দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩০ জুলাই ২০১৫: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ঠ ঘূর্ণিঝড় কোমেন কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও টেকনাফের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হেনেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হেনে ক্রমেই দুর্বল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস।সব রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে,দেশের বিভিন্নস্থানে ৭ জন নিহত হয়েছে। উপকূলীয় সব জেলাতেই জনগণকে সতর্ক করার পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতার জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।ঘূর্ণিঝড় এগিয়ে আসায় বুধবার থেকেই কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত এবং মংলা ও পায়রা বন্দরে ৫ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখানো হচ্ছে। তবে বর্ষ মৌসুমে এ ঘূর্ণিঝড় খুব বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে না বলেই আবহাওয়া অধিদপ্তর মনে করছে।মাঝারি শক্তির ঘূর্ণিঝড় কোমেন চট্টগ্রাম বন্দরের ৫৫ কিলোমিটার দূরে এসে উপকূলের দিকে এগোচ্ছে খুব ধীর গতিতে।আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. শাহ আলম বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের জানান, এ ঘূর্ণিঝড় বিকেলে আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে সন্ধ্যা নাগাদ চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।উপকূল অতিক্রম করার পর এটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে।শাহ আলম জানান, কোমেন উপকূল পার হওয়ার সময় ৭০ থেকে ৯০ কিলোমিটার বেড়ে ঝড়ো হওয়ার সঙ্গে ভারি বর্ষণ হতে পারে।উপকূলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।ঘূর্ণিঝড় এগিয়ে আসায় বুধবার থেকেই কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত এবং মংলা ও পায়রা বন্দরে ৫ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখানো হচ্ছে। তবে বর্ষ মৌসুমে এ ঘূর্ণিঝড় খুব বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে না বলেই আবহাওয়া অধিদপ্তর মনে করছে। অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, বর্ষা মৌসুমে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় খুব বেশি প্রবল হয় না। কোমেনও মাঝারি সাইক্লোনের রূপ নিয়েছে।ঘূর্ণিঝড়ের আশপাশের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় ঝড়ো হওয়া বয়ে যাবে। তবে কেন্দ্রের একশ কিলোমিটারের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের ডানপাশে গতি বেশি থাকায় ওই পাশই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।এ কারণে সেন্টমার্টিনের দিকেই ঝড়ের প্রভাব বেশি পড়েছে বলে জানান এই আবহাওয়াবিদ।
বুধবার মধ্যরাতে সেন্টমার্টিন-টেকনাফ উপকূল ছুঁয়ে বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম ঊপকূলের কাছাকাছি পৌঁছায় কোমেন। ঝড়ো বাতাসে উপড়ে পড়া গাছের নিচে চাপা পড়ে ভোরে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপে মোহাম্মদ ইসলাম (৫০), দুপুরে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় নুরুল ইসলাম ফকির (৫৫) এবং ভোলার লালমোহন উপজেলায় মনজুরা বিবি (৫৫) নামে তিনজনের মৃত্যৃ হয়।সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল আমিন জানান, রাতে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাতাস ও বৃষ্টির তীব্রতা বাড়তে থাকে। ভোরের দিকে ঝড়ো হাওয়ায় দ্বীপের অসংখ্য গাছপালা উপড়ে যায়; আংশিক বা সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয় শতাধিক বসতঘর। টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলম জানান, ঝড়ো হাওয়ায় উপজেলার চারটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ৩ শতাধিক ঘর-বাড়ি আংশিক ও সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।
কক্সবাজারের ৭১টি ইউনিয়নের মধ্যে উপকূলীয় ২৮টি ইউনিয়নের মানুষকে ৭৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরপরও কেউ থাকলে তাদের সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে বলে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. অনুপম সাহা আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধিকে জানান।ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়াসহ সরকার সংশ্লিষ্ট এলাকায় বেশ প্রস্তুতি নিয়েছে। কক্সবাজার বিমান বন্দরে উঠানামা সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরেও পন্য খালাস সীমিত রাখা হয়েছে। বন্দরে তিন নম্বর এলার্ট জারি করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচলও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে।ঘূর্ণিঝড় কোমেন মোকাবেলায় সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জাল হোসেন চৌধুরী মায়া দুপুরে সচিবালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে বলেন, বাংলাদেশ পীর-আউলিয়ার দেশ। আশা, বিশ্বাস ইনশাআল্লাহ সে রকম কোন ক্ষয়ক্ষতি হবে না।তিনি জানান, অল্প সময়ের মধ্যে ২৮৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে তিন লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ১৩ জেলায় উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিনে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় কোমেন বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৫ কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২০৫ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল।ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও দ্বীপগুলোর উপর দিয়ে ঝড়োহাওয়া অব্যাহত রয়েছে।উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোয় ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।আর ৫ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের আওতায় থাকবে জেলা বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো।
৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের মানে হচ্ছে-বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার ঝঞ্ঝাবহুল এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ে পড়েছে। ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরের উপর বা পাশ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ৫ নম্বর বিপদ সংকেতে ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠী, পিরোজপুর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৮০-১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।অতি ভারি বর্ষণের প্রভাবে চট্রগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে বলেও সতর্ক করে দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার এবং সমুদ্রগামী জাহাজগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আম্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজার: কক্সবাজারের মহেশখালী উপকূলীয় তাজিয়াকাটা সৈকত থেকে ২ জেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের তাজিয়াকাটা সৈকত থেকে জেলের লাশ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার জেলেরা হলো, কুতুবজোম তাজিয়ারকাটা গ্রামের বাসিন্দা কালা মিয়া (৩৪) ও একয় এলাকার মোঃ সাইফুল (২৫)।মহেশখালী থানার ওসি (তদন্ত) দিদারুল ফেরদৌস জানান, দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া খবর পেয়ে মহেশখালী উপকূলে ফেরত আসার সময় বুধবার রাতে সমুদ্রের সোনাদিয়া পয়েন্টে ৮ জন জেলে নিয়ে একটি ফিশিং বোট ডুবে যায়। বোট ডুবির ঘটনায় সাঁতার কেটে ৬ জন জেলে কূলে আসতে সক্ষম হলেও কালা মিয়া ও মোঃ সাইফুল নামে ২ জেলে নিখোঁজ থাকে। পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে তাজিয়ারকাটা সৈকত এলাকা থেকে নিখোঁজ ২ জেলের লাশ উদ্ধার করা হয়।কক্সবাজার আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর এটি এখন শক্তিশালী ঘুর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। যার নামকরণ করা হয়েছে কোমেন’। বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ঠ গভীর নিম্নচাপ কোমেন’ উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও টেকনাফ উপকূলে আঘাত হেনেছে। ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত হানার সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৫১ থেকে ৬১ কিলোমিটার।
টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলম জানিয়েছেন, টেকনাফে বৃহস্পতিবার ভোরে প্রবল ঝোড়ো হাওয়ায় উপজেলার চারটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় তিন শতাধিক ঘরবাড়ি আংশিক ও সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে ২০ জনের বেশি লোকজন আহত হয়েছেন।তিনি জানান, উপকূলের মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্র ও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে। এ ছাড়া উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে সরে আসতে মাইকিং করা হচ্ছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আশ্রয় নেয়া শহরের উপকূলবর্তী সমিতি পাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ রশিদ (৬৫) ৯১ এর প্রলয়ংকরি ঘূর্ণিঝড়ের পিতা হারানোর দুঃস্হ স্মৃতির কথা জানিয়ে জানান, বিপদ সংকেতের কথা শুনে জানমাল রক্ষায় আগেভাগে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছেন। বসতবাড়িতে ৩০ বছর বয়সী যুবক ছেলে ছাড়া সবাই এখানে আশ্রয় নিয়েছে। একই কার্যালয়ে আশ্রয় নেয়া কুতুবদিয়া পাড়ার মনির আহম্মদের স্ত্রী হোসনে আরা (৪০) জানান, স্বামীই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। একমাত্র সহাইসম্ভল গরু-ছাগল সহ পরিবারের সবাই এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। কক্সবাজার পৌর প্রিপ্যারেটরী উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া প্রতিবন্ধি শফিউল আলম (৭৫) জানান, শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়ায় ৫ সদস্যের পুরো পরিবার সহ নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।
ভারপ্রাাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. অনুপম সাহা জানান, কক্সবাজারের ৭১টি ইউনিয়নের মধ্যে উপকূলীয় এলাকার ২৮টি ইউনিয়নের মানুষকে ৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে নিরাপদে সরে আসতে মাইকিং অব্যাহত রয়েছে।এ ছাড়া আশ্রয় নেওয়া লোকজনের চিকিৎসাসেবার জন্য মেডিক্যাল টিম ও তদারকির জন্য আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে দুর্যোগকালীন আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান অনুপম সাহা।জরুরি সভা শেষে কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. অনুপম সাহা জানান, ত্রিমুখি সমস্যায় জর্জরিত কক্সবাজারবাসীকে বাঁচাতে জেলা প্রশাসন নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উপকূল ও ঝূঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসদের নিরাপদ স্থানে সরে আসতে বুধবার রাত থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। প্রতিটি ইউনিয়নে গঠন করা হয়েছে উদ্ধারকারী দল। পাশাপাশি জেলার সকল আশ্রয় কেন্দ্র বুধবার রাত থেকেই খুলে দেয়া হয়েছে। এছাড়া রেড ক্রিসেন্ট ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।তিনি আরো জানান, ১০টি স্পিড বোট, সাতটি বাস ও কয়েকটি ট্রাক ঠিক করে রাখা হয়েছে উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে ব্যবহারের জন্য। মজুদ করা হয়েছে শুকনো খাবার। এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে আগতদের সেবা নিশ্চিত করার জন্য একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি সিভিল সার্জনের মাধ্যমে মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’ এর প্রভাবে কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে বঙ্গোপসাগরের পানির উচ্চতা ৫ থেকে ৭ ফুট প্রবাহিত হয়ে জেলার আট উপজেলার ২৮টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, জেলার অধিকাংশ নিম্নাঞ্চলে ৩-৫ ফুট পানি উঠেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের মেঘনা নদীতে যাত্রীবাহী নৌকা ডুবে শিশুসহ চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় এখনও নিখোঁজ রয়েছেন আরও চার জন।বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার দুবাজাইল এলাকার মেঘনা নদীতে এ ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে।নিহতরা হলেন- আব্দুল কাহার (৪৬), ফাতেমা আক্তার (২৬), শিশু শিরিনা আক্তার (৬) ও শেফালী (৬ মাস)। তবে তাদের বিস্তারিত পরিচয় এখনও জানা যায়নি।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সরাইল উপজেলার অরুয়াইল বাজার থেকে একটি যাত্রীবাহী নৌকা একই উপজেলার রানীদিয়া এলাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। পথে মেঘনা নদীর দুবাজাইল এলাকায় পৌঁছলে প্রচণ্ড বাতাসে নৌকাটি ডুবে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে এলাকাবাসী ডুবে যাওয়া নৌকা থেকে দুই জনের লাশ উদ্ধার করে। পরে স্থানীয় ডুবুরী ও পুলিশ এসে আরও দুই জনের লাশ উদ্ধার কেরে। তবে এখনও চার জন নিখোঁজ রয়েছেন।ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) শাহরিয়ার আল মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নিখোঁজদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিস তৎপরতা চালাচ্ছে।নোয়াখালী : ধেঁয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় কোমেন। এর প্রভাবে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট, সূবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলা বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত রয়েছে। সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চল সমূহকে ৭নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার প্রায় ২৫হাজার লোককে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় নোয়াখালী জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) অনুপম বড়–য়ার সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ঘূর্ণিঝড় কোমেন এর পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে করনীয় শীর্ষক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহি, চরফকিরা, মুছাপুর ইউনিয়ন, কবিরহাট উপজেলার ঘোষবাগ, ধানশালিক, ধানসিঁড়ি উপজেলা, সূবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর, চরবাটা, চরক্লার্ক, চরওয়াপদা, চরজুবলী, আমানউল্ল্যাহ, পূর্ব চরবাটা, মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন এবং হাতিয়া উপজেলার সবগুলো ইউনিয়ন ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতিমধ্যে এসব উপজেলা গুলোতে ঘূর্ণিঝড়ের পরবর্তী সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য, কোম্পানীগঞ্জে ৩৩টি আশ্রয়কেন্দ্র, ১৩টি মেডিকেলটিম, কবিরহাটে ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র, ১২টি মেডিকেলটিম, সূবর্ণচরে ৯৪টি আশ্রয়কেন্দ্র, ৭টি মেডিকেলটিম, হাতিয়া ১৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ৪টি মেডিকেলটিম প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়াও উপজেলা গুলোর সকল সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয় গুলো প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, মঙ্গলবার রাত থেকে উপজেলার অধিকঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে অন্তত ২৫হাজার লোকজনকে নিরাপদে ৩০টি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়েছে। সাগরে রেডএলার্ট জারি করে সকল মাছ ধরার নৌকাসহ জেলেদের নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে।নোয়াখালী জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) অনুপম বড়–য়া জানান, জেলার ৪টি উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের জনগনের নিরাপত্তার জন্য সবধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও দুইজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দুটি উপজেলা করে ৪টি উপজেলায় দায়িত্ব পালন করবেন।
পটুয়াখালী: ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’ আতংকে পটুয়াখালীর উপকূলের মানুষ নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। সাগর তীরের মানুষগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে শুরু করে। তবে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার পর উপকূলবাসির মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে ঘূর্ণিঝড়টি দূর্বল হওয়ার খবরে। এ দিকে থেমে থেমে এখনও বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইছে। ঝড়ে গাছ চাপা পরে গলাচিপার কল্যান কলস গ্রামে নুর ইসলাম (৫২) নামের একজন মারা গেছে। এর পরে জেলা প্রশাসন জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে। জেলা ও উপজেলা সদর গুলিতে পর্যপ্ত শুকনা খাবার মজুদ রাখা হয়েছে। জেলার অভ্যান্তরীন ও দুর পাল্লার সকল রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সম্ভাব্য যে কোন ধরনের দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে একাধীক মেডিকেল টিম, রেডক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবী গ্রপ, ফায়ার সার্ভিস ডিফেন্সসহ প্রশাসন, জনপ্রতিনিসহ বিভিন্ন স্তরের লোকজন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা দূর্যোগ ব্যবস্থা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় এসব তথ্য জানান ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নলচিরা বেঁড়ি বাঁধ ভেঙে একটি ইউনিয়নের চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার।বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। প্লাবিত গ্রাম গুলো হচ্ছে- নলচিরা ইউনিয়নের ফরাজি গ্রাম, কলাপাড়া গ্রাম, ছয়বাড়িয়া গ্রাম ও ঘচ্ছিন্না গ্রাম।নলচিরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ন কবির বাবলু জানান, ঘূর্ণিঝড়ের ফলে দুপুরে প্রবল বাতাসের সাথে জোয়ার আসলে বেঁড়িবাঁধের উপর দিয়ে পানি নলচিরা ইউনিয়নে ডুকে পড়ে। পরবর্তীতে পানি নামতে শুরু করলে ৩কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অধিকাংশ ভেঙে গেছে। এতে চারটি ইউনিয়নের শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।চেয়ারম্যান আরো জানান, বিকেল পর্যন্ত পানি নেমে গেলেও বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে গ্রামগুলো পূণঃরায় প্লাবিত হতে।হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, ১কিলোমিটারের মত বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে বিকেল পর্যন্ত পানি নেমে যাবে।
নোয়াখালী : ধেঁয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় কোমেন। এর প্রভাবে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট, সূবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলা বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত রয়েছে। সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চল সমূহকে ৭নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার প্রায় ২৫হাজার লোককে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় নোয়াখালী জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) অনুপম বড়–য়ার সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ঘূর্ণিঝড় কোমেন এর পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে করনীয় শীর্ষক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহি, চরফকিরা, মুছাপুর ইউনিয়ন, কবিরহাট উপজেলার ঘোষবাগ, ধানশালিক, ধানসিঁড়ি উপজেলা, সূবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর, চরবাটা, চরক্লার্ক, চরওয়াপদা, চরজুবলী, আমানউল্ল্যাহ, পূর্ব চরবাটা, মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন এবং হাতিয়া উপজেলার সবগুলো ইউনিয়ন ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতিমধ্যে এসব উপজেলা গুলোতে ঘূর্ণিঝড়ের পরবর্তী সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য, কোম্পানীগঞ্জে ৩৩টি আশ্রয়কেন্দ্র, ১৩টি মেডিকেলটিম, কবিরহাটে ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র, ১২টি মেডিকেলটিম, সূবর্ণচরে ৯৪টি আশ্রয়কেন্দ্র, ৭টি মেডিকেলটিম, হাতিয়া ১৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ৪টি মেডিকেলটিম প্রস্তুত রয়েছে।
এছাড়াও উপজেলা গুলোর সকল সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয় গুলো প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ভোলা প্রতিনিধি: ভোলার চরফ্যাশনে সাগর উপকূলে ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে তিনটি মাছধরা ট্রলার ডুবে অন্তত ২৭ জেলে নিখোঁজের খবর পাওয়া গেছে।এছাড়া লালমোহন উপজেলায় গাছ চাপা পড়ে এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন।বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জেলায় থেমে থেমে মাঝারি ও ভারি বর্ষণ এবং দমকা বাতাসসহ ঝড় বয়ে যাচ্ছে।বুধবার রাতে কোনো সময় জেলেরা সাগরে নিখোঁজ হলেও উপকূলের বৈরী আবহাওয়ায় তাদের উদ্ধার অভিযান শুরু করা যায়নি বলে জানিয়েছেন চরফ্যাশনের কুকরিমুকরি পুলিশ ফাঁড়ির এসআই নূর মোহাম্মদ।তিনি বলেন, স্থানীয় মহিউদ্দিন মাঝির ট্রলারসহ কয়েকটি ট্রলার বুধবার বিকালে সাগরে মাছ ধরতে যায়। এর মধ্যে তিনটি ট্রলার ডুবে অন্তত ২৪ জেলে নিখোঁজ হয়েছেন বলে তারা খবর পেয়েছেন। বৈরী আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল থাকায় জেলেদের উদ্ধারে অভিযান চালানো যাচ্ছে না। প্রকৃত কতজন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি, বলেন এসআই নূর মোহাম্মদ।বেলা ১১টার দিকে ঝড়ে লালমোহন উপজেলায় গাছ চাপা পড়ে এক নারী নিহত হয়েছেন বলে ইউএনও জাকির হোসেন জানিয়েছেন।নিহত মঞ্জুরা বিবি (৫৫) লালমোহন উপজেলায় চর উমেদ ইউনিয়নের চরকচুয়া গ্রামের বাসিন্দা।
এদিকে স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভোলা সংলগ্ন মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় পানি ডবাহিত হচ্ছে। মনুরা ঘাটের ইলিশ মাছের আড়ৎদার জাফর রাড়ি জানান, চরফ্যাশনের আবদুল্লাহ পুর গ্রামের মহিউদ্দিন মাঝির একটি ট্রলার ১৪ জন মাঝি মাল্লা নিয়ে এবং বোরহানউদ্দিনের গঙ্গাপুর গ্রামের গনি বর্দ্দির একটি ট্রলার ১৩ জন মাঝি মাল্লাা নিয়ে পাঁচ দিন আগে মনুরা মৎস্য ঘাট থেকে সাগরে মাছ ধরতে যায়। দুর্যোগ পূর্ণ আবহাওয়ায় সাগরে যাওয়া অনান্য ট্রলার ও জেলেরা তীরে ফিরে আসলে ও ওই দুটি ট্রলার বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ফিরে আসেনি। পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে তাদের ফিরে আসা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে পরিবারের সদস্য।জানা গেছে, ভোলার চরফ্যাশন, লালমোহন ও মনপুরা উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে মেঘনা ও তেতুঁলিয়া তীরবর্তী চর ও এলাকাসমূহে ঝড়ো বাতাসে ঘর বাড়ি সহ ব্যাপক গাছপালা বিদস্ত্য হয়েছে। এসকল দুর্গম এলাকার মানুষকে মাইকিং করে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে আসতে বলা হচ্ছে। লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলায় থেকে ভারী বর্ষণ ও দমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জেলার উপকূলের বাসিন্দারা। বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি চর কুকরী-মুকরী ও ঢালচরে ঘূর্ণিঝর কোমেনের প্রভাবে আকস্মিক জোয়ারে নির্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি ঝড়োবাতাসে লালমোহনে লর্ডহার্ডিঞ্জ ১০ টি, ফরাজগঞ্জ ৫ টি, মনপুরায় ২৫ টি, চরফ্যাশনে ১০টি সহ অন্তত্য অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্থ হয়েছে । উপড়ে গেছে অসংখ্য গাছপালা। এসময় আহত হয়েছেন মনপুরার মামুন, ইসমাইল সহ অন্তত্য ২০ জন।
স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি ও প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন। এদিকে বাতাসের গতি বৃদ্ধি হওয়ায় নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে এসেছে শত শত মাছধরা নৌকা ও ট্রলার। ঘুর্ণিঝর মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ও স্বেচ্ছাসেবী সংঘঠন গুলোর কর্মীরা। ভোলা সহ এর সকল চর সমূহকে ৭ নং বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে ভোলার চরফ্যাশন ও মনপুরায় উপজেলার নদীতে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে বুধবার বিকেলে লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের চরকচুয়াখালী এলাকায় ঝড়ো বাতাসে গাছের চাপায় মঞ্জুরা (৫৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছেন। নিহতের স্বামীর নাম আব্দুস সোবাহান। স্থানীয়রা জানায়, বুধবার দুপুরে মঞ্জুরা পুকুরে নামাযের জন্য ওযু করতে যায়। এসময় একটি গাছ ভেঙে তার গায়ের ওপর পড়লে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে বুধবার রাত ১০টা থেকে এভারী বর্ষণ ও ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাচ্ছে ভোলার উপর দিয়ে। এ ঝড়ো বাতাসে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উপকূলের লক্ষ লক্ষ মানুষ। এছাড়া জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কায় অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে শুরু করেছে।ঘূর্নিঝড় কোমেন মোকাবেলায় মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সতর্কতাবস্থায় রাখা হয়েছে বন্দরে অবস্থানরত দেশী-বিদেশী সকল বাণিজ্যিক জাহাজ। এছাড়া সাগর-নদী পথে চলাচলকৃত কার্গো, কোস্টার ও ট্যাংকারসহ সকল ধরণের নৌযান নিরাপদে অবস্থান নিয়েছে। বুধবার রাতে ৪ নং হুশিয়ারী সংকেত জারির পর থেকে পৌর এলাকাসহ ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মাইকিং করা হলেও ৫ নং বিপদ সংকেতের পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কোথাও কোন মাইকিং করা হচ্ছে না। এবং কোথাও কোন সিগন্যাল পতাকা টানাতে দেখা যায়নি। এছাড়া ছুটি ঘোষণা না করে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে।
চট্টগ্রাম: উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘণীভূত হয়ে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় কোমেন ক্রমেই দুর্বল হয়ে পশ্চিম-দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ফলে পূর্বের সতর্কবার্তা অনুযায়ী এটি চট্টগ্রাম ও তৎসংলগ্ন উপকূলে আঘাত হানার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে। ঘূর্ণিঝড়টি নোয়াখালী হয়ে বরিশাল-ভোলার দিকে রাত ৯টার পর অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসে দায়িত্বরত কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন।ঘূর্ণিঝড়টি এখনো চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৬৬ কিলোমিটার দূরে স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। যেটি দুপর আড়াইটা নাগাদ ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করেছির। সন্ধ্যা ৭টার পর এটির গতিপথ স্পষ্ট করে বলা যাবে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এরপরও পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কোমেন এর প্রভাবে চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।এদিকে ঘূর্ণিঝড় কোমেন’ মোকাবেলায় সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। বৃহস্পতিবার নগরী ও জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের উপকূলীয় উপজেলা আনোয়ারা, বাঁশখালী, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই ও স্বন্দ্বীপ উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে। বুধবার মধ্যরাত থেকেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ম্যানেজার উইং কমান্ডার নুর ই আলম চৌধুরী বলেন, সাত নম্বর সর্তক সংকেত দেখা দিলেও কাল রাত ১১টা থেকে বিমান বন্দরে অবস্থান করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। তবে এখনো বিমান বন্দরের অপারেশন স্বাভাবিক রয়েছে।’
সাতক্ষীরা: বঙ্গোপসাগরে গভীর নি¤œচাপ সৃষ্টি হওয়ায় ও ঘুর্নিঝড় কোমেনের প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি মূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে সাতক্ষীরার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক লস্কার তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন, সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এ এফ এম এহতেশামুল হক, জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আব্দুস সালাম খান, জেলা রেডক্রিসেন্ট সেক্রেটারী নুরুল হকসহ সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ।সাতক্ষীরার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক লস্কার তাজুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার উপকুলীয় এলাকায় সতর্কতামুলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এসব এলাকায় মাইকিং করে জনসাধারনকে সতর্ক করা হচ্ছে। পাশাপাশি লোকজনদের স্ইাক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।জেলার ৭৪টি ঘুর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলি প্রস্তুত করা হয়েছে। মৎস্যজীবিদের নিরাপদ স্থানে থাকতে বলা হয়েছে।
বরগুনা প্রতিনিধিঘূর্ণিঝড় কোমেন মোকাবেলায় জররুর সভাসহ ব্যাপক প্রস্ততি নিয়েছে বরগুনা জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বরগুনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এক জরুরি সভার মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবেলায় সব বিভাগকে প্রস্তত রাখা হয়। বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় কোমেন আঘাতের আশঙ্কায় বরগুনায় ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেওয়ায় এ প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে বুধবার রাত থেকে বরগুনায় থেমে থেমে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বইছে। অভ্যন্তরীণ নদ-নদীগুলোর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩/৪ ফুট পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সাগর প্রচন্ড উত্তাল থাকায় জেলার প্রায় দেড় হাজার মাছধরা ট্রলার সুন্দরবনসহ বরগুনার বিভিন্ন খালে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে। জেলা ট্রলার মালিক সমিতির পক্ষ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের সাগরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।জেলা তথ্য অফিসের মাধ্যমে শহরে মাইকিং করে জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। জেলার ছয়টি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের সভা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ঝুঁকিপূর্ণ নলটোনা, বালিয়াতলী, নলী, ডালভাঙ্গা, পদ্মা, রুহিতা, মাঝেরচর এলাকা থেকে বুধবার রাতেই কয়েক হাজার মানুষ আম্রয়কেন্দ্রে এলেও সকালে অনেকে আবার বাড়ি-ঘরে ফিরে গেছেন।বরগুনায় ছোট, মাঝারি ও বড় সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে অভ্যন্তরীণ নৌ কর্তৃপক্ষ। নদীবন্দর গুলোতে বিপদ সংকেত থাকায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ কর্তৃপক্ষ বরগুনা থেকে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বলে বরগুনা নৌ পরিবহন কর্মকর্তা মামুন-অর- রশিদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিকে বৈরি আবহাওয়ার কারণে দু’টি রুটের ফেরি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর (সওজ)। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।ফেনী : ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’। উপকূলীয় জেলা ফেনীতে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে সতর্ক অবস্থা জারি করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও উপকূলীয় অঞ্চলে মাছ ধরার নৌকাসহ যাবতীয় বাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত রয়েছে। দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে ১ হাজার ৪ শ’ রেড ক্রিসেন্টকর্মী।জানাগেছে, দূর্যোগ মোকাবেলায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ফেনী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দূর্যোগ ও ত্রাণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দূর্গত এলাকায় খাবার বিতরণ ও মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।
এদিকে সোনাগাজীর সমুদ্র উপকূলে দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারনে উপজেলার চরচান্দিয়া, চরদরবেশ ও সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের ৩ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটে ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন।অপরদিকে দূর্যোগ মোকাবেলায় সোনাগাজী উপকুলীয় অঞ্চলে ১ হাজার ৪ শ’ রেড ক্রিসেন্টকর্মীসহ কয়েক হাজার উদ্ধারকর্মী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ফেনীতে বিপদ সংকেত ঘোষণার পর থেকে তারা মাইকিং, প্রচারপত্র ও উপকূলীয় অঞ্চলের লোকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে উপজেলা প্রশাসনকে সহযোগিতা করছে রেড ক্রিসেন্টসহ নানা স্বেচ্চাসেবী সংগঠন।ফেনী রেড ক্রিসেন্টের সহকারী পরিচালক আবদুল করিম জানান, দূর্গত এলাকায় রেড ক্রিসেন্টের ১ হাজার ৪শ কর্মী কাজ করেছে।সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফর নাহার জানান, ইতিমধ্যে দূর্যোগ মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন যাবতীয় প্রস্তুুতি গ্রহণ করা হয়েছে।হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, মঙ্গলবার রাত থেকে উপজেলার অধিকঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে অন্তত ২৫হাজার লোকজনকে নিরাপদে ৩০টি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়েছে। সাগরে রেডএলার্ট জারি করে সকল মাছ ধরার নৌকাসহ জেলেদের নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে।নোয়াখালী জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) অনুপম বড়–য়া জানান, জেলার ৪টি উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের জনগনের নিরাপত্তার জন্য সবধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও দুইজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দুটি উপজেলা করে ৪টি উপজেলায় দায়িত্ব পালন করবেন।
বৈরী আবহাওয়ায় শিমুলিয়া-কাওরাকান্দি রুটে নৌ চলাচলে বন্ধ- ফেরিতে যাত্রী পারাপার মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’-এর সতর্কতাস্বরূপ মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া-কাওরাকান্দি নৌরুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ, সি-বোট, ইঞ্জিনচালিত নৌযান সহ সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে অবস্থার পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্তএ নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে বলে জানিয়েছে শিমুলিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষ। শিমুলিয়া নদীবন্দরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর তোফাজ্জল হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় কোমেনের আগাম সতর্কতা হিসেবে নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা থেকে এমনটাই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় যাত্রীবাহী লঞ্চ, সি-বোট, ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলো ঘাট এলাকায় অথবা মূল নদী থেকে শাখা নদীতে গিয়ে বেঁধে রাখতে বলা হয়েছে। শিমুলিয়া ঘাটের বিআইডব্লিউটিসির ডিজিএম এস এম আশিকুজ্জামান জানান, নাব্যতা সঙ্কট ও শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটের লৌহজং-হাজরা চ্যানেলে ডুবোচর জেগে ওঠা এবং পানি কম হওয়ায় রো রো ফেরি চলাচল করতে পারছে না।এ জন্য গত মঙ্গলবার দুপুর থেকে তিনটি রো রো ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল ।তবে আজ বৃহ¯পতি বার সকালে সাড়ে ৯টা থেকে বেশ কয়েকটি ফেরি শিমুলিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে গেছে। পারাপারের জন্য এখনো দুই শতাধিক ছোট-বড় যানবাহন অপেক্ষায় রয়েছে। এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত বিকেল ৫টায়,এখনো আবহাওয়া খারাপ হয়নি, অবস্থা প্রতিকূল হলে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে। এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি সামান্য উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’-এ পরিণত হয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার দুপুরের পর বরিশাল-চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি বয়ে যেতে পারে। এ সময় উপকূলীয় এলাকায় তিন থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।