ag29

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৯ জুলাই: সাকা চৌধুরীর ফাঁসির রায় প্রত্যাশিত ছিলো বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম।বুধবার রায় ঘোষণার পরে প্রতিক্রিয়ায় দিতে গিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন।বুধবারের রায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখেছেন সু্প্িরম কোর্টের আপিল বিভাগ।প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ বুধবার সাকা চৌধুরীর যুদ্ধাপরাধ মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করে।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটিই আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম।এটিই আমরা আশা করেছিলাম। কারণ যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার ব্যাপারে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর যে ভূমিকা ছিল, সেটি ভয়াবহ। তার যদি আজকে এই সাজা না হত, প্রচণ্ড হতাশায় নিমজ্জিত হতাম।চট্টগ্রামের রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, সুলতানপুর ওঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু বসতিতে গণহত্যা এবং হাটহাজারীর এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তারছেলেকে অপহরণ করে খুনের চার অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরীর সর্বোচ্চ সাজার আদেশ আসে।

রায়ের পর নিজের কার‌্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম।তিনি বলেন, নয়টি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দণ্ড দিয়েছিল। এর মধ্যে চারটি অভিযোগে তার মৃত্যুদণ্ড হয়। বাকি পাঁচটি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেওয়া হয়েছিল।আপিল বিভাগ শুধু একটি অভিযোগে, যেটিতে ২০ বছর কারাদণ্ড হয়েছিল, সেটিতে অব্যাহতি প্রদান করেছে। বাকিগুলোতে ট্রাইব্যুনাল যে দণ্ড দিয়েছিল তা বহাল রাখা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সুলতান মাহামুদ সিমন রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সমস্ত প্রক্রিয়া পালন করে এই বিচার সম্পন্ন হয়েছে। সাকা চৌধুরী তার বক্তব্যের সমর্থনে কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি।মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের (ফকা) চৌধুরীর ছেলে সাকা চৌধুরী হলেন চতুর্থ ব্যক্তি, আপিল আদালতে যার সর্বোচ্চ সাজার রায় এল।

নিয়ম অনুযায়ী, পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবে আসামিপক্ষ।রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি হয়ে গেলে এবং তাতে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে আসামিকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ দেওয়া হবে।তিনি স্বজনদের সঙ্গে দেখাও করতে পারবেন।রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়টি ফয়সালা হয়ে গেলে সরকার কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে।

মাহবুবে আলম বলেন, তার (সাকা চৌধুরী) বিরুদ্ধে মোট ২৩টি অভিযোগ ছিলো। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনাল ৯টি অভিযোগে তাকে মুত্যদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছিলেন। আর সুপ্রিম কোর্ট শুধুমাত্র একটি অভিযোগ থেকে খালাস দিয়ে বাকি ৮টি অভিযোগে তার দণ্ড বহাল রেখেছেন।সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, তিনি (সাকা চৌধুরী) দেশে ছিলেন না- এমন বক্তব্য গ্রহণ করেননি সর্বোচ্চ আদালত।

ট্রাইব্যুনাল সাকা চৌধুরীকে যে চার হত্যা-গণহত্যার দায়ে সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছিলেন সেগুলোর সাজাই বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। ফলে চূড়ান্ত রায়েও অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা (৩ নম্বর অভিযোগ), রাউজানের সুলতানপুর গ্রামে তিনজনকে গণহত্যা (৫ নম্বর অভিযোগ),রাউজানের ঊনসত্তরপাড়ায় ৫০-৫৫ জনকে গণহত্যা (৬ নম্বর অভিযোগ) এবং চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহম্মদ ও তার ছেলে শেখ আলমগীরকে হত্যার(৮ নম্বর অভিযোগ) দায়ে ফাঁসির আদেশ হয়েছে তার।অন্যদিকে ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত নয়টি অভিযোগের মধ্যে অন্য তিনটি অভিযোগের প্রত্যেকটিতে ২০ বছর এবং আরো দু’টি অভিযোগের প্রতিটিতে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল তাকে।

সব মিলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি মোট ৭০ বছরের কারাদণ্ড পান তিনি। এর মধ্যে শুধু রাউজানের সতীশ চন্দ্র পালিতকে হত্যার (৭ নম্বর অভিযোগ) দায় থেকে আপিল বিভাগের রায়ে খালাস পেয়েছেন তিনি, যে অভিযোগে তাকে ২০ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এর ফলে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি মোট ৫০ বছরের কারাদণ্ড বহাল থাকলো।বহাল থাকা অন্য চার অভিযোগের দণ্ডাদেশের মধ্যে রাউজানের গহিরা গ্রামের হিন্দুপাড়ায় গণহত্যা(২ নম্বর অভিযোগ) ও জগৎমল্লপাড়ায় ৩২ জনকে গণহত্যার(৪ নম্বর অভিযোগ) দায়ে ২০ বছর করে ৪০ বছর এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ, সিরাজ ও ওয়াহেদ ওরফে ঝুনু পাগলাকে অপহরণ করে নির্যাতন(১৭ নম্বর অভিযোগ) এবং চান্দগাঁওয়ের সালেহউদ্দিনকে অপহরণ করে সাকা চৌধুরীর পারিবারিক বাসভবন গুডসহিলে নিয়ে নির্যাতনের (১৮ নম্বর অভিযোগ) দায়ে ৫ বছর করে আরো ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে সাকাকে।