীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬০ দশমিক ০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে বৃষ্টিপাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় পানি জমে যায়। যানচলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়েন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে উপশহর ও কোর্ট এলাকায় নিম্নাঞ্চল জলমগ্ন রয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার ঝড়ে বাড়ি ঘরের ক্ষতি হয়েছে। অনেক গাছপালাও উপড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার থেকে তানোর উপজেলায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে জানা গেছে।রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৫টা থেকে সন্ধ্যা পোনে ৭টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিলো ৩৯ দশমিক দুই মিলিমিটার।
এরপর রাতে ও দিনভর আরো ২১ মিলিলিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিপাতেও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলমগ্ন দেখা গেছে।কোনো কোনো এলাকার সড়কে হাটু থেকে কোমরপানি উঠেছে। নিচু এলাকার অনেকের বাড়িতে পানি উঠেছে বলে জানা গেছে।এদিকে তানোর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঝড় ও বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তানোর সদর গোল্লাপাড়া, আমশো, কালিগঞ্জসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘর-বাড়ির টিনের চালা উড়ে যায় এবং ঝড়ে গাছপালার ডাল পালা ভেঙ্গে পড়েছে। ঝড়ে কালিগঞ্জ রাস্তার দুটি বড় বড় গাছ উপড়ে বিদ্যুৎ লাইনের উপর পড়ে উপজেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।